মাঠে ছাউনির নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৩২ পিএম

বাহুবলের বসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণ করছে খোলা ছাউনীতে। বর্ষায় তাদের বসতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অথবা পার্শ্ববর্তী মক্তঘরে। ৪ বছর আগে বিদ্যালয়ের মূল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও নতুন ভবন কবে নির্মান হবে- তা কেউ বলতে পারছে না। ফলে দিন দিন বিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাধ্য হয়ে গ্রামের শিশুরা কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে।

বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের ৮৬নং বসিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৮ সালে ওই গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হোসেন এর পিতা মরহুম শামছুল হোসেনের দানকৃত ৩৩ শতক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দিকে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় টিনের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে একচালা একটি ঘর নির্মাণ করে ৬ বছর বিদ্যালয়টি পরিচালনা করা হয়। ১৯৯৪ সালে স্কুলটি রেজিস্ট্রেশন লাভ করলে এলজিডির তত্ত্বাবধানে সরকার ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩টি ক্লাসরুম ও একটি অফিস কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মার্ণ করে।

নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দায়সারা ভাবে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ফলে কিছু যেতে না যেতেই ভবনের একাংশে ফাটল দেখা দেয়। এরপর দ্রুতই ভবনটির সিমেন্ট-বালি কষে পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জরাজীর্ণ ভবনে শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাঠগ্রহণ করতে বাধ্য হয়। পরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে ২০১২ সালে উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর থেকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দেয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চরম দূর্ভোগ।

আর এই দূর্ভোগের মধ্য দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে সমাপনী পরীক্ষায় ধারাবাহিক ভাল ফল অর্জন করায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণের পর টানা তিন বছর বর্ষা মৌসুমে পাশ্ববর্তী মক্তব ঘরে আর শুকনো মৌসুমে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে চলে পাঠদান কার্যক্রম।

২০১৫ সালে উপজেলা বার্ষিক উন্নয়ন খাত থেকে এক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩০ ফুট লম্বা টিনসেডের একটি খোল ছাউনী তৈরি করে দেয়া হয়। কিন্তু ওই ছাউনির বেড়া না থাকায় বর্ষা মৌসুমে সেখানে পাঠদানের উপযোগিতা থাকে না।তাই বর্ষা এলে শুরু হয় দৌঁড়-ঝাপ, টানা-হেছড়া। পার্শ্ববর্তী মক্তব ঘর অথবা পরিত্যাক্ত ভবনেই শিশুদের নিয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিহাব উদ্দীন জানান, প্রতিদিন বিদ্যালয়ে এসে আমাদের বেঞ্চ ও ডেক্স ভবন থেকে বের করে এনে ছাউনীতে ক্লাস করতে হয়। বিকেলে আবার ওইগুলো ভবনের ভিতরে রেখে যেতে হয়। এতে প্রায়ই আমাদের দূর্ঘটনার স্বীকার হতে হয়,পরিশ্রমও করতে হয় অনেকটা বাধ্য হয়ে।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই জানান, এই স্কুলে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২০৫ জন ও শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন ৫ জন। পরিত্যক্ত ভবনেই দীর্ঘদিন যাবত ঝুঁকি নিয়ে অফিস কক্ষ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এই প্রতিকূল পরিবেশে পাঠদান করেও প্রতি বছরের ন্যায় গত বছরও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপণী পরিক্ষায় দুইটি বৃত্তিসহ শতভাগ পাশের মাধ্যমে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছি। ভবনের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বারবার কর্তৃপক্ষের বরাবরে আবেদন করেও আজ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন আশ্বাস পাচ্ছি না।

আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে ভবন নির্মাণ না হলে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হবে। তিনি আরো জানান, গতবছরের শেষ দিকে হবিগঞ্জ-সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এখলাছুর রহমান জানান, বর্ষাকালে ওই পরিত্যক্ত ভবনেই পাঠদান চালাতে হয়। ফলে অনেক অভিভাকরা দূর্ঘটনার ভয়ে সন্তানদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে বাড়িতে প্রাইভেট শিক্ষক রেখে পড়ান। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে জরাজীর্ণ পরিবেশে শিশুদের পাঠদানের কারণে অনেক বিত্তবান ও মধ্যবিত্ত অভিভাবক সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করাচ্ছেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা  বলেন, উপজেলায় এ রকম ২৬টি বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। অধিদপ্তর বিষয়টি বিবেচনায় না আনলে আমাদের কিছু করার নেই। খোলা পরিবেশে আর কতদিন শিশুরা পাঠগ্রহণ করবে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত বছর দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে একটি টিনশেড নির্মাণ করে দিয়েছি, তো আমরা আর কি করব।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: