৪ হাজার কোটি টাকার মালিক ডিসি অফিসের সেই পিওন!

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:১৫ পিএম

এনামুল হক: দীর্ঘদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর চার হাজার কোটি টাকার মালিক বাগেরহাট ডিসি অফিসের সাবেক পিয়ন (এমএলএসএস) আব্দুল মান্নানকে তার অফিসে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনি বাগেরহাটের ব্যবসায়িক অফিসে ছিলেন বলে জানা গেছে।

চার বছরে আমানত দ্বিগুণ করে দেওয়ার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে। এই টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। তবে তার দুর্নীতি আর প্রতারণার তদন্ত শুরু হলে পরিবারসহ গা ঢাকা দেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত প্রতিবেদনে আবদুল মান্নানের পিয়ন থেকে কোটিপতি হওয়ার তথ্য উঠে আসে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট নামে কোম্পানি খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে আমানত সংগ্রহ করেন আবদুল মান্নান। তার সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানটি শুধু উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়েই নয়, মানুষকে আকৃষ্ট করতে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকিংয়ের মতো লভ্যাংশ দেওয়ারও প্রস্তাব করে।

গ্রাহকরা জানান, চার বছরে অর্থ দ্বিগুণ হবে বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন আবদুল মান্নান। তার মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভুলে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিউ বসুন্ধরায় রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছেন।

এছাড়া আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ মিলেছে। তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ দুইটি প্রতিষ্ঠানসহ মান্নানের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের উদ্যোগে শিগগিরই এ তদন্ত শুরু হবে।

এদিকে মান্নানের দুটি প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তের পর দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার সাবেক উমেদার (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান তালুকদার দীর্ঘ ২৬ বছর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পরেই বিত্তবৈভবে ফুলেফেঁপে ওঠেন তিনি। বর্তমানে তিনি চার হাজার কোটি টাকার মালিক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের খুলনা অফিস পরিচালিত তদন্ত বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ সৃষ্টি করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আবদুল মান্নান তালুকদার মানুষের কাছ থেকে অবৈধভাবে ২৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত দল। এর মধ্যে আবদুল মান্নান নিজের নামে শুধু জমিই কিনেছেন ১৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার। এছাড়া ৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তার মালিকানাধীন ছয়টি প্রতিষ্ঠানে। প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে এই পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে খুলনা, নড়াইল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ লোকদের কাছ থেকে এই আমানত সংগ্রহ করা হয়।

মান্নানের মালিকানাধীন নিউ বসুন্ধরা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিও একই কায়দায় গ্রাহকদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত দল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা শাখার নির্বাহী পরিচালক মো. ইস্কান্দার মিয়া ইত্তেফাককে বলেন, আবদুল মান্নান তালুকদারের প্রতিষ্ঠানটি বৈধ কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়। অথচ উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছেন। সেই টাকা দিয়ে নিজের নামে সম্পত্তি করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত করে ৩-৪মাস আগে ঢাকায় রিপোর্ট দিয়েছি। এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই বলছে, সে নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: