শারমিনকে ঘরে তোলা হলো না ডা. ফাহাদের!
ভালোবাসার সম্পর্কটা ছিল দীর্ঘদিনের। ডাক্তারি পড়াশোনার ফাঁকে তাদের প্রেমের খবর সবারই জানা। সুখের সংসার বাঁধার স্বপ্ন ছিল তারে। বিয়ের আয়োজন চলছিল বেশ ঘটা করেই। মেয়ের বিয়ের জন্য প্রবাসী বাবা দেশে এসেছেন।
দুই পরিবারেই উৎসবের আমেজ। তবে একটি দুর্ঘটনা তারে সেই উৎসব থামিয়ে দিয়েছে। না ফেরার দেশে চলে গেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৫৩ তম ব্যাচের ছাত্র ফাহাদ। তিনি শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন।
বছরখানেক আগে পারিবারিকভাবে বিয়ের আকদ হয়েছিল। বর-কনে দু’জনই চিকিৎসক। দু’জনই চট্টগ্রাম মেডিকেলের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর মধ্যে কনে ৩৯তম বিসিএসে ভাইভার জন্য মনোনীতও হয়েছেন। নতুন বছরে পরিকল্পনা হয়েছিল বিয়ের বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। সব এগিয়ে চলছিল ঠিকঠাক মতোই। কিন্তু সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দিল একটি দুর্ঘটনা।
রোহিঙ্গাদের সেবা দিয়ে ফেরার পথে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (৩৫)। তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায়। তিনি নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় থাকতেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, হাটহাজারী পৌরসভার রেলস্টেশন রোডের মরহুম শফিউল্লাহ মাস্টারের ছোট ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. আজাদের বড় মেয়ে ডা. জান্নাতুন নাঈম শারমিনের সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকার মঞ্জুরুল হকের পুত্র ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ (৩৫)-এর আকদ সম্পন্ন হয়েছিল।
মাসখানেক মধ্যে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বধূ ডা. শারমিনকে নিজের বাড়িতে তুলে নেওয়ার কথা ছিল ডা. ফাহাদের পরিবারের। সেই উপলক্ষে ডা. শারমিনের প্রবাসী পিতা আজাদ সম্প্রতি দেশেও এসেছেন।
তবে ডা. ফাহাদের একমাত্র ভগ্নিপতি (সেনাবাহিনী মেজর) জাতিসংঘের মিশনে কর্মরত রয়েছেন। শুধু তার দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় বিয়ের তারিখ নির্ধারিত হয়নি।
কিন্তু তাই বলে বিয়ের প্রস্তুতি থেমে থাকেনি। উভয়ের পরিবারে চলছিল বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান আয়োজন। পছন্দের মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাণের প্রিয় মানুষটাকে ঘরে তুলে নেবে। এই নিয়ে কতই না স্বপ্লের জাল বুনে ছিল ফাহাদ।
মাত্র একটি বছরের জন্য কাছে পাওয়া মনের মানুষটিকে এভাবে চিরদিনের জন্য যে হারাতে হবে তা কখনও কল্পনা করেনি চিকিৎসক শারমিন।
মুহূর্তের মধ্যেই যেন তার কল্পিত সেই স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামীর অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ডা. শারমিনের রঙিন স্বপ্নের যবনিকা ঘটালো।
ঘটনার দিন ডা. ফাহাদ কক্সবাজার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তার স্ত্রী ডা. শারমিনের ফুফাত ভাই ডা. রিসাতের বিয়েতে যোগ দিতে চট্টগ্রামে ফিরছিলেন।
নিহত ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত চিকিৎসক ছিলেন। তার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলায় হলেও তিনি তার পরিবারের সঙ্গে নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় বাস করতেন। কোরআন হাফেজ ডা. ফাহাদ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫৩তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এছাড়াও তিনি লাইটার ইয়ূথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বপালনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় তার আকস্মিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার স্বজনরা। পিতা-মাতা, ভাই, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
ডা. ফাহাদ সম্পর্কে তার বন্ধু চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডা. মোহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ও অনেক মিশুক ছিল। মানুষের সঙ্গে সে সহজেই মিশতে পারতো। মিষ্টি হাসি দিয়ে সবাইকে আপন করে নিত অনায়াসে। মানুষের মন জয় করার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তাঁর।’
বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে ওই চিকিৎসকের মোটরসাইকেলে হানিফ পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কা দেয়। সাতকানিয়ার হাসমতের দোকান এলাকায় এ দুঘর্টনা ঘটে। বাসটি আটক করা হলেও চালক পালিয়ে যায়।
‘কুরআনের হাফেজ থেকে বিসিএস ক্যাডার হবে সে আশা পূরণ না করেই এইভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলি। কোথায় আমার জানাজার ইমামতি করবি তুই, আর আজ তোর জানাজা পড়তে হলো আমাকে। এমন কথা তো ছিল নারে বাপ।’ এসব কথা বলে কান্নাকাটি করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হাফেজ ডা. জোবাইদুল হক ফাহাদ এর পিতা প্রকৌশলী আলহাজ্ব মঞ্জুরুল হক।
বিডি২৪লাইভ/আরআই
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: