জোর করে সঙ্গম, গোপনে বিয়ে: অতঃপর...

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৭ পিএম

আমি শ্রাবণ। আমরা এক ভাই, এক বোন। আমার বাবা সরকারি চাকরি করেন। আর আমি লেখাপড়া করছি।

আমি একদিন ব্যাংকে গিয়েছিলাম। যে কোনো একটা কাজে ওইদিন ব্যাংকে গিয়েছিলাম। সেইদিন ইমদাদ (প্রেমিক) হয়তো আমাকে দেখেছে বা আমার মোবাইল নাম্বার কোনোভাবে জোগাড় করেছে। তার দুই-একদিন পরে আমাকে ফোন করছে। অপরিচিত নাম্বার দেখে আমি আর অতোটা কথা বললাম না। ওইদিনই সে আবার সন্ধ্যার দিকে আমাকে ফোন দিয়েছে। তখন আমি বললাম আবার কেন ফোন দিছেন (তখন বলে আমি ইমদাদ বলছি আর মিরপুর থাকি)। কথাবার্তা বলার এক পর্যায় সে জানায় তার বাসা রাজধানী ঢাকার মিরপুরে।

তখন আমি ভাবলাম ওর বাসা যখন মিরপুরে আমাদের বাসার আশেপাশেই তো। তখন হালকা-পাতলা সে মাঝে মাঝে ফোন দিত। মাঝে মধ্যে একটু কথাবার্তা বলত। মাস খানেক এমন হালকা-পাতলা কথাবার্তা হলো। তারপর একটা পর্যায় গিয়ে সে একটু ঘনঘন ফোন দিতে শুরু করে। এরপর তার সাথে আমার ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়।

একদিন তার সঙ্গে দেখা হয়, তখন সে আমাকে প্রোপোজ করে।

তখন আমি বললাম যে না আমি তো এভাবে রিলেশন করতে পারব না। যেহেতু আমার পরিবার একটু অন্য রকম। তো আমি আমার পরিবার ছাড়া অন্য কিছু করতে পারবো না। এভাবে দুই-তিন মাস চলে গেল তখন সে (ইমদাদ) একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গেল। আমাদের প্রথম দেখার মাস খানে পর সেকেন্ড দেখা হয়।

ইমদাদ তখন এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি করল যে, সে আমাকে ছাড়া বাঁচবে না, যেভাবেই হোক আমার সঙ্গে রিলেশন করতে চায়। এ সময় ও বলে কাল থেকে আমাকে আর দেখতে পাবে না। এই বলে চলে যায় ইমদাদ।

ওইদিন অনেক রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে আমি অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছি। আমার যদি কিছু হয় এর জন্য দায়ভার তোমার। ওই সময় আমারও একটু দুর্বলতা কাজ করল যে একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসে ৫-৬ মাস হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করে নি। এরপর থেকে দেখা যায়, আমরা সারাদিন একসঙ্গে ঘোরা ফেরা করি সময় কাটাই, খাওয়া-দাওয়া করি। এ রকম খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে আমাদের মাঝে।

ওই সময়টাই আমার বিয়ের জন্য আমাদের বাসায় প্রস্তাব আসে। তখন আমি ইমদাদকে বলি তুমিও আমার ফ্যামিলিতে প্রপোজাল পাঠাও যদি রাজি হয়।

যে ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। ওই ছেলের পক্ষ বলতেছিল দেশের বাইরে যাওয়ার আগে তাহলে আংটিটা পড়ায়ে রেখে যাই। মানে এক বছর পড়ে আসবে এতদিন অপেক্ষা করা সম্ভব না। দেশে ফিরে আসলে না হয় বিয়ে দিয়ে উঠিয়ে দিয়েন।

এরপর আমি ওকে ইমিডিয়েট দেখা করতে বললাম। তখন রোজার মাস ছিল। রোজার মধ্যে আমি একদিন ওদের এলাকায় শপিং করতে গিয়েছিলাম। শপিং করতে করতে ইফতারির সময় হয়ে যায়। তখন ইমদাদ বলল আমার বাসা কাছে চলো আমার বাসায় যাই। আমি বললাম না। ও বলল আমার বাসায় কোনো সমস্যা নাই। আমার বন্ধু আছে, বন্ধু স্ত্রী আছে, শ্যালিকা আছে। এরপর সবার সাথে ফোনে কথা বলায় দেয় ইমদাদ।

তারপর আমি বললাম যে, তুমি একটা কাজ করো কসম কাটো যে আমি তোমার বাসায় গেলে তুমি ভুলেও আমার কোনো ক্ষতি করবা না বা আমার গা পর্যন্ত স্পর্শ করবা না। তুমি আমার শরীর ছুঁয়ে কসম কাটো। তখন সে মাথা ছুঁয়ে কসম কাটছে যে না আমি এ কাজ করবো না। আর আমার বাসায় মানুষ আছে আর আমি তো রোজা। তাহলে আমি এসব কিভাবে করবো। আমারও রোজা রাখার ফলে শরীরটাও অনেক খারাপ লাগতেছিল। এরপর ওর বাসায় গেলাম।তারপর খাওয়া-দাওয়া করলাম। ভাজা পোড়া খাওয়াতে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিল। একপর্যায় বমি করে অস্থির হয়ে গেছি। শরীরটা খারাপ লাগতেছিল। তখন বাসার সবাই বলে ইমদাদ এর রুমে গিয়ে শুয়ে একটু বিশ্রাম নেও।

এরপর ওর ঘরে গিয়ে ঘুমায়ে গেছি কিনা মনে নেই। ২০ মিনিট পরে যখন ভালো লাগতেছে তখন উঠে দেখি ইমদাদ আমার মাথার পাশে ওই বেডেই বসে আছে। তখন আমি বললাম এখুনি আমি বাসায় চলে যাব। ও বলে বাসায় কেউ নেই ওদের কাছে চাবি ওরা আসুক এরপর যাও। এরপর ইমদাদ শারীরিক সম্পর্ক করার আমার সাথে জোর করে। আমি তখন ওকে অনেক বাধা দিয়েছি। ওর পায়ে পর্যন্ত পরছি এবং অনেক কান্নাকাটি করছি যে আমার এত বড় ক্ষতি করো না। সে তারপরেও কোনো কথায় শোনে না। ঘরে একা পেয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে।

তারপর ওইদিন অনেক রাতে আমাকে বাসায় দিয়ে যায়। পরে ওকে ফোনে বলি তুমি আমাকে তোমার বাসায় ডেকে নিয়ে এত বড় ক্ষতি করছো আমি আর তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবো না। সে বলে আমি ভুল করছি তুমি আমাকে শাস্তি দেও। আমার সাথে দেখা করো আমরা আব্দুল্লাহপুর যেখানে দেখা করি সেখানে। তখন আমার কাছে অনেক করে মাপ চায়ও। বাসায় একা পেয়ে ওই কাজটা করা ঠিক হয়নি সেটাও স্বীকার করে নেয় সে।

পরে ও বলে চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। আমি বলি আমার পরিবার ছাড়া আমি বিয়ে করতে পারব না। তখন ও বলে তাহলে আমরা গোপনে বিয়ে করে ফেলি তোমার বাসার কেও জানবে না। বিয়ের পরে কেও জানবে না আমি তোমকে বিয়ে করছি। আমি তোমার বাসার সবাইকে রাজি করিয়ে তারপর তোমাকে উঠিয়ে আনব।

তখন আমিও ভাবি যেহেতু ওর সাথে এই ধরনের একটা সম্পর্ক হয়ে গেছে। কিভাবে আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করব। তো আমরা ৩ লাখ টাকা কাবিন ধার্য করে এক হুজুরের কাছে গিয়ে বিয়ে করি। ওইদিন রাতে আমরা স্বামী-স্ত্রীর মতোই একসঙ্গে ছিলাম।

আমি আমার ফ্যামিলিতে বলছি আমার এক ফ্রেন্ডের গাঁয়ে হলুদ আছে। তাই বাসা ফেরা হবে না। পরের দিন আমি বাসায় চলে আসি। তারপর থেকে আমাদের মধ্যে অনেক সম্পর্ক ভালো হয়। আমি ওর বাসায় যেতাম মাঝে মাঝেই।

এমন সময় বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে। ওই মুহূর্তে বাসায় অনেক কান্নাকাটি করি। কারণ আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। আমার স্বামীকে রেখে আবার অন্য জায়গা বিয়ে করব এটা তো হতে পারে না। অবশ্য আমার খালা মনি আমার ওই বিষয়টা জানত। তখন খালা মনিকে বললাম আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। পড়াশুনা করি এরপর ভার্সিটিতে ভর্তি হই। আর তোমরা যদি বিয়ে দেও তাহলে কিন্তু আমি আত্মহত্যা করব। একটা পর্যায় আমার কাজিনদেরকে বিষয়টা বললাম। ওই ছেলেকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।

সার্বিক বিষয় চিন্তা ভাবনা করে, আমার পরিবার বুঝলো যদি আবার কোনো ক্ষতি হয়। তখন ওই ছেলেকে বলে তুমি মিশন থেকে ঘুরে আস তারপর দেখা যাবে। মেয়ের পরীক্ষা শেষে সব করা যাবে। পরে ওই ছেলে বাইরে চলে গেল। এরপর থেকে বিয়ে নিয়ে আমার পরিবার অতটা চাপ দেয়নি। আমিও তখন মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছি। সেও বলছে তোমার বাবা-মা যা বলে তাই কর। ভালো করে পড় তাহলে আর বিয়ের জন্য চাপ দিবে না।

এরমধ্যে আমার একটা সমস্যা হয়ে যায়। আমার পেটে বাচ্চা চলে আসে। পরবর্তীতে আমার বাসার কাজিনরা যাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো তারা একটু জানছে, হালকাপাতলা জানা-জানি হয়। যে আমার প্রেগনেন্সি সমস্যা। ইমদাদের বাসায় মহিলা যারা ছিল তাদেরকে বিষয়টা জানাই আমি।

বিষয়টা জানার পর ইমদাদ আমাকে বলে যে বাচ্চা রাখা যাবেনা। ও বলে যেটা হইছে ভালো হইছে। আচ্ছা কিছু করার নেই। তখন ও আমাদের বাসায় বিয়ে প্রস্তাব দিছে। তখন আমার পরিবার ভাবছে মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ছে একটু সময় নিয়ে কাজটা করি।

ওকে তখন আমি বললাম যে আমার যে এই সমস্যা এখন আমি কিভাবে কি করি। কয়দিন পরে ও বলে এই বেবি রাখা যাবে না। সমস্যা আছে। পরে এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। যদিও তখন বেশিদিন হয়নি মাত্র ১৫-২০ দিন। পরে আমি বাসায় চলে আসছি।

তখন আমাকেও শর্ত দেয় হয় আমাকে রাখবা না হয় বেবিকে রাখবা। পরে সে বলে দেখ আমি এতকিছু বুঝি না। তুমি শুরু থেকে যেভাবে বলছো আমি তোমার জন্য সবকিছু করছি। বিয়ে পর্যন্ত করছি। ভবিষ্যতে তুমি যা কিছু বলবা তাই করব। তারপর আমি রাজি হলাম, বললাম আমার একটা শর্ত আছে। ১০-১৫ দিনে মধ্যে তোমার বাসায় উঠিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাসায় গেলাম ও ফার্মেসি থেকে কি মেডিসিন যেন আনছে মানে অ্যাবোশন না করে কেমনে যেন বেবিটাকে নষ্ট করা যায়। ওই ওষুধ খাওয়ার পরে আমার বেবিটা নষ্ট হয়ে যায়। কিছুদিন আমাকে বেশ ভালো খোঁজ খবর নিয়েছে, দেখা শোনা করল।

কিন্তু প্রেগনেন্সি হওয়ার পর থেকে যে কথা কাটাকাটি- ঝগড়া ঝাটি শুরু হলো সেখান থেকেই শুরু। তখন থেকে বিভিন্ন ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করে ও। শুক্র-শনিবার দেখা করব। আসে উল্টাপাল্টা কথা বলে। ওর ব্যস্ততা আমার ভালো লাগেনা।

আমি মানসিকভাবে বেশ ভেঙে পড়ি। প্রথমে ‘ও’ আমার সাথে জোর করে একটা রিলেশন করল। তারপর কাউকে না জানায়ে বিয়ে করলাম। সেটাও তার জন্য গোপন রাখতে হলো। তারপর আবার একটা বেবি আসলো। ওর জন্য বেবিটাকেও অ্যাবোশন করতে হলো। সব কিছু মিলিয়ে আমি পাগলেরর মতো হয়ে গিয়েছিলাম।

এরপর থেকে আমার সাথে দিনরাত একদম যোগাযোগই করে না ইমদাদ। আমি ওর বাসায় ফোন দিলে ওর ভাজতি কথা বলে। আমার নাম্বার ব্লক করে রাখে ইমদাদ। একটু খোলার পর ২-৩ মিনিট কথা বলে আবার বন্ধ করে রাখে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকে।

পরে আমি ভাবলাম তাহলে ওর বাসায় যাই। অনেক দিন তো ওর বাসায় যাই না। কিন্তু গিয়ে দেখি ওরা বাসা ছেড়ে দিয়েছে। পরে সামাজিকভাবে অনেক হেনস্থার শিকার হই আমি।

একে তো সব কিছু হারিয়েছি। এভাবে সব কিছু শেষ করল সে। সব কিছু ভেবে চিন্তে মনে হলো- ও আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমার একটা বিয়ে ঠিক হয়েছে, সেটা ভাঙার জন্য জোর করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করল। সে বাসায় ভুয়া হুজুর এনে বিয়ে করল। তারপর আমার সাথে এতদিন থাকলো। এরপর একটা বেবি আসলো সেটাও সে রাখতে দিল না। না জানিয়ে বাসাটা পর্যন্ত বদল করে ফেলছে। পরে আমি রাস্তায় রাস্তায় ওর বাসা খুঁজে বেড়িয়েছি, কোথাও খুঁজে পাইনি।

ওর টার্গেটটা ছিল আমার সাথে রিলেশন করা। এখন আমি মামলা করেছি ফলে অধিকাংশ মানুষের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেছে।

পরিশেষে আমার বলা আছে- ও চলে গেছে, চলে যাইতো আমি জোর করে ওর সাথে সংসার করতে চাইনি। কিন্তু আমার যেটা অধিকার, আমার অধিকার থেকে কেন ও আমাকে বঞ্চিত করল।

(এই লেখাটি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের ফাঁদ অনুষ্ঠানের অবলম্বনে করা)

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: