আমরা যতই যান্ত্রিক হই বইয়ের চাহিদা শেষ হবে না

প্রকাশিত: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৭:০৮ পিএম

শুরু হলো প্রাণের বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ এর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনটিতে বিকেল ৩টায় শুরু হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

এবারের বইমেলা উদ্বোধনের মাধ্যমে ১৬ বার এ মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এতবার (১৬ বার) কেউ বই মেলার উদ্বোধন করেননি। শুক্রবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবার নিয়ে বইমেলা ৪০ বছরে পর্দাপণ করল।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পরই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কাযর্ক্রম শুরু হয়। সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। এরপর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং তার প্রিয় কিছু বই ক্রয় করেন।

এরপর বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া চারজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।

কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলামিস্ট আফসান চৌধুরী এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার জন্য নয়, বইমেলা বাঙালির ‘প্রাণের মেলা’।

তিনি বলেন, যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সবসময় তা পেতে চাই।

এ সময় তিনি নিরাপত্তার বেড়াজালের কারণেই নিয়মিত বইমেলায় আসতে না পারার কষ্টের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন এই মেলায় অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। আর এখন অনেকটা বন্দি জীবন, এখন ইচ্ছা থাকলেও আসা যায় না। আর আসলেও অন্যের অসুবিধা হয়।সত্যি কথাটা কি, মনটা পড়ে থাকে বইমেলায়।

বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ, মিসরীয় লেখক-গবেষক মুহসেন আল আরিসি।

অনুষ্ঠানে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মিসরীয় সাংবাদিক-গবেষক মুহসেন আল আরিসির লেখা ‘হাসিনা হাকাইক আসাতি’ বইটির একটি কপি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

মুসলিম প্রধান একটি দেশে একজন নারী হয়ে নেতৃত্বে এসে শেখ হাসিনা কীভাবে মানুষের দিনবদলের রূপকার হয়ে উঠলেন, সেই বিবরণ এই বইয়ে তুলে ধরেছেন আরিসি। বইটির বাংলা তর্জমার শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’।

দুই মলাটের ভেতরে কাগুজে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এ বইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

দেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রভাষা আর ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানাতে আরও বেশি বই প্রকাশের আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রামেন্দু মজুমদার।

অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাবুও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ মেলার পরিসর এবার আরও বেড়েছে। বেড়েছে বইয়ের স্টল নিয়ে বসা প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা। এবারের গ্রন্থমেলার প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে ‘বিজয়: ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ নবপর্যায়’।

মেলার বাংলা একাডেমি অংশ একজন ভাষা শহীদের নামে, এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চারজন ভাষা শহীদের নামে মোপ পাঁচটি চত্বর রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতা স্তম্ভ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বসানো হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে।

সব মিলিয়ে ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবার।

এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠান ১৫০টি ইউনিট নিয়ে তাদের বইয়ের পসরা সাজিয়েছে। আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬২০টি ইউনিট নিয়ে বসেছে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল।

এছাড়া বহেরা তলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটল ম্যাগাজিনকে ১৫৫টি স্টল দিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। বাংলা একাডেমি ও মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।

এবারও মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে রয়েছে ‘শিশু চত্বর’। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সাজানো হয়েছে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও প্রতি শুক্র ও শনিবারে একটি সময়কে ঘোষণা করা হবে ‘শিশু প্রহর’ হিসেবে।

খুদে লেখকদের জন্য এবার শিশু চত্বরে ‘তারুণ্যের বই’ নামে একটি নতুন আয়োজন থাকছে, যেখানে খুদে লেখকরা তাদের বইয়ের প্রচারণা করতে পারবে।

এ বছর থেকেই গ্রন্থমেলায় শুরু হচ্ছে নতুন মঞ্চ ‘লেখক বলছি’। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জলাধারের পাশে এই মঞ্চে প্রতিদিন পাঁচজন লেখক যোগ দেবেন। তারা কথা বলবেন তাদের প্রকাশিত বই নিয়ে; পাঠকের প্রশ্নের জবাবও দেবেন।

ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা বইমেলা সবার জন্য খোলা। এছাড়া শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

&dquote;&dquote;

২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে হবে সেমিনার। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমকালীন প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হবে সেখানে। এছাড়া বাঙালি মনীষার জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হবে মূলমঞ্চে।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবি কণ্ঠে কবিতা পাঠ।পাশাপাশি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: