অনিরাপদ দৈহিক মিলনে হতে পারে জটিল রোগ
গত দুই মাস ধরে জ্বরটা ঘুরে ঘুরেই আসছে সালমার। খুব একটা পাত্তা দেয়নি এতদিন। শুধু নাপা আর প্যারাসিটামল খেয়েই চলছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে আবার তলপেটেও প্রচণ্ড যন্ত্রণা। এই মাসের নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই পিরিয়ড হয়ে গেল। সব মিলিয়ে শরীরের অবস্থা ভালো নেই। ভাবছে আর কিছু দিন গেলে না হয় স্বামীকে বলা যাবে। এভাবে কেটে গেল আরো ৩ মাস। কিন্তু কোনোভাবেই যেন তলপেটের ব্যাথাটা কমছে না। পিরিয়ডের সময়ও এখন বদলে গেছে। এক দিন বাধ্য হয়েই বলে ফেলল স্বামী ইকবালকে।
সেদিন সন্ধ্যায় ইকবাল দ্রুত অফিস থেকে এসে সালমাকে নিয়ে বের হয় ডাক্তারের কাছে যাবেন বলে। নিয়ে গেল পারিবারিক গাইনি ডাক্তারের কাছে। তিনি সব শুনে কিছু টেস্ট দিলেন। বললেন পরদিন রিপোর্টগুলো নিয়ে যেন সন্ধ্যায় দেখিয়ে যান। ইকবাল অফিস থেকে ফেরার পথে টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দেখা করেন ডাক্তারের সাথে। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানালেন, সালমার জরায়ুতে সংক্রমণ। তবে তা অতিরিক্ত মাত্রায় নয়। কিছু এন্টিবায়োটিক সেবন করলে সেরে যাবে।
৩৯ বছর বয়সী ফাতেমারও প্রায় একই সমস্যা। তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা। এছাড়া তার পিরিয়ডও অনিয়মিত। পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণও হয়। আবার স্বামীর সাথে সহবাসেও ব্যাথা হয় ফাতেমার। প্রায় দেড় বছর ধরে এসব শারীরিক সমস্যা নিয়েই সংসার সামলে চলছিল ফাতেমা। একদিন পাশের বাসার ভাবির চাপাচাপিতে যান এক গাইনি ডাক্তারের কাছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি জানালেন ফাতেমার জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবানুর সংক্রমণ। তার যে অবস্থা তাতে অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই। ওষুধ সেবনে এই রোগ সারবে না।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের গাইনি বিভাগের প্রফেসর ডা রওশন আরা বলেন, মূলত পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) হচ্ছে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে জীবানুর সংক্রমণ। এছাড়া অন্যান্য জীবানুর কারণেও এই রোগ হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌনবাহিত রোগের মাধ্যমে এ জীবানুর সংক্রমণ হতে পারে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে অধিকাংশ নারীই বিশেষ করে গ্রামীণ নারীরা তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। তারা শরীরে রোগ পুষে রাখে। আর এভাবে অনেক সামান্য রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি কিছু কিছু রোগের ফলে রোগীকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।'
ডা. রওশন আরা বলেন, এই রোগের লক্ষণগুলো হল অতিরিক্ত স্রাব, পিরিয়ডের সময় বদলে যাওয়া ও অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া, জ্বর, তলপেটে অসহ্য ব্যাথাসহ আরো কিছু। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে। মূলত অনিরাপদ যৌন মিলন, জরায়ুর অপারেশন অথবা গর্ভপাত হচ্ছে মূল কারণ এই জীবানুর সংক্রমণে। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ সেবনে এই রোগ সেরে যেতে পারে। তবে জটিল আকার ধারণ করলে অপারেশন ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই।
তিনি বলেন, 'এক্ষেত্রে পুরুষদেরও চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। তার কাছ থেকেও এ জীবানু নারীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। তাই পুরুষকেই স্ত্রীর সাথে সাথে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।'
এছাড়াও সহবাসের সময় কনডম ব্যবহারের পরামর্শ দেন এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, একটু সচেতন হলেই এসব রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক এবং কনডম ব্যবহার করলে এই রোগের জীবানুকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়াও যেখানে-সেখানে গর্ভপাত করা থেকেও বিরত থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশে অনেক ফার্মেসির দোকানেও গর্ভপাত করানো হয়। যা কখনোই উচিত নয়। কারণ সেখানে জীবানু সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও থাকে। আর তাই গর্ভপাত করাতে হলে কোন ভালো গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে জীবানুমুক্ত পরিবেশে গর্ভপাত করানো উচিত।
বিডি২৪লাইভ/এএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: