সোনার মূর্তি ও জুয়েলের গল্প!

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০২:২৪ পিএম

মিরপুর-৬ এর বাসিন্দা জুয়েল। বাবা-মা কেউই আর বেঁচে নেই জুয়েলের। তিনি থাকেন তার বড় ভাই আর ভাবির সাথে। জুয়েলের বড়ভাই এক মুদি দোকানের কাজ করেন। আর জুয়েল করেন কাঁচামালের ব্যবসা।

অল্প আয়ে ভালই চলছিলো জুয়েলের সংসার। এরই মধ্যে একদিন হঠাৎ জুয়েলের কাছে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চাওয়া হয় কাউসার নামের কাউকে।

ওপাশ থেকে লোকটা বলেন, ‘ভাই এটা কি কাউসারের নম্বর? কাওসার আমার খালাতো ভাই। তাকে আমার খুব দরকার। আপনি তাকে একটু ফোনটা দেন।’

জুয়েল জানায় তিনি কাউসার না। আর তিনি কাউসার নামের কাউকে চিনেনও না। এরপর ফোন কেটে দেন জুয়েল। কিন্তু অপরিচিত নম্বরটি থেকে জুয়েলের কাছে পরেরও দিন আবার ফোন আসে। একইভাবে চাওয়া হয় কাউসারকে।

পর পর কয়েকদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পর একদিন ওই অপরিচিত নম্বর থেকে জুয়েলকে জানানো হয় তিনি খুব বিপদে পড়েছেন বলেই বার বার ফোন দিচ্ছেন। কি সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে জুয়েলকে সেই অপরিচিত নম্বর থেকে জানানো হয়, ‘তিনি একটি সোনার মূর্তি পেয়েছে। যা তার খালাতো ভাইকে দিয়ে বিক্রি করাতেন। তিনি গ্রামে থাকেন আর কখনো ঢাকাতেই আসেন নি।’

এরপর লোভে পড়েন জুয়েল। তিনি বলেন, ওই লোকটি চাইলে তাকে সহোযোগিতা করবে জুয়েল। লোকটি জানায় তিনি জুয়েলকে মোট টাকার অর্ধেক দিবে। জুয়েল তো মহাখুশি। কিন্তু তারপরেও একটা সন্দেহ রয়ে যায় জুয়েলের।

জুয়েল তার পরিচিত কয়েক জনকে জানায় ঘটনাটা। এরপর অনেকে তাকে আশ্বস্ত করেন। বলেন এমনও অনেক লোক গ্রামে রয়েছেন যারা কখোনো ঢাকায় আসেননি। এটা হতে পারে।

এরপর কদিন বাধে জুয়েল সেই লোকের কথা মতো জুয়েলের পরিচিত তিনজন নিয়ে ওই মূর্তি দেখতে যায়। এরপর নদীর মাঝে নৌকায় নিয়ে যাওয়া হয় জুয়েলকে। দেখানো হয় তার কাঙ্খিত মূর্তি। মূহুর্তেই হতভম্ব হয়ে যায় জুয়েল। লোভে ভরে ওঠে তার চোখ।

এসময় সেখানে উপস্থিত এক লোক জানায় জুয়েলের এই মূর্তি নিতে হলে আগে তাকে তিনলক্ষ টাকা দিতে হবে। কিন্তু এটা আসল কিনা জানতে চায় জুয়েল। এসময় তাকে মূর্তির একটু টুকরো তাকে দেওয়া হয় আর বলা হয় জুয়েল যেন পরীক্ষা করে দেখে এটা আসল সোনা কিনা। এরপর জুয়েল জানায় সে তিনলক্ষ টাকা দিবে। এবং সেই নিবে এই মূর্তি।

এরপর জুয়েল এবং অন্যরা ঢাকায় ফিরে আসে। এসে তারা কেউ ঘরের আসবাবপত্র কেউবা আবার সোনা-গহনা বিক্রি করে সবাই মিলে তিনলক্ষ টাকা জোগাড় করে।

তারপর সেই লোকের কথামতো তার দেওয়া ঠিকানায় যায়। কিন্তু ওই লোক জানায় জুয়েলদের যেতে হবে রাত দশটার পর। কারণ এই জিনিস দিনে দেওয়া যাবে না। এরপর কথামতো রাতে যায় জুয়েলও তার পরিচিত তিন লোক।

রাতে জুয়েলরা যাওয়ার পর দেখতে পান সেই লোক আর একা না। তার সঙ্গে আর একজন থাকার কথা থাকলেও তারা রয়েছেন অন্তত পনেরজন। এবং সবার হাতে রানদা, লাটিসহ দেশীয় সব অস্ত্র।

ঘাবড়ে যায় জুয়েলরা। এসময় তাদের থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় সেই লোক এবং তার সাথে থাকা ব্যক্তিরা। এসময় অন্যরা জুয়েলদের মারতে শুরু করে। এবং জুয়েলরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে পুরো ঘটনা।

জুয়েল এসময় প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে দেখে সামনে নদী। এরপর নদী সাঁতরে পার হয়ে কোনক্রমে জীবন বাঁচায় জুয়েল। সেইদিনের সেই ঘটনা আজও জুয়েলের জীবনের এক অভিশাপ!

(এই লেখাটি বেসরকারি একটি টেলিভিশনের ফাঁদ অনুষ্ঠানের অবলম্বনে করা)

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: