‘বদিকে দিয়ে মাদক আর শাজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সক্ষম হবে?’

প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:৫৪ পিএম

সড়কে শৃঙ্খলা আনতে শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি নিয়ে কেউ আশঙ্কা করলেও, ভালো কিছু আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পর্টির সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।

সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশমালা প্রণয়নে সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি নিয়েও সংসদে প্রশ্ন ওঠেছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য মো. ফখরুল ইমাম সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘বদিকে দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, শাজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ। গতবার শাজাহান খানের একটা হাসি নিয়ে কতকিছু ঘটলো। সেই শাজাহান খানকে প্রধান করে গঠিত কমিটি সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম হবে?’

উত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা জরুরি ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা করেছি। এই সভায় মন্ত্রীরা ছিলেন, সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতারা ও সড়ক বিশেষজ্ঞরা ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে সভা করে কমিটি করেছি। শাজাহান খানের নামটি প্রস্তাব করা হলে কেউই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি। কমিটিতে আরও ১৪ জন আছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এখানে ব্যক্তিকে দেখছি না। তারা কমিটি মিলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কি সুপারিশ দেয়, সেটাই দেখার বিষয়। এখানে ব্যক্তি কোনো বিষয় না। কাজ করবে কমিটি। দেখুন আপনি যতটুকু আশঙ্কা করছেন তার চেয়ে ভালো কিছুও তো আসতে পারে।

সরকারি দলের সদস্য সাইফুজ্জামানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ডিভাইডারই একমাত্র সমাধান নয়। এখানে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের সচেতনতাও জরুরি। কারণ রাস্তায় দেখা যায় ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরেও ডিভাইডার দিয়ে লাফ দিয়ে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। মহিলারা বাচ্চা কোলে নিয়ে রাস্তা পার হয়। এমনকি ফ্লাইওভারের এপাশ থেকে ওপাশে হামাগুড়ি দিয়ে মানুষ পার হচ্ছে। মানুষ সড়কে শৃঙ্খলা মানছে না। মানুষের বিবেকটা এখানে খুব জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি কমিটিও করা হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য যারা ঢাকার রাস্তায় চলাচল করেন তারা দেখবেন মানুষ মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন। এরমধ্যে গাড়ি এসে চাকায় পিষ্ট করে দিচ্ছে। এখানে কী শুধু চালককে দায়ী করবেন? অনেক গাড়িচালক ট্রাফিক সিগনাল মানেন না। ভিআইপি হয়ে অনেকে রং সাইডে গাড়ি নিয়ে যান। এটা ঠিক নয়। ভিআইপিরা তো অসাধারণ, তারা যদি রং সাইডে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কেন রং সাইডে যাবে না! মন্ত্রী জানান, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে তার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, সকল মহাসড়কে ফোরলেনের পাশাপাশি বাইলেন ও ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে। সড়ক মন্ত্রণালয় সেইভাবেই কাজ করছে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে রাতে সংসদের কার্যপ্রণালী ২৭৪ বিধিতে ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিতে গিয়ে সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি ফখরুল ইমামের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। একইসঙ্গে তার প্রশ্নকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, মাদক ও সড়ক দুর্ঘটনা এক করে আমার বিষয়ে ফখরুল ইমাম যে বক্তব্য রেখেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।  গত সাড়ে চার বছরে একটা লঞ্চ ডুবি হয়নি। আগে প্রতিবছর হতো। ফখরুল ইমামকে সাহেবকে একদিন এখানে দাঁড়িয়ে বলতে হবে তার বক্তব্য কতবড় ভুল ছিলো বা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিলো।

সংসদ সদস্য শাজাহান খান বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করি। তাই তাদের নিযে কিছু বললে আমার আঘাত লাগে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে গার্মেন্ট নিয়ে যখন জ্বালাও পোড়াও হচ্ছিলো তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দেন। আমি তখন শ্রমিকদের সংগঠিত করে কাজ করেছি। এর ফলে ২০১৩ সালের পর গার্মেন্টস সেক্টরে বড় ধরণের কোন জ্বালাও পোড়াও হয়নি।

এসময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপি শাসনামলের নানা চিত্র তুলে ধরে সাবেক মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবা ঠিক হবে না। পৃথিবীর কোন দেশে দুর্ঘটনা হয় না এমনটি বলা যাবে না। তবে এখন দুর্ঘটনা অনেক কমে এসেছে। আরও দুর্ঘটনা কমে আসবে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: