আগুনে পুড়ে ছাই ঢাবির মেধাবী ছাত্র কাউছার
রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ফার্মেসিতেই পুড়ে ছাই হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএয়ের মেধাবী ছাত্র কাউছার আহমেদ। চকবাজার শাহী জামে মসজিদ এলাকার আল-মদিনা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী। দোকান থেকে রোজগারের টাকাই ছিল নিজের এবং পরিবারের মুল হাতিয়ার। কিন্তু তার ফার্মেসি এবং নিজে পুড়ে ছাই হয়ে গেল আগুনের লেলিহান শিখায়।
বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের ভয়াবহ আগুনে পুড়ে মারা গেছেন কাউছার। সঙ্গে দোকানের চিকিৎসকও মারা গেছেন। তাঁদের দুজনের লাশই ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। মর্গের সামনে বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে এভাবেই আহাজারি করছিলেন কাউছারের মা ও ভাই হাফিজ আহমেদ।
ভাই হাফিজ আহমেদ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আর্থিক টানাটানির কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেছেন ভাই কাউছার। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একটি বড় চাকরি করবেন। সেই ভাই চোখের নিমিশেই চলে গেলেন।
এদিকে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন কাউছারের মা। বুক চাপড়াচ্ছেন আর বলছেন, ‘আমার কাউছার কই। আমার বুকের ধনকে আমার বুকে এনে দে।’ আত্মীয়স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কাউছারের ভাই হাফিজ আরো বলেন, আগুন লাগার সময় আমার ভাই ও ডাক্তার ফার্মেসির ভেতরে ছিলে। আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর পরই তাঁরা দোকান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বলে আমরা শুনেছি। কিন্তু তাদের দোকান থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। ফার্মেসির ভেতরেই তারা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমার ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্র। তিনি এতটা বোকা নন যে, দোকানের ভেতরে থেকেই পুড়ে মারা যাবেন।
কাউছারের স্বজনদের মতো আরো শত শত মানুষ স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান পুরো ঢাকা মেডিকেল চত্বর। বুক চাপড়ে আর্তনাদ করছেন কেউ কেউ। যারাই সান্ত্বনা দিতে আসছেন তাঁরাও কাঁদছেন।
চকবাজার এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭৮ জন। এদের অধিকাংশের লাশই ঢাকা মেডিকেলের মর্গে আনা হয়েছে। সকাল থেকেই মর্গের সামনে আত্মীয়-স্বজনদের ভিড় জমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপরই পাশের খুঁটির আরো দুটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের শব্দ তারা শুনেছেন। তারা বলেন, মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালন করা ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, যেহেতু এখানে দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ আছে, এগুলো খুবই বিস্ফোরণ ঘটছে। এগুলোর টেম্পার অনেক বেশি। এগুলোর সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে আমাদের ফায়ার ফাইটিং করতে হচ্ছে। রেসিডেনশিয়াল এরিয়াতে কোনো কেমিক্যালের গোডাউন থাকার কথা না।
বিডি২৪লাইভ/এসএ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: