ভারত-পাকিস্তান পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০১৯, ০৮:১২ এএম

শিফারুল শেখ: দক্ষিণ এশিয়ার শত্রুপ্রতিম দুই প্রতিবেশি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা থামছে না। গতকাল বুধবারও দেশ দুটির সীমান্তে গুলি বিনিময় হয়েছে। উত্তেজনার মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধের আশংকা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের একটি সাবমেরিন পাকিস্তানের আটকে দেওয়ার খবরে এই যুদ্ধের আশংকা বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের একটি মিডিয়া। গবেষকরা জানিয়েছেন, পরমাণু অস্ত্রধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে অন্তত দুইশ’ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটবে। এদিকে পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা এবং অনেকগুলো জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের দাবি জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু একটি আন্তর্জাতিক স্যাটেলাইট ইমেজে সেই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিবিসির এক অনুসন্ধানেও জঙ্গি হতাহতে ভারতের একটি দাবি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সংঘর্ষ থামছে না।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট দেবেন্দ্র আনন্দ জানান, বুধবার ভোর থেকে গুলি ও মর্টার ছুঁড়ে পাকিস্তান সেনারা। বেলা বাড়তেই হামলার বেগ বাড়ে। ভারতীয় সেনারাও যোগ্য জবাব দিয়েছে। মঙ্গলবার নৌশেরা ও পুঞ্চের কৃষ্ণঘাঁটি লক্ষ্য করে গোলাগুলি ছোঁড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওইদিন রাজৌরিতে এক সেনা আহত হন। যদিও গতকালের হামলার ঘটনায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

পরমাণু যুদ্ধের আশংকা, মারা যাবে ২শ’ কোটি

মঙ্গলবার পাকিস্তান দাবি করে, সোমবার রাতে ভারতের একটি সাবমেরিন তাদের জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সফলভাবে সেটি আটকে দিতে সক্ষম হয়। তবে ভারত জানায়, পাকিস্তান নাটক সাজিয়েছে। তাদের প্রচারিত ভিডিওটিও ভুয়া। ২০১৬ সালের ভিডিও সম্পাদনা করে নতুন ভিডিওটি তৈরি। এর কয়েকদিন আগে দুই দেশ একে অপরের যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ভারতের এক পাইলটকে পাকিস্তান মুক্তি দেওয়ায় শান্তির আশা জেগেছিল। ৪ মার্চ সাবমেরিন ঘটনার পর ব্রিটেনের প্রভাবশালী মিডিয়া এক্সপ্রেস.ডট.ইউকে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধও বেধে যেতে পারে। অ্যাক্সিওজ নামের ওয়েবসাইট বলছে, ভারতে সামনে লোকসভা নির্বাচন। আর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অপরীক্ষিত। ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে। বিশ্বে প্রভাবশালী দেশ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। তবে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ পরমাণু যুদ্ধের আশংকা নাকচ করে দিয়েছেন আগেই। পরমাণু যুদ্ধ বাঁধলে পাকিস্তানের জয় নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং সৌদি আরব যুদ্ধ এড়াতে দুই দেশের ওপরই চাপ তৈরি করছে। ওয়েন বি টুন ও তার সহযোগীদের ২০১৩ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে প্রায় ২শ’ কোটি মানুষ প্রচণ্ড ঠান্ডা, খরা ও খাদ্যাভাবের প্রভাবে প্রাণ হারাতে পারে।

ফের হামলা চালাবে নয়াদিল্লি!

গত কয়েকদিন ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার বক্তব্যে ফের হামলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একবার হামলা করেই আমরা ক্ষান্ত হবো, এটা মনে করার যুক্তি নেই। সন্ত্রাস হলে প্রয়োজনে সন্ত্রাসীদের ঘরে ঢুকে হামলা চালাবো। এমনকি ভারতের সামরিক কর্মকর্তাদের মুখেও ফের হামলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পাকিস্তানও হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

দুই দেশই পরমাণু অস্ত্র বাড়াচ্ছে

সুইডেন ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের হাতে ১৩০ থেকে ১৪০টি ওয়ারহেড বা পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ভারতের অস্ত্রভিত্তিক প্লুটোনিয়াম তালিকা এবং পারমাণবিক নিক্ষেপ প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে এই তালিকা তৈরি করেছে। এছাড়া ইউরেনিয়াম উত্পাদনে সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। পাকিস্তানও পারমাণবিক অস্ত্র উত্পাদন এবং উেক্ষপণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জানুয়ারি ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি ওয়ারহেড রয়েছে বলে হিসেব পাওয়া যায়। আসছে দশকে তা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

সামপ্রতিক ঘটনাপ্রবাহ

১৯৪৭ সালে জন্মের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মির নিয়ে সংঘাত লেগে আছে। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি নতুন করে সংঘাত তৈরি হয়। ওই দিন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জয়শ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারত বাণিজ্যে ‘মোস্ট ফেবারট নেশন’ তালিকা থেকে পাকিস্তানকে বাদ দেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি সীমান্তে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সেনা সদস্যসহ ৯ জন নিহত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দেন এবং একইসঙ্গে ভারতের হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। ভারত সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। ২০ ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে চলা বাস সার্ভিস প্রত্যাহার করে। ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারত কাশ্মিরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এতে নিরাপত্তাবাহিনীসহ বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অনেকগুলো জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস এবং অনেক জঙ্গি নিহত হয়েছে। পাকিস্তান সেই দাবি প্রত্যাখান করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেন। এই কর্তৃপক্ষই পরমাণু অস্ত্রের দেখভাল করে। ওই দিন দুই দেশ একে অপরের যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান খান জানান, তারা ভারতের আটক পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেবেন। পহেলা মার্চ তাকে ভারতের কাছে ফেরত দেওয়া হয়। সূত্র: ইত্তেফাক।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: