নব্বই দশকের সেরা জুটি ছিলেন কারা?

প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০১৯, ০৭:১৫ পিএম

ষাটের দশক থেকে শুরু করে ঢাকাই সিনেমায় অনেক তারকাই এসেছেন। কেউবা এসেছেন ধ্রুবতারা হয়ে কেউবা আলোর প্রদীপ হয়ে। চলচ্চিত্রের সিংহভাগ জুড়েই রয়েছে প্রেম। প্রেম মানে পর্দায় নায়ক-নায়িকাদের রসায়ন। সে সময় থেকেই সিনেমায় একে একে জুটি বেঁধেছেন তারকারা। তাদের অনেকেই পর্দা কাঁপিয়ে দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ঢাকাই সিনেমার পর্দা কাঁপানো সে সময়ের রোমান্টিক জুটিদের আজ অনেকেই অভিনয়ে নেই। তবুও তারা রয়েছেন ভক্তদের মনে। জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

রাজ্জাক-কবরী: ১৯৬৮ সালে প্রয়াত নির্মাতা সুভাষ দত্তের হাত ধরে 'আবির্ভাব' চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন নায়ক রাজ রাজ্জাক। এই ছবিতে রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন চিত্রনায়িকা কবরী। আর এই ছবির মাধ্যমেই প্রথম জুটি বাঁধেন তারা আর হয়ে উঠেন সফল। এই জুটিকে দর্শকরা সাদরে গ্রহণ করে। এরপর থেকে এই জুটির ‘ময়নামতি’,‘নীল আকাশের নীচে’,‘দর্পচূর্ণ’,‘দীপ নেভে নাই’,‘অধিকার’, ‘রংবাজ’-এর মতো সিনেমাগুলোতে রাজ্জাক-কবরী জুটির প্রেমের অনবদ্য উপস্থাপন দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এই জুটি অভিনীত জনপ্রিয় গান ‘তুমি যে আমার কবিতা’ এখন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ধ্রুপদী গানের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

শাবানা-আলমগীর: দেশীয় চলচ্চিত্রের জুটি প্রথার ইতিহাসে সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক আলমগীর ও শাবানা। এই জুটির অভিনীত ছবির সংখ্যা ১২৬টি, যার বেশির ভাগই ব্যবসা সফল। পারিবারিক আটপৌরে গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকতেন আলমগীর-শাবানা জুটি। তাদের অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল, ‘ভাত দে’, ‘অপেক্ষা’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘মরণের পরে’ এবং ‘অচেনা’। শাবানার অর্জিত ১১ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৬ টিই এসেছে আলমগীরের সঙ্গে অভিনীত ‍সিনেমা থেকে।

ফারুক-ববিতা: ১৯৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার একসঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক ফারুক ও ববিতা। চিত্রনায়ক জাফর ইকবালের সঙ্গে ববিতার রোমান্টিক জুটি দর্শক প্রিয়তা পেলেও দর্শক এবং সমালোচকদের দিক থেকে সবচেয়ে প্রিয় জুটি ছিলেন ফারুক ও ববিতা। এরপর ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমনি’, ‌‘সূর‌্য সংগ্রাম’, ‘প্রিয় বান্ধবী’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ‘মিয়া ভাই’ এবং ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ সিনেমায় অভিনয় করেন তারা।

বুলবুল আহমেদ- জয়শ্রী: ঢাকাই ছবির অন্যতম মেধাবী নির্মাতা আলমগীর কবীর তার জীবদ্দশায যে ক’টি সিনেমা তৈরি করে যেতে পেরেছিলেন, তার অধিকাংশরই নায়ক ছিলেন বুলবুল আহমেদ। এর মধ্যে ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘রূপালি সৈকতে’ এবং ‘সূর‌্য কণ্যা’য় তার সঙ্গে জুটি বাঁধেন আলমগীর কবীরের স্ত্রী জয়শ্রী কবীর। মাত্র তিনটি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেই ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বুলবুল-জয়শ্রী জুটি। এই জুটির ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিটিকে বলা হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ছবি। ভূপেন হাজারিকা ও আবিদা সুলতানার গাওয়া এই সিনেমার গান ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’ এবং ‘মেঘ থমথম করে’ দারুণ জনপ্রিয় হয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন-দিতি: আশির দশকের দিকে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও দিতি। একসঙ্গে জুটি বেঁধে তারা ৫০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। দিতির প্রথম স্বামী ও ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু হলে তারা দুজনে বিয়ে করেন। কিন্তু সে সংসার খুব বেশি দিন টিকে নি। তাদের উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি হলো- ‘দয়ামায়া’, ‘আত্মবিশ্বাস’, ‘ভাইবন্ধু’, ‘বাঁচার লড়াই’, ‘আম্মা’, ‘অচল পয়সা’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘প্রেমের প্রতিদান’, ‘চরম আঘাত’, ‘এই নিয়ে সংসার’, ‘ভাই কেন আসামী’, ‘আসামী গ্রেফতার’।

নাঈম-শাবনাজ: প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে একসঙ্গে চলচ্চিত্রে আসেন নাঈম ও শাবনাজ। এহতেশামের ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জুটি বাঁধেন নাঈম ও শাবনাজ। প্রথম ছবিতেই জুটি হিসেবে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এরপর ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘দিল’, ‘টাকার অহঙ্কার’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’, ‘সোনিয়া’ ও ‘অনুতপ্ত’সহ আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে একসঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। যার প্রতিটি ছবিই ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই একে অপরের প্রেমে পড়েন তারা। প্রথমে প্রেমের কথা অস্বীকার করলেও ১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন এ জুটি। বিয়ের পর কিছুদিন কাজ করলেও ২০০০ সালের পর থেকে এ জগত থেকে আড়ালে চলে যান তারা।

সালমান শাহ-শাবনূর: নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকাই ছবিতে এক ধূমকেতুর আবির্ভাব ঘটেছিল যার নাম সালমান শাহ। সোহানুর রহমান সোহানের 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। প্রথম ছবিটি সুপার ডুপার হিট হয়েছিলো। এরপর ১৯৯৪ সালে ‘তুমি আমার’ চলচ্চিত্রে শাবনুরের সাথে জুটি বাঁধেন সালমান। এই জুটির প্রথম ছবিই ব্যাপকভাবে সফল হয়। যার ফলে পরিচালক-প্রযোজকরা একের পর এক ছবিতে নিতে থাকেন তাদের। সালমান শাহ তার স্বল্প আয়ূর জীবনে অভিনয় করেছিলেন ২৭টি ছবিতে। এর মধ্যে ১৪টি ছবিতেই তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শাবনূর। সালমানের বিপরীতে অভিনয়ের মাধ্যমেই চিত্রজগতের অন্যতম তারকায় পরিণত হন তিনি। যে ক’টি সিনেমায় একসঙ্গে তারা ছিলেন, তার মধ্যে ‘তোমাকে চাই’,‘জীবন সংসার’,‘স্বপ্নের ঠিকানা’,‘আনন্দঅশ্রু’, ‘স্বপ্নের নায়ক’সহ প্রায় প্রত্যেকটিই এখনও দর্শক দারুণভাবে মনে রেখেছেন।

রিয়াজ-পূর্নিমা: নব্বই দশকের শেষদিকে প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন রিয়াজ ও পূর্ণিমা জুটি। তবে এই জুটির প্রথম ও সবচেয়ে বেশি ব্যবসা সফল সিনেমা ‘মনের মাঝে তুমি’ মুক্তি পায় ২০০৩ সালে। এই সিনেমার পর থেকেই জুটি হিসেবে জনপ্রিয়তা পান রিয়াজ ও পূর্ণিমা। ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ এবং ‘এক পৃথিবী প্রেম’-এর মতো সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তারা। ‘হৃদয়ের কথা’ সিনেমায় তাদের অভিনীত ‘ভালোবাসবো বাসবোরে বন্ধু’ এবং ‘যায় দিন’ গান দুটি ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর/আইএন

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: