এক কৃষকের সন্তানের আশ্চর্য উত্থান

প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০১৯, ০৮:৫৮ এএম

স্টাফ রিপোর্টার ও গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: ছয় বছর বয়সে মা মারা যান। পাঁচ ভাইবোনের সঙ্গে তিনি বড় হয়েছেন কৃষক বাবার যত্নে। প্রত্যন্ত জনপদে অনেকটা চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে মারা যান মা। এ থেকে জেদ জেগেছিল চিকিৎসক হওয়ার। নিজের সেই স্বপ্ন পূরণ না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার আদায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন কাঁধে।

২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুরের উত্থানের গল্পটা অনেক ত্যাগ আর সংগ্রামের। নুরের জন্ম পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় নুর।

নুরের বাবা সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইদ্রিস হাওলাদার। তিনি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, ১৯৯৩ সালে নুরের ছয় বছর বয়সে তার মা নিলুফা বেগম মারা যান। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় তার চিকৎসায়ও সমস্যা হয়। এ থেকে নুর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। ১৯৭৫ সালে বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামের পৈতৃক নিবাস ছেড়ে নুরুলের দাদা ও ৩ চাচা গলাচিপার উত্তর চরবিশ্বাস এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তার পিতা ইদ্রিস হাওলাদার নিজ এলাকায় ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তার কয়েক কানি জমি এবং স্থানীয় বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে। নুরের বড়ভাই নুরুজ্জামান ও ছোটভাই আমিনুল ইসলাম ঢাকা উত্তরা এলাকায় মুদি মনোহরী ও গেঞ্জির ব্যবসা করেন। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকি দুই বোনের মধ্যে সীমা আক্তার দশমিনা কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে এবং ইতি আক্তার চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। জনতা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. আবু বকর জানান নুরুল জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়া অবস্থায় সে ছাত্রলীগের স্কুল কমিটির দপ্তর সম্পাদক ছিল।

নুরুল চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন। ২০১০ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর গোলাম নবী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং ২০১২ সালে ঢাকা উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি বিভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ পান। মাঝে তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এদিকে তিনবছর আগে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাতেম আলীর মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে বিয়ে করেন নুর। নুরের স্ত্রী মরিয়ম স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।

নুরের বাবা ইদ্রিস হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, ছেলের জয়ে আমার এলাকার সর্বস্তরের মানুষ খুব খুশি। এ বিজয় সকলের। আমার ছেলে ভবিষ্যতে যাতে বড় কিছু হতে পারে তার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।

ছেলের আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, সব সাধারণ ছাত্রছাত্রীর জন্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সে হামলার শিকার হয়েছে। তবু আমি চাই সে এটা চালিয়ে যাক। নুর-এর বাবা চান তার ছেলে যে পথে হাঁটছে সততার সঙ্গে তা যেন অব্যাহত রাখেন। নুরুল হক নুর কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় তার ওপর দফায় দফায় হামলা হয়েছে। শিবিরকর্মী বলে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয়েছে। ইদ্রিস হাওলাদার জানিয়েছেন তার ছেলে এমন কোনো দলের রাজনীতি করেননি। নুর ছাত্রলীগের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ইউনিটের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপ-সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বাবুল মুন্সী বলেন, নুরের অর্জন চরাঞ্চলের মানুষকে আনন্দিত করেছে। তাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। সূত্র: মানবজমিন।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: