সবুজের মাঝে বেগুনি রঙের ধানক্ষেত!

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯, ০৫:২১ পিএম

যেদিকে চোঁখ যায় দিগন্ত জুড়ে ফসলের মাঠ। বুক জুড়ে রয়েছে সবুজ আর সবুজ। কিন্তু কোথাও কোথাও দেখা মিলছে বেগুনি রঙ। এটা আবার কেমন। সবুজের মধ্যে বেগুনের রঙ। আচার্য না! চারদিকে সবুজ ধান ক্ষেত থাকলেও মাঝখানে টুকরো জমিতে বেগুনি রঙের ধান গাছ এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। 

ইতোমধ্যে শেরপুরের নকলা উপজেলার গনপদ্দি এলাকার বারইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. শামছুর রহমান আবুল ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়েনের বেতকূড়া গ্রামের শাহিনুর আলম বেগুনি রঙের ধানের ক্ষেতের আবাদ করে সবার নজর কেড়েছেন। সবুজ ধানের বেষ্টুনির মধ্যে বেগুনি এই ধান ক্ষেতটি দেখলে মনে হতে পারে কোন আগাছা বা বালাই আক্রান্ত ধানের ছবি। আসলে এর কোনটিই নয়, এটি এমন একটি ধানের জাত, যার পাতা ও কান্ডের রঙ বেগুনী। শুধু ধান গাছ নয় এর চালের রং ও  বেগুনী। তাই কৃষকদের কাছে এখন পর্যন্ত এই ধানের পরিচিতি বেগুনী রঙের ধান বা পার্পল পেডি ।

পরীক্ষামূলক এ ধান চাষে আবুল ও শাহিনুরকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ প্রদানসহ ধান ক্ষেত বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ভিন্ন রঙের ধান ক্ষেতটি সড়কের পাশে হওয়ায় পথচারিদের দৃষ্টি কেড়েছে। বর্তমান সময়ে ক্ষেতের চারা অনেকটা উফশী জাতের মত। গাছের পাতার রং বেগুনি হওয়ায় পুরুষ ক্ষেত বেগুনি আকার ধারন করেছে।কদিন পর সমস্ত ক্ষেত আরও ঘন বেগুনি রং ধারন করবে।

কৃষক শামছুর রহমান আবুল ও শাহিনুর আলম জানান, গত বছর পত্রিকার একটি খবরে এই ধানের খোঁজ তারা জানতে পেরে স্থানীয় (নকলা-নালিতাবাড়ী) অফিসে যোগাযোগ করেন। পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগীতায় চলতি বোরো আবাদের জন্য  কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষক মঞ্জুরুলের কাছ থেকে মোট ১০ কেজি বেগুনি রঙের ধানবীজ এনে  জমিতে আবাদ করেন। ক্ষেতে ধান গাছের বর্তমান অবস্থা দেখে তারা ও কৃষি কর্তকর্তারা আশা করছেন অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে। নজর কাড়া বেগুনি রঙের এই ধানে কৃষকদের নতুন আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি আশরাফ উদ্দিন জানান, কুমিল্লার এক কৃষকের কাছ থেকে স্থানীয় কৃষি অফিস এই ধানের বীজ সংগ্রহ করে।সংগ্রিহীত বীজ থেকে চারা করে নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলায় মোট দুই একর জমিতে বেগুনি ধান গাছ লাগানো হয়। আপাতত বেগুনি রঙের ওই ধান গাছ মানুষজনকে রঙে মোহিত করেছে।জানা গেছে এর চাল হবে বেগুনি ও সুস্বাধু। ফলন ভাল হলে উৎপাদিত ধান গুলো বীজ আকারে রাখা হবে। কৃষি অফিস দুই উপজেলার ধান ক্ষেত গুলোর দিকে নিয়মিত চোখ রাখছে। চাষীকে নিয়মিত সার্বিক পরামর্শ প্রদানসহ ধান ক্ষেতটি তদারকি করা হচ্ছে। এখন এর ফলন কি রকম হবে তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি  আরও জানান, বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশী জাত নয়, দেশীয় শুক্রানু প্রাণরস (জার্মপ্লাজম)।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে মাঠ পর্যায়ের অবস্থা বিবেচনায় ধানটির জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন এবং ফলন একরে ৫৫ থেকে ৬০ মণ। যা আনুমানিক শতাংশে ২০ কেজি (৪ থেকে ৫ টন প্রতি হেক্টরে) হতে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা ধারনা করছেন, এই ধানের চালের রং শতভাগ বেগুনী হলে ধানটি উচ্চমূল্যের হবে। তবে কৃষক শামছুর রহমান আবুল ও শাহিনুর আলম জানান, বীজ সংগ্রহকালীন সময়ে চালের রংটা বেগুনি রঙের বলে তারা দেখেছেন। তবে দুই উপজেলার অনেক কৃষক চেয়ে আছেন ধান কাটা পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য।

বিডি২৪লাইভ/এজে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: