প্রেমে ফাঁদে পড়ে বিয়ে, ফিলিপাইনের তরুণী বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯, ০১:৫৮ পিএম

প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফিলিপাইনের এক তরুণী এইমিকে বিয়ে করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশি এক যুবকের বিরুদ্ধে। এইমি অভিযোগ করেন, সালমান ইসলাম নামের এক যুবক তাকে মিথ্যা বলে বিয়ে করে এবং তার থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে এসে জানতে পারেন সালমান বিবাহিত। ওই তরুণীর অভিযোগ, সবকিছু বাংলাদেশে আসার পরও সালমান এখন তাকে নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

বাংলাদেশি সালমানুল ইসলাম ও ফিলিপাইন তরুণী এইমি গ্রাসি মার্ভালিয়াস, তাদের প্রথম দেখা সিঙ্গাপুরে। সেটা ২০১৪ সাল। সেখান থেকেই মন দেয়া-নেয়া কয়েক মাসের জানাশোনা ও প্রেমের পর সালমানের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হন এইমি। ২০১৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইসলামী শরীয়াহ মেনে বিয়ে করেন দু’জন। বিয়ের আগে-পরে এইমি-সালমান ঘুরেছেন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতমানসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তবে এসব ভ্রমণের সব খরচ বহন করেছে এইমি। বিয়ের দুই বছর পর সালমানের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন এইমি।

তখনো সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। এক সময় এইমি জানতে পারেন বাংলাদেশে থাকা সালমানের আরেক স্ত্রীর কথা। এছাড়া, সালমানের মেয়ে বান্ধবীর বিষয়ে জানতে পেরে সম্পর্ক ছিন্ন করে তালাক চান এইমি। গত বছরের ডিসেম্বরে আবারো বাংলাদেশে আসে এইমি। এবার আর ঘরসংসারে আগ্রহী নন তিনি। বিয়ের মোহরানার অর্থ ও তালাকনামা স্বাক্ষর নিয়ে ফিরে যেতে চান এইমি। তবে, মোহরানার দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও তালাকনামা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সালমান। এমনকি তাকে মারধরও করা হয়।

প্রথমে ঢাকার মিরপুরে সালমানের বাসায় গেলে সেখান থেকে এইমিকে একটি হোটেলে নিয়ে আটকে রাখা হয়। প্রায় দশ দিন আটকে রেখে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে জানান এইমি। সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে চট্টগ্রামে পরিচিত এক ফিলিপাইন পরিবারের কাছে চলে যান। মূলত সেখান থেকেই নিজের তালাকনামা ও মোহরানার টাকা আদায়ের বিষয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এর মাঝে একবার পুলিশের কাছে গিয়েও তেমন কোনো সাড়া পাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জনপ্রিয় নাস ডেইলি গ্রুপে একটি পোস্ট করেন এইমি গ্রাসি মার্ভালিয়াস। সেখান থেকে মেয়েটিকে খুঁজে বের করে তার দাবি আদায়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন ফিলিপাইনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উৎকর্ষ বিনিয়ম কর্মসূচির ডেলিগেট মুনতাসীর মাহমুদ।

তিনি বলেন, গত প্রায় চার মাস ধরে নিজের প্রাপ্য দাবি আদায়ে হন্যে হয়ে ঘুরছেন এইমি। ইংরেজি ভালো না জানায় কারো সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগও করতে পারছেন না। এতকিছুর পরও এখনো দেনমোহরের টাকা দিচ্ছে না এইমিকে বিয়ে করা বাংলাদেশি সালমান ও তার পরিবার। মুনতাসীরের মাধ্যমে শনিবার কথা হয় এইমির সঙ্গে। তিনি জানান, মূলত বাংলাদেশে থাকা স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় বিয়ে করেন সালমান। পরে অবশ্য ফিলিপাইনে নিজের ব্যবসা শুরু করতে আমাকে ব্যবহার করতে চায় সে। কিন্তু আমি তার থেকে তালাক ও মোহরানা চাইলে টালবাহানা শুরু করে।

এইমি জানান, তিনি নতুন করে তার জীবন শুরু করতে চান। তবে, তালাকনামা না পাওয়ার কারণে তাকে ফিলিপাইনে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এ কারণে গত চার মাস ধরে নানা কষ্টে বাংলাদেশে পড়ে রয়েছেন। তালাকনামা ও মোহরানার টাকা আদায় করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম দৌড়াদৌড়ি করছেন। এগুলো পেলেই নিজের পরিবারের কাছে ফিলিপাইনে ফিরে যাবেন।

এদিকে শেষমেষ এইমি ও সালমানের বিষয়ে সমাধান করতে গত ১৪ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন বিভাগে একটি বৈঠক হয়। এতে অভিযুক্ত সালমানুল ইসলাম ও এইমি গ্রাসি মার্ভালিয়াস উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মোহরানার দুই লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ফিলিপাইনে ফেরত যেতে বিমান টিকিটের খরচ চান এইমি।

সব অভিযোগ ও দাবি মেনে নিয়ে চলতি মাসের মধ্যে মোহরানার টাকা বুঝিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে টাকা দিতে কিছুদিন সময় চেয়েছেন এইমির অভিযুক্ত স্বামী সালমানুল ইসলাম।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র উইমেন সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নুসরাত জাহান মুক্তা গণমাধ্যমকে জানান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় বিবদমান দু’পক্ষ একটি সমঝোতায় এসেছে। ফিলিপাইনের ওই নারীর স্বামী টাকা দিতে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। ওদিন মোহরানার টাকা ও অন্য দাবি আদায় শেষে তারা খোলা তালাকে সই করবেন। এত সব অভিযোগের বিষয়ে সালমানুল ইসলাম বলেন, এটা সেটেল হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় সালমানের বাড়ি। তার পিতা গোলাম শিকদার।

বিডি২৪লাইভ/এএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: