কাঁদলেন মাহবুব তালুকদার!
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘একরাতে আমি সোফায় ঘুমিয়ে ছিলাম। রাতে রাউন্ডে এসে আমার মাথার নিচে কোন বালিশ না দেখতে পেয়ে নিজের ঘুমানোর বালিশ আমার অজান্তে মাথায় নিচে দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু।’
‘আজ আমার কার কথা মনে পড়ছে আপনারা জানেন? আমার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা। আমার পরম সৌভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সরকারিভাবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অনেক স্মৃতি। আজ মাত্র দু’টি বলব।’
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় জাতির জনকের স্মৃতি রোমন্থন করেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই দিনই তিনি আমায় ডেকে বলেন-মাহবুব তুমি আমার সঙ্গে থাকবা। আমাকে রাষ্ট্রপতির সহকারি প্রেস সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদবি বড় কথা নয়, দায়িত্ব অর্পিত হওয়ার পর সভাবতই আমি খুব খুশি হই।’
‘আমার দায়িত্ব পড়ে, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নেওয়ার। সিদ্ধান্ত হয়-দুপুরে খাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিশ্রামের সময়টুকুতে আমি তার রুমে ঢুকে যাবো। তিনি আমাকে বলেন-যদি কোনো অজুহাতে ডিকটেশন দেওয়ার জন্য তিনি সময় না দিতে পারেন, তাহলে আমি যেন জোর করে ডিকটেশন নিই।’
‘সেই মতে, আমি পরপর তিনদিন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর ডিকটেশন নিই। তার ডিকটেশন রেকর্ডও করি। চতুর্থ দিন এসে বঙ্গবন্ধু বেঁকে বসেন। বলেন, তোমার জন্য তো আমি বিশ্রামটুকুও নিতে পারছি না। আমি তাঁকে বলি-আইয়্যূবের শাসন, আপনার ছয় দফা, পাকিস্তানের জেলে বন্দির দিনগুলো, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এরকম গুরুত্বপূর্ণ সব অধ্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে তো আপনাকে ডিকটেশন দিতে হবে। আপনার বিশ্রামের সময় আপনাকে বিরক্ত করা আমারও ভাল লাগে না। তাই আপনি আমাকে অন্য একটা সময় বের করে দিন। বঙ্গবন্ধু বলেন- আমি সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনছি, পরিবারের বিয়ে শাদি শেষ করে দিয়েছি। সামনেই ডিকটেশন নেওয়ার সময় বের করে দেবো। কোনো কিছুই আটকে থাকবে না।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘দ্বিতীয় ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসের। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান যেদিন মারা যান। সেদিন আমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সারাদিন ছিলাম। চল্লিশার দিনে ঠিক হয়, বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যাবেন। সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। গাজী জাহাজে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হয়।’
‘আমার জাহাজ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকায়, কাপড় চোপড় সঙ্গে নেওয়ার কথা মনে হয়নি। রাতে জাহাজ ছাড়লে দেখি, আমার শোবার কোনো জায়গা নাই। একপাশে একটি খালি সোফা পেয়ে শুয়ে পাড়ি। পাশেই তখনকার এডিসি রাব্বানি সাহেব ছিলেন। মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখি, রাব্বানি জেগে আছে। আমার মাথার নিচে বালিশ। আমি অবাক হয়ে রাব্বানিকে জিজ্ঞেস করি-এই বালিশ আমার মাথার নিচে কে দিলেন? রাব্বানি বলেন-রাতে বঙ্গবন্ধু রাউন্ডে এসেছিলেন। তিনি দেখেন আপনি মাথার নিচে হাত দিয়ে সোফায় শুয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর রুমে গিয়ে বালিশ নিয়ে এসে আপনার মাথার নিচে রেখে গেছেন।’
এই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন মাহবুব তালুকদার।
কান্নাভারাকান্ত কণ্ঠে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমি জানতাম বঙ্গবন্ধুর দু’টি বালিশ ছাড়া ঘুম হয় না। তখন আমি বালিশ ফিরিয়ে দিতে বঙ্গবন্ধুর রুমের দিকে যাওয়ার কথা বলি। রাব্বানি জানান, গিয়ে লাভ নেই। বঙ্গবন্ধু দরোজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
‘ভোর পাঁচটা। জাহাজ চলছে। শুনশান নিরবতা চারদিকে। জাহাজের সামনের দিকে এগিয়ে দেখি, একটি ইজি চেয়ারে বসে বঙ্গবন্ধু কবিতা আবৃত্তি করছেন। নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি/গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ-সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি। আর কবিতা আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে তিনি পা দুলাচ্ছেন।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণার এই পর্যায়ে পুরো মিলনায়তনে ছিল পিনপতন নিরবতা।
‘আবৃত্তি শেষে আমাকে খেয়াল করেন বঙ্গবন্ধু। বলেন-মাহবুব, রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তো? আমি বললাম-না।’
‘কেন? আমি তো তোমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে আসলাম। উত্তরে বঙ্গবন্ধুকে বলি, আপনি আমার মাথার নিচে বালিশ দিয়ে এলেন। আপনিই বলুন, আপনি কারো মাথার নিচে বালিশ দিয়ে এলে তার পক্ষে কি আর ঘুমানো সম্ভব!’
স্মৃতিচারণের এ পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মাহবুব তালুকদার। কোনো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। অস্পুষ্ট স্বরে কেবল ধন্যবাদ দিয়ে নিজের আসনের দিকে চলে যান। মাঝে বক্তব্য দেওয়ার সময় অশ্রুসজল চোখ মুছতেও দেখা যায় তাকে।
বিডি২৪লাইভ/আরএইচ/এমআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: