আবরারকে চাপা দেয়ার আগে মালিক-কন্ডাক্টরের যে কথা হয়েছিল (ভিডিও)

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০১৯, ১০:০৭ পিএম

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দেয়া বাসের কন্ডাক্টর ইয়াসিন আরাফাত ও হেলপার ইব্রাহিমকে আটকের পর তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় কারওয়ান বাজারে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৯ মার্চ ভোর পাঁচটা ৪৫ মিনিটে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস নিয়ে রওনা দেন চালক সিরাজুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুর বাঁশতলা অতিক্রম করার সময় মিরপুর আইডিয়াল গার্লস ল্যাবরেটরি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সিনথিয়া সুলতানা মুক্তাকে চাপা দেয় তার বাস। গুরুতর জখম হন ওই ছাত্রী। এরপর বাসের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে চালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করে ট্রাফিক পুলিশে সোপর্দ করে।

এ সময় উপস্থিত জনতা বাসের ক্ষতি করতে পারে- এমন আশঙ্কায় বাসমালিক ননী গোপালকে ফোন করে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত দুর্ঘটনার কথা জানান। কন্ডাক্টর মালিকের কাছে জানতে চান এখন তারা কী করব? মালিক তখন বলেন, গাড়িতে যেহেতু কোনো যাত্রী নেই সেহেতু গাড়িটি যে কোনো জায়গায় রাখ। মালিকের নির্দেশে কন্ডাক্টর ইয়াছিন বাসটি দ্রুত চালাতে থাকে। এ সময় তার মাথা ঠিক ছিল না। নর্দ্দা পার হতেই বিইউপি শিক্ষার্থী আবরারকে চাপা দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেয়।

বুধবার মালিক ও কন্ডাক্টরের মধ্যে মুঠোফোনে কথোপকথনের বিষয়টি গণ্যমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের কথোপকথনের রেকর্ড উদ্ধার করেছি।

তিনি আরও বলেন, হত্যার মূলহোতা কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত। তার কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই।

বুধবার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার ঘটনায় সু-প্রভাত বাসের কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত ও হেলপার ইব্রাহিমকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রিমান্ড শুনানির আগে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত বলেন, মালিকের নির্দেশ পেয়ে আমি দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকি। এ সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমার মনের মধ্যে তখন ভয় কাজ করতে ছিল।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) দিবাগত রাতে চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার সুচিপাড়ার মিজানের ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে কন্ডাক্টর ইয়াছিন আরাফাত ও তার দেয়া তথ্যানুযায়ী বুধবার সকালে রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকা থেকে হেলপার ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করা হয়।

২০ এপ্রিল সু-প্রভাত বাসের চালক সিরাজুল ইসলামের (২৪) বিরুদ্ধে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

এদিকে আবরারকে চাপা দেয়ার একটি ভিডিওটি সম্প্রতি গণমাধ্যমের কাছে এসেছে। ঘটনাস্থলের পাশের সড়কের একটি সিসিটিভি ক্যামেরার দুর্ঘটনার দৃশ্যটি ধরা পড়ে।

ফুটেজে দেখা গেছে, গেট লাগানো অবস্থায় সু-প্রভাত পরিবহনের বাসটি আবরারকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আবরারের মরদেহ ছিটকে পড়ে সামনে। ব্যাগটি সেখানেই পড়েছিল। তার নিথর দেহটি এক মিনিট সেখানে পড়েছিল। একজন পথচারী সড়কের মাঝে গিয়ে সাহায্যের জন্য ডাকলেও কেউ আসেনি। আশপাশে কেউ গাড়িও থামায়নি। প্রায় ৭০ সেকেন্ড পর আশপাশের কয়েকজন মরদেহের সামনে এসে দাঁড়ায়।

উল্লেখ্য, ১৯ মার্চ সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নদ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বিইউপির ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। ওই দিন রাতে গুলশান থানায় মামলা হয়। ঘটনার পর চালক সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিরাজুলের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। ঘটনার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন...

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: