ফায়ার বল নিয়ে ফেসবুকে আতঙ্ক সৃষ্টি: বাস্তব না উদ্দেশ্য প্রণোদিত?

প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ০৪:৫৪ পিএম

চারপাশে যখন আগুন লাগার হিড়িক, তখন স্বভাবতই বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত পাড়ার মানুষের মাঝে বিরাজ করছে এক চাপা আতঙ্ক। নানা আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি যে যার মত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে অগ্নি নির্বাপণের। আর ঠিক এ সময়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্ট বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। যেখানে বলা হয়, একটি অফিসে অগ্নি নির্বাপণের উদ্দেশ্যে কেনা ফায়ার বল পরীক্ষামূলক দেখার উদ্দেশ্যে আগুনে ছুঁড়ে ফেলার পরও তার কার্যকারিতা দেখা যায়নি। ফলে, মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি বাজারের অগ্নি নির্বাপণ পণ্যও নিরাপদ নয়?

ফেসবুক পোস্টটি অনেকেই শেয়ার দিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে থাকে, এবং এর সত্যতা জানার চেষ্টা করে। কেননা, পোস্টটি পড়লে এবং এর ছবিগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে। 

পোস্টের শুরুতে বলা হয়, ‘আমরা সেই জাতি যারা সব কিছুতেই ব্যবসার ধান্দা খুঁজি’। ফায়ার বল বা এক্সটিংগুইশার সারা পৃথিবী ব্যাপি অগ্নি নির্বাপণের জন্যে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার হয়। ফলে, এখানে ‘ব্যবসার ধান্দা খোঁজা’ শব্দটি সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করে। তারপরই হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা হয় #RFL ফায়ার বল। অথচ ‘আরএফএল ফায়ার বল’ নামে কোন ফায়ার বলই নেই। যে ফায়ার বলটির ছবি দেখানো হয়েছে তার নাম ‘এক্সপার্ট’, যা আরএফএল গ্রুপের একটি ব্র্যান্ড।

পোস্টে আরও লেখা হয়, ‘কার্যকারিতা দেখার জন্যে পরীক্ষামূলকভাবে ফায়ার বলটি আগুনে ছুঁড়ে ফেলার পর দশ মিনিট পার হলেও সেটা ফাটেনি’। কিন্তু পোস্টে দেয়া ছবিগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বলটির বেশিরভাগ অংশই আগুনে পোড়েনি। দশ মিনিট আগুনে থাকলে যে কোন প্লাস্টিক আগুনে পুড়ে যাবে। যেহেতু ফায়ার বলের কভাবের অংশ প্লাস্টিকের তৈরি, সেহেতু এটা ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যেই পুড়ে যাওয়ার কথা, অথচ কভারটি প্রায় অক্ষত আছে। এমনকি শুধু একটু অংশ পুড়িয়ে ব্র্যান্ড এর লোগো যে অংশে তা অক্ষত দেখানো হয়েছে। সুতারং বোঝাই যায় এই পোস্ট উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দেয়া হয়েছে।

পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আগুন থেকে বলটি হাতে নিয়ে দেখি, বলের ভিতর থাকা co2 পাউডার গুলো দেখা যাচ্ছে’। অথচ এটা প্রাথমিক জ্ঞান যে co2 হল এক ধরনের গ্যাস। যেটা কোন ফায়ার বলেই থাকে না। ফায়ার বলের উপাদান হল ‘এবিসি পাউডার’। এছাড়া এ পাউডার আগুনে পুড়লেই রঙ বদলে কালো হয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে পোস্টদাতার আঙ্গুলে সাদা পাউডার লেগে আছে। এ বিষয়গুলো থেকে পোস্টটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দেয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

ফলে, সমাজের সচেতন মানুষদের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে যে, কারও ব্যবসায়ীক ক্ষতি সাধন বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে এ ধরনের অপপ্রচার কতটুকু নৈতিক? আর যারা সাধারণ মানুষকে এভাবে বিভ্রান্ত করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তাদের কি আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় না?

সাধারণত উন্নত ও ভালো মানের ফায়ার বল এক্সটিংগুইশার আগুনে ছুঁড়ে মারলে তা ৮ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়ে গড়ে ১০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

বিডি২৪লাইভ/এমএম/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: