অসভ্য থামার পর নুসরাতকে লড়তে হয়েছে সহপাঠীদের সঙ্গেও!
খান হৃদয়: টানা ১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিল নুসরাত। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে গেছেন তিনি। বিশ্রাম নেন নি একটি মুহূর্তও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি ১৮ বছর বয়সী তরুণী নুসরাত জাহান রাফি। আর তাই হার মেনে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
নুসরাতের যে শুধু মাদ্রাসা অধ্যক্ষ অসভ্য সিরাজ উদ দৌলার লালসাময় নিকৃষ্ট ভয়াল থামার সাথে নড়তে হয়েছে বিষয়টা আসলে তা নয়। নিহত নুসরাতকে নড়তে হয়েছে খোদ তার সহপাঠীদের সঙ্গেও। ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আটকের পর তার মুক্তি চেয়ে আন্দোলনও করেছে কিছু শিক্ষার্থী। যার মধ্যে ছিল নুসরাতের কয়েকজন সহপাঠী। আর এ বিষয়টি খুব কষ্ট দিয়েছিল নুসরাতকে।
নুসরাত ভেবেছিলেন আরও কেউ তাকে না বুঝলেও তার সহপাঠী, যারা তার দীর্ঘদিনের পড়ার সাথী ছিল তারা অন্তত বুঝবে তাকে। কিন্তু নুসরাত যখন দেখে না তার ভাবনা ভুল ছিল। তখন প্রচণ্ড রকমের মানসিক আঘাত পান তিনি।
এ কারণে মৃত্যুর আগে সহপাঠীদের উপর ক্ষোভের কথা লিখেও গিয়েছে নুসরাত। নুসরাত তার খাতায় লিখে গেছেন, ‘তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাস, তোরা জানিস না ওইদিন ক্লাসে কী হইছে, উনি আমার কোন জায়গায় হাত দিয়েছে, আর কোন জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে।’
গত ২৬ মার্চ মাদ্রাসায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটির বর্ণনা তার (নুসরাত) খাতায় লিখেছেন দুই পৃষ্ঠাজুড়ে। তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে শিক্ষক সিরাজ উদ-দৌলার কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হতেন।
তিনি লিখেছেন, ‘উনি (সিরাজ উদ দৌলা) আমাকে বলছে, নুসরাত ঢং করিস না। তুই প্রেম করিস না, ছেলেদের সাথে প্রেম করতে ভাল লাগে? ওরা তোরে কী দিতে পারবে, আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেব।’
প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার নির্দেশ দিলেও শারীরিক অবস্থার কারণে তা সম্ভব হয়নি। শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাতের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তবে ফুসফুস সচল রাখার জন্য লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গত মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচার করা হয়।
গত শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। সেখানে মাদ্রাসার এক ছাত্রী তাকে জানান, তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কে বা কারা মারধর করেছে। এ কথা শুনে রাফি ওই ভবনের চারতলায় ছুটে যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে গত ২৬ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ‘শ্লীলতাহানির’ অভিযোগ এনে সোনাগাজী থানায় একটি মামলা করে নুসরাতের পরিবার। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের অনুসারীরা গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: