নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন যিনি 

প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১১:২৯ পিএম

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার নির্দেশে নুর উদ্দিনের পরিকল্পনায় পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। জবানবন্দিতে এ কথা জানিয়েছে নুর উদ্দিন।

আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) পিবিআই সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় ৬ জন উপস্থিত ছিল। আর পুরো ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৩ জন বলেও জানান তিনি।

এছাড়া নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি জাবেদ খানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতের করা মামলায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তখন জেলে। সেসময় মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন মহলের চাপ থাকলেও সেটা উপেক্ষা করেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ভালো মতো প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নুসরাত।

অন্যদিকে, নুসরাতকে পৃথিবীতে থেকে চির তরে সরিয়ে দেওয়ার নৃশংস আয়োজন চলছিল।

নুসরাতের ওপর অগ্নি হামলার পর থেকেই কয়েকটি নাম সামনে চলে আসে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন- অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, কাউন্সিলর মকসুদ আলম।

এ ঘটনায় গাফিলতি থাকায় ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করে মামলার দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে।

পিবিআই তদন্তভার পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৪ দিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান জানান, নুর উদ্দিন সহ ১৩ জন জড়িত
ছিল বর্বরোচিত আগুন হামলার এ ঘটনায়।

এ বিষয়ে পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, এ ঘটনায় আমরা এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছি। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মামলা করাই কাল হয়েছিল আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির জন্য। এরপরেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা হয়। নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত শাহাদাত হোসেন শামিম, হাফেজ কাদের এবং নুর উদ্দিন সহ ৫ জন মিলে পরিকল্পনা করে হত্যার। আর জেলে বসে তাদের নির্দেশ দেয় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা।

বর্বরোচিত আগুন হামলা দিন আগে থেকেই বোরকা পরে ছাদে অপেক্ষা করছিল খুনিরা। নুসরাতের সহপাঠী শম্পা তাকে ডেকে ছাদে নিয়ে যায়।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আরও জানান, নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচজন এবং ঘটনার ক্রমে জড়িয়ে যাওয়া আরও একজন এ ঘটনা ঘটিয়ে ভিড়ের মাঝে মিশে পালিয়ে যায়।

পুরো ঘটনাটির সঙ্গে ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বোরকা পরা চারজনের মধ্যে ছেলেও ছিল। হাফেজ কাদের, নুর উদ্দিন সহ তিনজন গেট পাহারার দায়িত্বে ছিল।

জানা গেছে, নুসরাত হত্যার সঙ্গে জড়িত যে নামগুলো পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে মেয়ে জড়িত আছে বলেও জানান বনজ কুমার মজুমদার।

পিবিআই প্রধান জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আলোচিত (ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা) এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল তারিখে সকাল বেলা সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাত জাহান রাফিকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে বলা হয়। এ সময় নুসরাত মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে মুখোশ পরা লোকজন তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

পরে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাত মারা যান।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: