বাগদাদে জিম্মি থাকা বাংলাদেশিদের আর্তনাদ
ইরাকের রাজধানী বাগদাদের উদ্দেশে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাড়ি জমানো প্রায় দেড় শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক সাড়ে ৩ মাস ধরেই একটি দোতলা ভবনে বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে সময়ের মধ্যে তাদের ঠিকমতো দেয়া হচ্ছে না দৈনন্দিন খাবার। যদিও সময়ে অসময়ে একবার খাবার দেয়া হচ্ছে সেগুলো খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত ইরাকে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তাদের উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, এমনকি তাদের খোঁজও নেননি বলে অভিযোগ করেছেন আটক শ্রমিকেরা। এখন যেকোনো উপায়ে তাদের উদ্ধারের আকুতি ও সবার পাসপোর্ট ফেরতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, বাংলাদেশীরা জাল আকামা নিয়ে বাগদাদের একটি ভবনে অবস্থান করছেন এমন সংবাদে ইরাকি পুলিশ ওই সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক জাল আকামা লাগানো পার্সপোট জব্দ করেছে। এ সময় ওই বাড়ি থেকে শ্রমিকদের আটক করতে পারেনি বলেও জানা গেছে। তবে এখন পাসপোর্ট ছাড়া বের হলেই তাদের পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হবে। এ অবস্থায় দালালচক্র তাদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি দিতে স্বজনদের কাছে টেলিফোন করে লাখ লাখ টাকা দাবি করছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্দী থাকা বাংলাদেশিদের দাবি যারা তাদের এমনভাবে ফাঁদে পড়েছেন দায়ীদের দালালদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
মঙ্গবার (১৬ এপ্রিল) ইরাকের রাজধানী বাগদাদের কেরাদা কারমনি মেক্সিমল এলাকার একটি বাড়িতে বন্দী আকতার হোসেন নামে এক ব্যক্তি টেলিফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের দেল্লায়। একটি রুমে আমিসহ ১৪ জন বন্দী আছি। অন্য রুমে আরো অনেকেই বন্দী আছে। সবমিলিয়ে ১৬৫ জনের মতো আছি। তিনি বলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সকাল ১০টার ফ্লাইটে আমরা বাগদাদে এসেছি। এরপর থেকে অদ্যবাধি বাগদাদের এই দোতলা বাড়িতেই বন্দী অবস্থায় আছি। দালালরা আমাদের ঠিকমতো খাবার দিচ্ছে না। বাইরের আলো বাতাসও দেখতে দিচ্ছে না। আর যে খাবার দিচ্ছে সেটি আমরা খেতে পারছি না। আকতার বলেন, আগে টাকা আনার জন্য মারধর করত। এখন মারধর করে না। তবে বাড়ি থেকে দুই আড়াই লাখ করে টাকা দিতে বলে। তার মতে, আমরা যদি এই ভবনের ছাদে উঠতে যাই সাথে সাথে গালাগালি করে নামিয়ে দেয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে এই বাড়িতেই ইরাকি পুলিশ অভিযান চালায়। এর আগেই দালালরা আমাগো অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়। পরে পুলিশ আমাগো বাড়ি থেকে সবার পাসপোর্ট নিয়ে যায়। আকতারের অভিযোগ, আমাদের পাসপোর্টে যে আকামা লাগানো ছিল পুলিশ বলছে সেগুলো অভিযানকালে জাল। তখন এই বাড়ি থেকে এক ইরাকি নাগরিককে পুলিশ আটক করে। শুনছি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করছে ইরাকি পুলিশ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, ঢাকার ভাটারা এলাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে পাঠানো ১৩ জন কর্মী বর্তমানে ওই বাড়িতে বন্দী হয়ে আছেন। তারা হচ্ছেন- মিলন হোসেন, সুমন হাওলাদার, পিপুল মিয়া, জামাল হোসেন, শাহজাহান মিয়া, সুজন মিয়া, আসাদ উল্লাহ, ফজলু হোসেন, আশেক মিয়া, অঞ্জন, মনির হোসেন লাবলু মিয়া শাউল। অপরদিকে নাজ অ্যাসোসিয়েটসের একজন শ্রমিক রয়েছেন। তার নাম আকতার হোসেন।
ভাটারা এলাকার বায়রার সদস্য ও ‘ক’ অদ্যাক্ষরের রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে পাড়ি জমানো শ্রমিক সুজন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এখানে অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমাদের বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের পরের দিন এই বাড়িতে এনে বন্দী করে রাখে ইরাকি নাগরিক বাবা ইয়াদ ও তার দোসর বাংলাদেশী তিন দালাল সোহাগ, মতিয়ার ও মোতালেব। তাদের মূল দালাল হচ্ছে মতিন। তাকে ইরাকে সবাই ‘মতিন ভাই’ নামে ডাকে। এরাই ১৬০-১৬৫ জনকে আটক করে রেখেছে সাড়ে ৩ মাস ধরে। এখানে আনার পর তারা আমাদের বলেছিল, আমাদের চাকরি দেবে। দেই দিচ্ছি করে কতদিন চলে গেল। বাড়িতে মা-বাবা কান্নাকাটি করছে। এখন দালালরা চাকরি না দিয়ে আবার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা করে এনে দিতে বলছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাগো কারো পাসপোর্ট নাই। শুনছি পুরো বাগদাদের মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসেছে। ঘর থেকে বের হলেই পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হবে। দাবি আগে তাদের সবার পাসপোর্ট দেয়া হোক। পাসপোর্ট পেলে আমরা নিজেরাই চাকরি খুঁজে নেব। তিনি বলেন, আমাদের পাসপোর্টে যে আকামা দালালরা লাগিয়ে দিয়েছিল সেগুলোর সবই জাল। দূতাবাস থেকে কেউ যোগাযোগ করেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। আর আমরাও যোগাযোগ করিনি। দালালরা বলেছে ‘দূতাবাসের সব লোক তাগো’। শুধু ১৬৫ জন নয়, এমন অনেক স্থানে বাংলাদেশীদের এনে জিম্মি করে রাখা হয়েছে।
এঘটনায় ‘ক’ অদ্যাক্ষরের রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে বনানীর অপর এজেন্সি থেকে পাঠানো অফিসের ম্যানেজার টুটুল এ প্রসঙ্গে বলেন, সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে তাদের অফিস থেকে ইরাকে লোক গিয়েছিল। ওই মুহূর্তে ইরাক থেকে সুজন ও আখতার টেলিফোন দিলে তখন তাদের অভিযোগগুলো তাকে শোনানো হয়। কিছুক্ষণ বক্তব্য শোনার এক পর্যায়ে টুটুল মোবাইল বন্ধ করে দেন। এরপর তার সাথে আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সবিচ রৌনক জাহান এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হযনি। পরে ব্যুরোর একজন পরিচালক এ বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি এজেন্সির লাইসেন্স ব্লক করা হয়েছে।
এর আগে ইরাকে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) রেজাউল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, পুরো বিষয়টি দূতাবাস অবহিত রয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দুষ্ট চক্রের কারণে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া হবে না।
বিডি২৪লাইভ/এসএএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: