‘নুসরাতকে ছাদে নিয়ে হাত বাঁধে অধ্যক্ষের ভাগনি শম্পা’

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৩৮ পিএম

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে গত ৬ এপ্রিল জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত মা-বাবার আর্তি, সতীর্থসহ সকলের প্রার্থনা আর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ৫ দিন একটানা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান।

এদিকে, আগুনে পুড়িয়ে নুসরাতকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার ভাগনি (শ্যালিকার মেয়ে) উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো: ইকবাল বলেন, ‘নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে যে দুজন নারী সদস্য জড়িত ছিল তাদের মধ্যে উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পা একজন। সে জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বলেন, তাকে সে নিচ থেকে ডেকে নেয় ও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পা ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।’

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সময় পপি ও মনি হাত বাঁধে জাবেদ ও যোবায়ের কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। পরে তারা পরীক্ষার হলে গিয়ে অবস্থান করে। এবং নুর উদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদের তাদের নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছে।

এর আগে, গত ৯ এপ্রিল শম্পা সন্দেহে সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে উম্মে সুলতানা পপিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে একই মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষার্থী।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো: শাহ আলম বলেন, ‘আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের জবানবন্দি আদালত রেকর্ড করেছে। এদের সবাই আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।’

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জাকির হোসাইনের আদালতে গত ১৪ এপ্রিল রাতে নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামিম।

এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে আবদুর রহিম ও শরীফ, এবং গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় একই আদালতে হাফেজ আবদুল কাদের নুসরাত হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পুলিশ ও পিবিআই এখন পর্যন্ত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে।

তারা হলেন- অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, নুরাতের সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, নুর হোসেন, শাহিদুল ইসলাম, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো: শামীম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জান্নাতুল আফরোজ মনি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের হোসেন, শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফ এবং সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন হয়রানী করে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নির্দেশে নুসরাতকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে উপস্থিত হয় নুসরাত জাহান রাফি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত।

বিডি২৪লাইভ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: