গর্ভে সন্তান নিয়েই নুসরাতকে হত্যা করে মণি!

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৪১ পিএম

শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেলো না নুসরাত জাহান রাফিকে। মা-বাবার আর্তি, সতীর্থসহ সকলের প্রার্থনা আর চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে পাঁচদিন একটানা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।

নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে দেশের জনগণ। সর্বত্র উঠেছে বিচারের দাবি।

নুসরাত হত্যা মামলায় কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয়া মণি সব অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে তিনি তার গর্ভে সন্তানের বয়স পাঁচ মাস বলে জানিয়েছেন। ২০ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

গর্ভে সন্তান ধারণ করে এরকম একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়ানোয় ফেনীতে সকল মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ফেনীর ফরিদা ইয়াছমিন নামে এক নারীকর্মী বলেন, কামরুন নাহার মণির পেটে যে সন্তান সে সন্তান নিজ থেকে দুনিয়াতে আসতে চায়নি। যে মা তাকে দুনিয়াতে আনতে চেয়েছেন; সে মা কীভাবে এমন কাজ করতে পারে? এ সন্তানের কী অপরাধ ছিল? তাকে কেন জন্মের আগে জেল খাটতে হচ্ছে।

বিথী রানী নামে এক শিক্ষিকা বলেন, কামরুন নাহার মা হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ মা। প্রত্যেক নারী একসময় মা শব্দ শোনার প্রতীক্ষায় থাকে। গর্ভে সন্তান আসলে প্রত্যেক মা সব সময় ভালো কাজে লিপ্ত থাকে। কামরুন নাহার মণি মা-তো দূরের কথা মানুষের মধ্যে পড়ে না। গর্ভে সন্তান নিয়ে নৃশংসভাবে আরেকজন মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সে নারী নামে কলংক।

২০ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে কড়া নিরাত্তার মধ্য দিয়ে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরাফ উদ্দিন আহম্মদের আদালতে মণিকে হাজির করে করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় ছয় ঘন্টাব্যাপী জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ১০টার দিকে তাদের জবানবন্দির ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পুলিশ ব্যু রো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর চট্টগ্রাম বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার মো. ইকবাল।

তিনি বলেন, নুসরাত জাহান রাফি হত্যার কিলিং মিশিনে সরাসরি জড়িত ছিলো কামরুন নাহার। নুসরাতের বুকসহ শরীর চেপে ধরেন। বোরকা ব্যবস্থাও করে দেন তিনি। উম্মে সুলতানা নুসরাতের পায়ে বেঁধে চলে যাওয়ার সময় মণি তাকে শম্পা বলে ডাকে। এই শম্পা দেয়া নামটি পপি ও মণির দেয়া নাম। এই কিলিং মিশনে আর কোনো ছদ্মনাম ব্যবহার হয়নি। মণি আরও জানিয়েছে বর্তমানে তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

তিনি আরো বলেন, কয়েক ঘন্টাব্যাপী এ স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনন্দিতে মণি হত্যাঃকাণ্ডের ব্যা পারে আরও চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্যয় দিয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তা উল্লেখ করেনি এই কর্মকর্তা।

কামরুন নাহার মণিকে ১৫ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ এপ্রিল একই আদালতে তাকে ৫ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়। শুক্রবার মণিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায় পিবিআই। সে সময় মণি কিভাবে নুসরাতকে হত্যা করা হয়েছে তার বর্ণনা দেন। তার দেয়া তথ্য মতে পিবিআই বোরকা দোকান পরিদর্শন করেন।

গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার দিন সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয় পাঁচজন। তারা হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের হোসেন, জাবেদ হোসেন, কামরুন নাহার মণি ও উম্মে সুলতানা পপি।

এ পর্যন্ত ৮জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তারা হলেন শাহাদাত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন, আবদুর রহীম শরিফ, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, সাফুর রহমান জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ও কামরুন নাহার মণি।

প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্রে গেলে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে পালিয়ে যায় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা যৌন হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় তারা।

পরে আগুনে ঝলসে যাওয়া নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে এবং পরে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার চিকিৎসায় গঠিত হয় ৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নুসরাতকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোরও পরামর্শ দেন তিনি। কিন্তু সবার প্রার্থনা-চেষ্টাকে বিফল করে বুধবার (১০ এপ্রিল) রাতে মারা যায় ‘প্রতিবাদী’ নুসরাত।

বিডি২৪লাইভ/এআইআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: