ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হল শবে বরাত

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০১৯, ১২:১০ পিএম

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জ সদরসহ জেলার ১৩ উপজেলায় পালিত হল সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত।

২১ শে এপ্রিল (রোববার) সন্ধ্যায় মাগরিব’র নামাজের পরপরই কিশোরগঞ্জ জেলার মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। শুরু হয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগি। সৃষ্টিকর্তার রহমত পাওয়ার আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়।

পবিত্র লাইলাতুল বরাত রাতে শহরের কেন্দীয় ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদ, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ ও বায়তুল মাকছুদ জামে মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ গুলোতে রাতভর নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন হয়েছে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিশোরগঞ্জের নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্থরের মুসলিম সমপ্রদায় কোরআন তেলাওয়াত ও নফল নামাজ আদায় করেছেন। বাসা-বাড়িতেও রাতভর চলে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি। মহিমান্বিত আজকের রজনীতে মসজিদে মসজিদে দেখা গেছে মুসল্লিদের ভিড়। সেই সাথে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

মহিমান্বিত এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনা করে মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

রোজা রাখা ও নফল নামাজ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। 

এদিকে, কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো: মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) বলেন, লাইলাতুল বরাতের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জে বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকাবাজি ও অন্যান্য ক্ষতিকারক দ্রব্য বহন এবং ফোটানো নিষিদ্ধ এবং শহরের সকল মসজিদে যাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শান্তি পূর্ণ ভাবে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে সে জন্য নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যাবস্থা।

প্রসঙ্গত, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতই আমাদের কাছে ‘শবেবরাত’ হিসেবে পরিচিত। বিশ্বব্যাপী মুসলিম সমপ্রদায়ের নিকট মহিমান্বিত এ রজনীকে আরবিতে বলে পবিত্র লাইলাতুল বরাত। আর ফারসীতে পবিত্র শবে বরাত, বাংলায় যার অর্থ সৌভাগ্যের রজনী। মহান আল্লাহ তায়ালা এ রাতে বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।

লাইলাতুল বরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে বেশকিছু হাদিসের বর্ণনা প্রচলিত আছে। একটি সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।

আটজন সাহাবীর সূত্রে বিভিন্ন সনদে এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন ঐতিহাসিক শহীদী মসজিদের খতীব ও আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদ্রাসার মহা-পরিচালক আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ্। দেড় ঘন্টার বয়ান ও ১ ঘন্টার মোনাজাতে তখন মসজিদের ভিতরে, বাইরে আমিন আমিন ধর্নিতে মূখর হয়ে পড়ে। তখন মনে হচ্ছিলো যে কান্নার সাগর ভেশে যাচ্ছে। ছোট, বড়সহ সব বয়সের মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালা কাছে ক্ষমা পার্থনা করেন।

আযহার আলী আনোয়ার শাহ্ সংক্ষিপ্ত বয়ানে তিনি বলেন, হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন,‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শা’বানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরিক ও মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ সুতরাং মধ্য শা’বানের রাত বা শবে বরাত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ক্ষমার এক বিশেষ সুযোগ এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের সমাজের এক শ্রেণির মানুষ অজ্ঞাতাবশত এ রাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে একে ‘ভাগ্য রজনী’ মনে করেন যা সম্পূর্ণ হাস্যকর। এ রাতে হায়াত, মওত, রিজিক ইত্যাদি নির্ধারণ করা হয় এ ধারণা কোরআন হাদিসের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চই আমি একে (পবিত্র কোরআন) এক মুবারক রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, আমি তো সতর্ককারী। এ রাতেই প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।
 
তিনি আরো বলেন, উল্লিখিত হাদিসে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মধ্য শা’বানের রাতে ক্ষমা পাওয়ার জন্য শর্ত হলো অন্তরকে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে খলি করা। কেউ যদি সারারাত নফল নামাজ পড়ে কিন্তু তার অন্তরকে এ দু জিনিস থেকে মুক্ত না করে তাহলে সে ক্ষমার অন্তর্ভূক্ত হবে না। আবার কেউ যদি এ রাতে কোনো নফল নামাজ নাও পড়ে, কিন্তু তার অন্তরকে শিরক ও হিংসা বিদ্বেষ থেকে মুক্ত করে তাহলে হাদিস অনুযায়ী তার ক্ষমা পাওয়ার আশা আছে। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কাওকে শরিক করা। আর শবেবরাতের হাদিসে সেই শিরকের সঙ্গেই হিংসা-বিদ্বেষকে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আল্লাহ তাআলার দরবার থেকে ক্ষমা পেতে হলে প্রতিটি মুসলমানের উচিত তার অন্তরকে শিরকমুক্ত করা এবং তার আত্মীয়-স্বজন, ভাইবোন, প্রতিবেশী কিংবা যে কারও প্রতি অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ বা অমঙ্গল কামনা থাকলে তা থেকে অন্তরকে মুক্ত করা। সেই ভাইয়ের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা। সব ধরণের শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হোক আমাদের অন্তর। আল্লাহ যেন আমাদেরকেও ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন..আমিন।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: