‘সব জিনিসের দাম বেশি শুধু ধানের দাম কম’
কুমিল্লায় সর্বত্র চলছে বোরো ধান কাটার মহোৎসব। কৃষকের সোনার এই ধান ঘরে তুলতে কৃষাণ-কৃষাণির কারও যেন একটুও ক্লান্তির ফুসরত নেই। চারদিকে এখন ধান কেটে ঘরে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে।
আকাশে ঝড়ের ঘনঘটা দেখলেই কৃষক তাড়াতাড়ি সোনার এই ধান হই হুল্লোড় করে ঘরে তুলতে ব্যাকুল। দীর্ঘ দিনের এই পরিশ্রমের ফসল বোরো ধান সংরক্ষণ করে ঘরে তুলতে কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এনেছেন। আবার অনেকেই এলাকার শ্রমিক নিয়ে এই ধান কাটার মহা উৎসবে ব্যস্ত রয়েছেন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষাণ-কৃষাণিরা তাদের ছেলে-মেয়ে এবং অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে নিজ নিজ জমির বোরো ধান কাটছে। কেউ আবার মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে খড় থেকে ধান ছাড়াচ্ছেন। কোথাও কোথাও কৃষাণিরা সংঘবদ্ধ হয়ে ধান সিদ্ধ করছেন। কোথাও আবার দেখা যায় বাড়ির উঠানে এবং আঙ্গিনায় অস্থায়ী উঠান করে রোদে ধান শুকাচ্ছেন।
এত প্রতিযোগিতা এবং আনন্দ- উৎসাহের মধ্য দিয়ে বোরো ধান ঘরে তুললেও হাসি নেই কৃষাণ-কৃষাণির মুখে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত ধানের দাম নিয়ে হতাশ কৃষক। তার কারণ বাজরে ধানের মূল্য কম। যা কৃষকের ব্যয়ের চেয়েও অনেক কম।
এ ব্যাপারে কৃষকরা বলছেন, ধান লাগানো ও কাটার সময় একজন কৃষি শ্রমিকের ২ দিনের বেতন দিতে হচ্ছে ১২শ থেকে ১৪শ টাকা। তার উপর সার-সেচ খরচ যোগ করলে ধানের বাজার দরের সাথে কোন ভাবেই হিসাব মিলাতে পারছেনা তারা।
দুলালপুর গ্রামের কৃষক শানু মিয়া জানান, সব জিনিসের দাম বেশি শুধু ধানের দাম কম। এই দাম থাকলে আগামীতে ধান উৎপাদন করবেন কি না, তা নিয়ে ভাবছেন তিনি।
কৃষক আবদুর রহিম অপু জানান, ধানের দাম না বাড়ালে কৃষক মারা যাবে এবং ধানের উৎপাদন খরচ ও বিক্রি মূল্যের মধ্যে ব্যাপক তফাৎ।
এছাড়া কৃষক ইসমাইল, কলিম উদ্দিন, দুলাল মিয়া, জদু মিয়া, শাহাবুদ্দিনসহ আরও অনেকে সরকারকে ধানের ন্যায্য মূল্য দিয়ে কৃষককে বাঁচাতে আহবান জানিয়েছেন।
ধান সংরক্ষণ করে ঘরে তোলার ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মতিউল আলম বলেন, যেসব কৃষকের ধান পাকা এবং কাটার উপযোগী হয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে দ্রুত ধান কেটে ফেলাই উত্তম। এতে ফলনের সঠিক পরিমাণ ঠিক থাকবে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কৃষক দেরি করে ধান কাটার চিন্তা করছেন, তাদের উচিত হবে নির্দিষ্ট সময়ে ধান কেটে ফেলা। তা না হলে বৃষ্টিপাতে ধান ঝরে পড়ে যাবে এবং যে পরিমাণে সে ধান পাওয়ার কথা তার থেকে কম পাবে।
ধানের বাজারদর নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বর্তমানে কৃষককে ধান শুকিয়ে গোলা বা গোডাউনে মজুত করে রেখে দিতে হবে এবং যখন ধানের বাজার মূল্য বাড়বে তখনি তা বিক্রয় করতে হবে। কারণ বর্তমান বাজারে এক মন ধানের মূল্য একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিকের সমান। তাই ধান রোপণ, সার, সেচ এবং কাটার যে খরচ তা বর্তমানে ধানের মূল্যের চাইতে দ্বিগুণ। এই রকম পরিস্থিতিতে সরকারি ভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কৃষক আগামী বোরো মৌসুমে হয়তো ধান চাষ না করে অন্য ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে পারে।
এছাড়াও তিনি আরো জানান, এই বছর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ৮৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় জাতের পাশাপশি ব্রিধান- ২৮, ৫৮, ৬৯ এবং ৭৪ জাত এই উপজেলায় বেশি চাষ হয়েছে। পাশাপশি সর্বশেষ ব্রিধান ৮১, ৮৪ ও ৮৯ জাতগুলোও মাঠে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। জাতভেদে ফলনের ভিন্নতা রয়েছে। যদিও চলিত বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি হালকা ঝড়-বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। এতে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষেত্র বিশেষে বৃষ্টির পানিতে উৎপাদন বেড়েছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমেছে। তবে ফলন সন্তোষজনক, গড়ে হেক্টর প্রতি ৫.৫ টন ফলন পাওয়া গেছে। সমৃদ্ধ এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ব্রিধান-৮৪ জাতটি জিংক ও আয়রন সমৃদ্ধ জাত। ভবিষ্যতে নতুন ব্রিধান ৮১, ৮৪, ৮৬ এবং ৮৯ জাতগুলো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বিডি২৪লাইভ/এআইআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: