ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচিতে বিএনপির অনীহা 

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০১ এএম

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনৈক্য স্পষ্ট হচ্ছে। সরকারবিরোধী জনমত গড়ে তুলতে গণসংযোগ কর্মসূচিতে দলটি যেতে চাইলেও, যেতে চান না বিএনপির নেতারা। অবশ্য বিএনপি নেতাদের অনীহার কারণেই আন্দোলনের সময়সূচী নির্ধারণ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঐক্যফ্রন্টে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচি থাকলেও তা কেবল বিএনপির অনীহার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানায় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের কথা জানানো হয়।

ঐক্যফ্রন্টের সূত্রে জানা যায়, নিজ চেম্বারে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের এক শরিক দলের শীর্ষনেতা আলাপকালে বিএনপির আচরণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জনসম্পৃক্ত বহু ইস্যু থাকার পরও ঐক্যফ্রন্ট কেন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। জবাবে ড. কামাল বলেন, এ বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানা খুবই জরুরি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ডাকলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া আর কেউ আসেন না।

বিএনপির মনোভাব জানার জন্য দু-একদিনের মধ্যে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে জোটটি মাঠে নামতে পারবে কিনা। এতে বিএনপির সাড়া না পেলে ঐক্যফ্রন্টের বাকি চার দল গণফোরাম, জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ ও নাগরিক ঐক্য মিলে জোটের ব্যানারে ছোট আকারে হলেও মাঠে কর্মসূচি পালনে একমত দলগুলোর শীর্ষনেতারা।

এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি ও তাদের মিত্র ঐক্যফ্রন্টে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং অস্থিরতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ায় বিএনপির ভেতরেই বইছে ঝড়। শপথগ্রহণ নিয়ে গণফোরামেও প্রকাশ্যে কোন্দল দেখা দিয়েছে। গত শুক্রবার দীর্ঘ ৮ বছর পর দলটির কেন্দ্রীয় বিশেষ কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া মোকাব্বির খানের উপস্থিতি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে নেতাদের অনেকে কাউন্সিলস্থল ত্যাগ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতারা বলেন, সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথের পেছনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ‘নীরব ইশারা’ কাজ করেছে বলে অভিযোগ তাদের। তার মতের বাইরে এ দুজন শপথ নেননি। বিষয়টি নিয়ে ড. কামালের আচরণ পছন্দ হয়নি বিএনপি নেতাদের। একই কারণে গতকাল বিএনপির ৪ সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিক দলের নেতারাও বিএনপির ওপর এক হাত নিয়েছেন। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলছে না বিএনপি। তবুও এ বিষয়ে তৃণমূল থেকে সমলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতারা মনে করেন, জোটের প্রধান দল বিএনপিতে সংকট এখন বেশি। কারণ তাদের সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়ে দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। এ জন্য দলের একে অপরকে দোষারোপ করছেন। কারও কারও মতে, দলটির নীতিনির্ধারকরা আগে থেকে সক্রিয় হলে শপথের বিষয়টি ভালোভাবে সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু কারও মধ্যে আগে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির কয়েকজন নেতা ঐক্যফ্রন্টের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি সামনে আনেন। বিষয়টি এখন রীতিমতো রূপ নিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট ভাঙার উসকানিতে। ঐক্যফ্রন্ট বিএনপির ব্যর্থতা থেকে অনেক শিক্ষা গ্রহণ করেছে। অতিরিক্ত সহনশীলতা যে উদ্ভাবনী ও প্রতিবাদের ক্ষমতা বিনষ্ট করে দেয়, তার যথার্থ প্রমাণ দেয় বিএনপির বিগত এক দশকের ব্যর্থ রাজনীতি।

বিডি২৪লাইভ/এসএএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: