সুশীলদের চোখে বিএনপির শপথ

প্রকাশিত: ০১ মে ২০১৯, ০৪:৪৯ পিএম

শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সংসদে যোগ দিয়েছে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। দলীয় সিদ্ধান্তেই ফখরুল বাদে এদিন চারজন এমপি শপথ গ্রহণ করেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এর আগে দলটির আরেকজন এমপি শপথ নিয়েছিলেন। সোমবার বিএনপির পাঁচজন এমপিই সংসদে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেন। বিএনপির এমপিদের সংসদে যোগ দেওয়ার এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক সুবিধার পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপির এমপিদের সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। কারণ দুই দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) মধ্যে যে মারমার কাটকাট অবস্থা ছিল, সেখান থেকে সরে এসে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আসবে। তবে আলাদাভাবে না গিয়ে সবাই একসঙ্গে সংসদে গেলে ভালো হতো। তাদের দাবি-দাওয়ার যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ হতো।

তারপরও বিএনপি সংসদে গেছে এটা অবশ্যই ইতিবাচক। এটা সরকারের পক্ষে ভালো ব্যাপার। তারাও ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। রাজনীতিতে এ ধরনের পারস্পরিক সমঝোতা, সম্পর্ক বজায় রেখে একসঙ্গে চলা প্রয়োজনীয়, তাই সংসদে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক।

সংসদে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির লাভ-ক্ষতি প্রসঙ্গে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে বিএনপি মাত্র ছয়টি আসন পেয়েছে, এটা নিয়ে মস্তবড় প্রশ্নের ব্যাপার আছে। তারপরও সংসদে গিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে কিছুটা বোঝাপড়া করতে পারবে- এটা তাদের জন্য ইতিবাচকই হবে বলে মনে করি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিএনপির এমপিদের যেহেতু জনগণ নির্বাচিত করেছেন, সেহেতু তাদের প্রতি সম্মান দেখাতেই হবে। সে হিসেবে তাদের সংসদে যোগ দেওয়াটাই উচিত হয়েছে। যোগ না দিলে জনগণকে উপেক্ষা করা হতো।

তিনি বলেন, পার্লামেন্ট তো কোনো দলের না। তাই বিএনপি যেহেতু অভিযোগ করছে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাদের এ বক্তব্যটা এখন পার্লামেন্টে গিয়ে বলতে পারবে। সংখ্যায় কম হলেও তারা যা বলবে সেটাই পত্র-পত্রিকায় প্রাধান্য দিয়ে ছাপানো হবে। আর বিএনপি যদি সংসদে না যেত তাহলে কী লাভ হতো? এর আগেও তো তারা নির্বাচন বয়কট করেছিল, এতে কী লাভ হয়েছে? তাই এবার তাদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ভালো খবর। রাজনীতি নিয়ে মাঠের চেয়ে পার্লামেন্টে যত বেশি আলোচনা হবে, ততই ভালো। এতে দেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ারই সম্ভাবনা আছে। তাই বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়টি এখন পর্যন্ত ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি।

তবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখওয়াত হোসেন বলেন, বিএনপির ছয়জন এমপি শপথ নিল কি নিল না তা দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে বলে আমি করে করি না। গণতন্ত্রের জন্য মৌলিক বিষয়গুলো বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনো ঠিক বা শক্তিশালী করা হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানে এখনও অনেক ঘাটতি আছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন আছে, যেসব প্রশ্নের এখনও কোনো সমাধান হয়নি। তাই বিএনপি সংসদে যোগ দেওয়ার মধ্যদিয়ে যে বিরাট সিগনিফিকেন্ট চেঞ্জ আসছে, এটা আমি মনে করি না।

তবে পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা আগামী ২ থেকে ৩ মাস পর বোঝা যাবে। কারণ বিএনপিকে কতটুকু কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে বা কথাগুলোকে সরকার কতটুকু গুরুত্ব দেবে, এগুলো দেখার জন্য আরও দুই তিন মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে রাজনীতিতে যে ধারা চলছে, তাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে বলে আমি মনে করি না।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ/টিএএফ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: