টাইটানিকের অজানা কিছু রহস্য !

প্রকাশিত: ০১ জানুয়ারি ২০১৫, ০৫:৫৬ এএম

আদনান বিন ফয়সল:

হাভার্ডের ইতিহাসবিদ স্টিভেন বেলের ভাষায় টাইটানকিরে জাহাজডুবি নিয়ে যত লেখা ছাপা হয়েছে হয়তো শুধু যিশু এবং গৃহযুদ্ধ নিয়েই কেবল এর চেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে। মাত্র এক খণ্ড বরফের সাথে ধাক্কা খেয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজটি ডুবে যায় এবং এর ফলে ১ হাজার ৫২২ জন যাত্রীর মৃত্যু ঘটে। এরপর জাহাজটিকে নিয়ে এ পর্যন্ত দুই শতাধিক বই, প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।

টাইটানিক নিয়েই বিশ্বে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। তার পরও ইতিহাসবিদ, বিজ্ঞানী ও টাইটানিক গবেষকরা এর ডুবে যাওয়ার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আজো বিতর্কে লিপ্ত আছেন, ডুবে যাওয়ার প্রকৃত কারণ সম্পর্কে একমত হতে পারেননি। সম্প্রতি টাইটানিক গবেষক ব্র্যাড ম্যাটসেন এ ব্যাপারে জাহাজ নির্মাণকারীদের ওপর একটি গোপন গবেষণা চালিয়েছেন। গবেষণার পর তিনি জাহাজটির ডুবে যাওয়া সম্পর্কে বহু আগে উত্থাপিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারলেখা ‘টাইটানিকের সর্বশেষ গোপন রহস্য’ নামক বইয়ে।

এ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা বহু তথ্য জোগাড় করেছেন, যাতে প্রমাণিত হয় ডুবে যাওয়ার আগে জাহাজটি দু’টি নয়বরং তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন জেমস ক্যামেরুন দ্রুত ভেঙে পড়ার যে বর্ণনা করেছিলেন, মূলত জাহাজটি তার চেয়েও বেশি দ্রুত এবং কৌণিকভাবে ডুবে যায়.

আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে ‘হারল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ’ নামক জাহাজ নির্মাণ কারখানায় টাইটানিক এবং ব্রিটানিকা নামে আরেকটি জাহাজ তৈরি করা হয়। ব্রিটানিকা নামের জাহাজটিকে টাইটানিকের বোন বলা হয়। সেখান থেকে উদ্ধারকৃত গোপন দলিলাদি প্রমাণ করে এরডুবে যাওয়ার পেছনে দুর্বল কাঠামোই একমাত্র কারণ নয়। জাহাজটির নির্মাতারা সন্দেহ করেছিলেন, এর মাস্তুল খুবই হালকাভাবে নির্মিত হয়েছে। কিন্তু জাহাজটিকে সময়মতো সাগরে ভাসানোরজন্য তারা এ তথ্য গোপন করেন এবং জাহাজটি সাগরে ভাসানোর জন্য ইঞ্জিনিয়ারকে আদেশ করেন।

একটা সময় ছিল যখন বড় বড় ঢেউ ডিঙিয়ে শত শত যাত্রীবাহী জাহাজ আটলান্টিক পাড়ি দিত কিন্তু টাইটানিকের পরিণতি এত ভয়াবহ হলো কেন আজো তা এক রহস্য। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ম্যাটসেনের সাথে যারা কাজ করেছেন তারা মনে করেন, জাহাজটির নিম্নাংশের দু’টি বৃহৎ অংশই বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য যথেষ্ট। এতে দেখা যায়, জাহাজটির হালকা মাস্তুল ও অপর্যাপ্ত বোল্টই এ পরিণতির কারণ।

ম্যাটসেন বলেন, কিন্তু আমরা শেষ দিন পর্যন্ত এটা জানতাম না যে, বিষয়টি নির্মাণকারীরা জানত। হারল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ কোম্পানির একজন দলিল সংরক্ষণকারী টম ম্যাক- কুসকি যখন ম্যাটসেনের গোপন গবেষণা সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি ১৯১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত টাইটানিক নির্মাণকারী কোম্পানির সব গোপনগবেষণা সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন। ম্যাক কুসকি বলেন, তিনি এমন একজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যার হাতে তথ্যপ্রমাণগুলো তুলে দিতে পারেন।ম্যাটসেনের গবেষক দল এবং হারল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ কোম্পানির প্রকৌশলীরা একমত হয়েছেন যে, শক্ত মাস্তুল এবং পর্যাপ্ত বোল্ট জাহাজটিকে আরো বেশি সময় পানিতে ভাসিয়ে রাখতে পারত।

হারল্যান্ড অ্যান্ড ওলফ কোম্পানি তখন টাইটানিকের জন্য নির্ধারিত মাস্তুলটি ব্রিটানিকা নামক একই মডেলের অন্য একটি জাহাজের মাস্তুলে অতিরিক্ত স্টিলযুক্ত করে সংযুক্ত করেন। স্পেনিশ-আমেরিকান যুদ্ধের ফলে জাহাজ ব্যবসা সে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং টাইটানিকের নির্মাণ গুরুত্বের সে মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। উত্তর আটলান্টিকের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আশায় জেপি মরগ্যান ব্রিটিশ ও আমেরিকান জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বড় অংশ কিনে নেন। ব্রিটিশ সরকার তখন তাদের জাহাজ নির্মাণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠানকিউনার্ড শিপিং কোম্পানিকে ভর্তুকি দিতে থাকে যেন এটি মরগ্যানের মালিকানাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

নির্ধারিত ডিজাইনের চেয়ে এক ইঞ্চির এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ ছোট করে মাস্তুলের প্লেট তৈরি এবং এক ইঞ্চির এক-অষ্টমাংশ পরিমাণ ছোট করে বোল্ট তৈরির ফলে জাহাজটি ২ হাজার ৫০০ টন ওজন হারায় বড়ধরনের জাহাজ তৈরিতে যে ধরনের নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়,টাইটানিকের ক্ষেত্রে এসব মানা হয়নি। তবে খুঁটিনাটি কিছু বিষয়ে সেগুলোর অনুসরণ করা হয়। ম্যাটসেনের মতে, এ ধরনের কৌশল মূলত ক্রেতাদের খুশি করার জন্য অবলম্বন করা হয়। যদি জেপি মরগ্যান কাগজের মণ্ড দিয়ে কোনো নৌকা তৈরি করতে চাইতেন তবে তারা তাকে কাগজের মণ্ডের চেয়েও নিম্নমানের উপাদান দিয়েই তা বানিয়ে দিত। এখানে শুধু লাভইতাদের উদ্দেশ্য ছিল, অন্য কিছু নয়।

নির্মাণ শুরু : ৩১
মার্চ, ১৯০৯
উদ্বোধন : ৩১
মে, ১৯১১ , কাজ
শেষ হয় : মার্চ,
১৯১২
সমুদ্রযাত্রা : ১০
এপ্রিল, ১৯১২
জাহাজের ধরন : অলিম্পিক শ্রেণীর
সামুদ্রিক জাহাজ
বহন ক্ষমতা : মোট ৪৬,৩২৮ টন
লম্বা : ৮৮২ ফুট ৯ ইঞ্চি , চওড়া : ৯২ ফুট ৬
ইঞ্চি
গভীরতা : ৩৪ ফুট ৭ ইঞ্চি
গতিবেগ : ২১ নট (৩৯ কিমি/
ঘণ্টা এবং সর্বোচ্চ ২৩ নট (৪৩ কিমি/
ঘণ্টা)।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: