বিদেশে যে সকল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা..

সাতক্ষীরার মেয়ে শাহিনা আকতার। আরো অনেকের মত তার স্বপ্ন ছিল বিদেশে যাওয়ার। নিজের সঞ্চয় আর ঋণ করে ১ লাখ বিশ হাজার টাকা জোগাড় হয়। তিনি বলছিলেন “ এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া ঠিক হয়। মসজিদে কাজ করতে পারবো জেনে ভাল লাগলো ভাল বেতন, ভাল কাজ। শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম” তিনি দুবাই পৌঁছালেন,- আর দেখলেন কল্পনার সাথে বাস্তবের মিল নেই। মসজিদে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয় একজনের বাসায়।
তিনি বলছিলেন “শরীরে বিভিন্ন জায়গায় গ্লাস ছুড়ে মারতো। কাজে ভুল হলে মারধর করতো, শরীরে বিভিন্ন জায়গার এখনো ক্ষত চিহ্ন রয়েছে”। একদিন মারধরের এক পর্যায়ে শাহিনা হঠাত করেই বলে বসেন যদি তার গায়ে হাত তোলা হয় তাহলে তিনি রাস্তার টহলরত পুলিশকে জানিয়ে দেবেন। এরপর তার বাড়ির মালিক যে এজেন্সির মাধ্যমে তাকে কাজে নিয়েছিল তাদের ডেকে শাহিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু সাত মাসের কাজের কোন বেতন তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকলেও ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা শিকার হন আসমা।
তিনি বলছিলেন “ সাত দিনের মধ্যে পর পর দুই রাত দুই বাসায় তারা আমাকে রেপ করার চেষ্টা করে। আমি বলি আমারে কাজ দেন নাইলে দেশে পাঠায়ে দেন” আসমাকে সেখানে দেহব্যবসার কাজে লাগাতে চেয়েছিল তার প্রেরণকারী। এক সপ্তাহ পর ওমান থেকে দেশে ফিরে আসেন আসমা। কিন্তু দেহব্যবসার করার অভিযোগে তার স্বামী এখন আর তার সাথে থাকতে চাচ্ছেন না।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে যে হাজার হাজার নারী শ্রমিক পাড়ি জমায় তার একটা বড় অংশ যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। সরকারি হিসেবে গত ২৬ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকরা গিয়েছেন সাড়ে তিন লাখের বেশি। যারা মূলত সেখানে কাজ করেন গৃহকর্মী হিসেবে। চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে চলছে নারী শ্রমিকদের সৌদি আরবসহ নানা দেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য নামের নিবন্ধন। সেখানে সাভার থেকে এসেছেন রাজিয়া। তিনি বলছেন গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতে চান তিনি। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না।
রত্না বলছিলেন তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে শুনেছেন নিবন্ধনের কথা। তবে ওখানকার সমস্যার কথা তার অজানা। এখানে যারা নিবন্ধন করতে এসেছেন তারা কিছু কাজ আর ভাষা ছাড়া বিদেশে কাজ ঝুঁকির কাজ সম্পর্কে খুব কম জানেন বলেই মনে
বাংলাদেশের নারী শ্রমিকদের বিদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা-জনিত সমস্যা ছাড়াও ভাষা, সংস্কৃতি সেদেশের নিয়মকানুন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলায় পরতে হয়। সেসব অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা দেশে ফিরে আসেন আর গণমাধ্যমে এনিয়ে নানা সময়ে ওঠে আসে প্রতিবেদন।
অভিবাসন নিয়ে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা রামরু। সংস্থাটির কর্ণধার ড. তাসনিম সিদ্দিকি বলছেন নারী শ্রমিকদের গৃহকর্মী হিসেবে বিভিন্ন দেশের চাহিদা রয়েছে। তবে সেখানে নিরাপত্তা সহ অন্যান্য বিষয়গুলো দেখার জন্য প্রত্যেকটি জায়গায় সরকারের শেল্টার হোম বা আশ্রয় কেন্দ্র থাকা উচিত। যাতে করে সেখানে কেও সমস্যায় পরলে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। রিক্রুটিং এজেন্সি অনেকটা দালালের মতই কাজ করেন বলে তিনি বলছিলেন। সেক্ষেত্রে সাহায্য পাওয়াটা অনেক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায়। বাংলাদেশি শ্রমিকদের ৭০ শতাংশ যায় পরিবার বা পরিচিত লোক বা তাদের ভাষায় দালালের মাধ্যমে। আর ৩০ শতাংশ যায় বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে। সম্প্রতি সরকারি পর্যায়ে জি-টু-জি পদ্ধতি মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোর চুক্তি হলেও যা কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা এবং সচেতনতার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কি ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে।
জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক- সরকারি প্রতিষ্ঠান -বিএমইটির -যুগ্ম সচিব সহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চেয়েছিলাম সচেতনতা তৈরি বা প্রশিক্ষণের জন্য দেশে কি ব্যবস্থা আছে আর সেটি কতটাই বা যথেষ্ট।
মি ইসলাম বলছিলেন“২১ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, ওয়াশিংমেশিন চালানো, রাইসকুকার চালানো শেখানো হয়। ভাষা শেখানো হয়। তবে এটাই পর্যাপ্ত মন না। সরকার এই সময়কাল ৪২ দিনে নেওয়ার এবং আরো সমৃদ্ধ প্রশিক্ষণের চিন্তা ভাবনা করছেন। বর্তমানে দেশে ১৬ টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বিদেশে গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সময়কাল ২১ দিন। ড. তাসনিম সিদ্দিকি বলছিলেন এমন সময়কাল এবং প্রশিক্ষণের মানের যথেষ্ট উন্নয়ন প্রয়োজন।
স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ- নিদিষ্ট দেশের ভাষা, কাজ আর পরিবেশ সম্পর্কে ভাসা ভাসা ধারনা নিয়ে প্রতিবছর কয়েক হাজার নারী শ্রমিক পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের নানা দেশে। যেখানে নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়ে সমস্যায় পরলে কার কাছ থেকে তারা প্রতিকার চাইবেন সেটিও অনেকের কাছেই অস্পষ্ট বলে মনে হচ্ছে। -খবর বিবিসি।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: