আজকের এইদিনে ভারতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন হোসেন আলী

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০১৫, ০৯:০৪ পিএম

আব্দুল লতিফ রঞ্জু,
পাবনা প্রতিনিধি:

আজ ১৮ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিন বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন দেশের গর্বিত সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম হোসেন আলী। তখন তিনি ভারতের কলকাতায় পাকিস্তান দূতাবাসে ডেপুটি হাই কমিশনার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকার শপথ গ্রহনের পরের দিন ১৮ এপ্রিল এম হোসেন আলী তার মিশনের ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের নতুন সরকারের আনুগত্য ঘোষনা করেন। ফলে মূহুর্তের মধ্যে পাকিস্তান দূতাবাস পরিনত হয় বাংলাদেশ মিশনে। এখান থেকেই শুরু হয় বিপ্লবী সরকারের প্রতি বিদেশী সমর্থন আদায়ের কার্যক্রম। একই সাথে ১৮ এপ্রিল হোসেন আলী কলকাতায় দেশের প্রথম বৈদেশিক দূতাবাস ভবনের শীর্ষে পাকিস্তানের পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ান ।

বৃটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশে পররাষ্ট্র দিবসের এক আলোচনায় মন্তব্য করেছিলেন এটা ছিল একটা দুঃসাহসিক কাজ যা হোসেন আলীর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য এটা ছিল এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এটা বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরনার উৎস্য হিসাবে কাজ করে। দীর্ঘদিনের অত্যাচার, নির্যাতন, বৈষম্য আর পাকিস্তানি দুঃশাসনকে পদদলিত করার পাশাপাশি সেই পতাকা স্বাধীন বাংলার মান-মর্যাদা সমুন্নত করে বিশ্ব দরবারে সার্বভৌমের প্রতীক হিসাবে কাজ করে।

তখন থেকে জনাব হোসেন আলী ভারতে বাংলাদেশ মিশন প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন এবং স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত ঐ পদে কর্তব্যরত ছিলেন । যুদ্ধকালিন সময়ে বাংলাদেশের শরনার্থীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন ও অস্ত্রের ব্যবস্থাসহ মুক্তিযুদ্ধে বিপ্লবী সরকারের অনুকুলে ভারতীয় সরকারের সক্রিয় সহায়তা প্রদানে হোসেন আলীর অবদান দেশবাসীর স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছে। তার সাহসীপূর্ন ভূমিকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিদেশের অনেক সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকারের প্রথম দূত হিসাবে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হোসেন আলীকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেন। এ সময় যুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রতি আমেরিকার মনোভাব ইতিবাচক ও দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সহযোগিতা প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন।

হোসেন আলী একজন বীর মুক্তি যোদ্ধা এবং সত্যিকারের দেশ প্রেমিক ছিলেন (সূত্রঃ বাংলাদেশ গেজেট জানুয়ারি ৬, ১৯৮১)। তিনি ১৯২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ভাঙ্গুড়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে এমএসসি ও করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে সাবেক পররাষ্ট্র বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৫০-৫১ সালে ওয়াশিংটন ডিসি-তে আন্তর্জাতিক আইন ও কুটনীতি বিষয়ে অধ্যায়ন করেন।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হন। পরে তুরস্ক, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানী প্রভৃতি রাষ্ট্রে হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। ১৯৮১ সালে ২ জানুয়ারি কানাডার অটোয়াতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে তার বাংলাদেশের সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিজ গ্রামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও গরীব মানুষের কল্যানে ওয়াকফ করে গেছেন।

পাবনা-৩ এলাকার সংসদ সদস্য আলহাজ মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, হোসেন আলী জাতির গর্বিত সন্তান। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান এবং ভাঙ্গুড়া থানা প্রতিষ্ঠায় তার মরহুম পিতা আলহাজ্ব মহসীন আলীকে সহায়তার জন্য তিনি গর্ববোধ করেন। উপ-সচিব (অবঃ) মুক্তিযোদ্ধা এম.এ হান্নান বলেন, ভারতে গেরিলা প্রশিক্ষণ ও আশ্রয় শিবির স্থাপনে তিনি মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। হোসেন আলী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি মোঃ মোফাজ্জল হোসেন মাষ্টার পারভাঙ্গুড়া গ্রামে নির্মাণাধীন কমিউনিটি ক্লিনিক ‘হোসেন আলী’ নামকরণের দাবি জানান।

তারা হোসেন আলীর গ্রামের রাস্তা পাকা ও বড়াল নদীর ওপর ভবানীপুর –পারভাঙ্গুড়া সংযোগ ব্রীজ নির্মানের দাবি জানান। তারা হোসেন আলী উদ্যান সম্প্রসারনে সরকারি বরাদ্দ দাবি করে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান স্মরনীয় করে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ এবং ১৮ এপ্রিল পতাকা দিবস হিসাবে উদযাপনের জন্য সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন। এদিকে দিনটি উপলক্ষে হোসেন আলী স্মৃতিপরিষদ আজ শনিবার পারভাঙ্গুড়া গ্রামে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: