স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন ইবি’র শহীদ স্মৃতিসৌধ

প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০১৫, ০৬:১৭ এএম

এস আই রাজ,
ইবি প্রতিনিধি:

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) যে কয়টি স্থাপত্য ও ভাস্কর্য রয়েছে তার মধ্যে শহীদ স্মৃতিসৌধ অন্যতম। এর শৈল্পিক কারুকার্য ও নজরকাড়া ডিজাইন সহজেই মুগ্ধ করে সকলকে। বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত সংস্কৃতি চর্চার লীলাভূমিতে রুপান্তরিত করার প্রত্যয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত করে মৌলবাদী চিন্তাকে উৎখাত করার লক্ষ্য নিয়ে শহীদ স্মৃতিসৌধ স্থাপিত হয়। ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর গৌরবময় মুক্তিযোদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামের শহীদদের স্মরণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ২০০১ সালে তাৎপর্যপূর্ণ এ শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী হাশেম খান এবং প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ রবিউল ইসলামের দেয়া মডেল ও স্থাপত্য কর্মের ভিত্তিতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়। ১৯৯৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তিতে ২০০১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী এর শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ এস এইচ কে সাদেক। ৫২-সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা লাভের মূল ধারা ও অতীতের সব ঘটনাকে স্মরণ রাখতে যথাক্রমে ৩০ ফুট, ৪২ ফুট ও ৫২ ফুট উচ্চতায় ২ ফুট ৬ ইঞ্চি পুরু বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে সংমিশ্রণে এই স্মৃতি স্তম্ভটি স্থাপন করা হয়েছে। ৭১ ফুট উঁচু পরিসরে ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি থেকে ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট ইটের চত্বরে এই স্তম্ভটি স্থাপিত। যার ওপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের বেদি, প্রশস্ত পাটাতন, মাঝখানে ২১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট জাতীয় পতাকার দন্ড এবং দুই পাশে ১০ ফুট উচ্চতার ৩৮ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে বাংলাভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা বিষয়ক (দুটি) দেয়ালচিত্র সন্নিবেশিত হয়েছে। মাছ, পাখি, একতারা, শাপলাসহ বিভিন্ন ফুল ও পাতার নকশা দেয়ালচিত্রে অঙ্কিত রয়েছে যা এদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছে। দেয়ালচিত্রে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মরমী কবি লালন শাহ, পাগলা কানাই ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী সংযোজন স্মৃতিসৌধটির গুরুত্ব আরো অর্থবহ করে তুলেছে।

দেয়ালচিত্রে সংযোজিত বাণীগুলো হল-‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলার মানুষ বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে তারা বীরের জাতি। তারা নিজেদের অধিকার অর্জন করে মানুষের মত বাঁচতে জানে’, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “তোমরা ভয় দেখিয়ে করছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়, সেই জয়ের টুটিই ধরব টিপে, করব তারে লয়”, পাগলা কানাইয়ের “শত রঙ্গের দেখিরে গাভী, এবা রঙ্গের দুধ গো দেখি, তবে কেন ত্রিজগতে মানবিচ করত্যাচি”, লালন ফকিরের “সব লোকে কয়-লালন কি জাত সংসারে, লালন বলে জাতের কি রুপ দেখলাম না এ নজরে”, মীর মশাররফ হোসেনের “বাংলা ভাষায় যাহার ভক্তি নাই, সে মানুষ নহে”, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি শহীদ স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্যকে শতগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া স্মৃতিসৌধের গোলাকার জ্যামিতিক বৃত্ত, ব্যাসার্ধ, স্তম্ভ ইত্যাদি স্থাপত্য দেশের বিভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতিসৌধটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অতিক্রম করে বামদিকে তাকালেই চোখ পড়বে দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপত্যটি। জাতীয় দিবসগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডার প্রাণকেন্দ্র শহীদ স্মৃতিসৌধ।

পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র মারুফ হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘শহীদ স্মৃতিসৌধের নকশা আসলেই খুব চমৎকার। দেয়ালচিত্রে বিখ্যাত মনীষিদের উক্তিগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করে। এছাড়া বিশেষ দিবসগুলোতে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার সময় বায়ান্নোর ভাষা শহীদ, একাত্তরের শহীদদের কথা মনে পড়ে যায়। তখন দেশের এ বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা ন্যুজ হয়ে যায়। স্মৃতিসৌধ নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে আমাকে।

ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্রী নাজনীন আক্তার কেয়া বলেন, ‘ভাষা শহীদ ও একাত্তরের শহীদরা আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার। ক্যাম্পাসের শহীদ স্মৃতিসৌধ তো তাদের কথায় আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। ক্যাম্পাসে এরকম একটা স্থাপত্য থাকায় আমি ব্যক্তিগত খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: