শাবানার গ্রামের বাড়ীতে দীর্ঘ সময় না আসায় সিনেমাপ্রিয় মানুষের মাঝে কৌতূহল

গাজী জয়নাল আবেদীন যুবায়ের, রাউজান(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃরাউজান উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে পশ্চিম ডাবুয়ার গণিপাড়া গ্রামটি। কিছুটা ইটের সলিং আবার কিছুটা কাঁচা আঁকা-বাঁকা সড়ক দিয়ে যেতে হয় সেই এক সময়ের চলচিত্র কাপানো নায়িকা শাবানার গ্রামের বাড়ী। রাস্তার দু’ধারে সবুজ প্রকৃতি আর ফসলি জমি। দেখে যেন মন জুড়িয়ে যায়। ২০-২৫ গজ দূরে স্রোতস্বনী সর্তা খাল। পাশেই ইট ও টিনের ছাদের লম্বা একটি ৫০ বছর আগের ঘর। অনেক পুরানো বলে দেওয়ালের আস্তরে ঝং ধরেছে। হারিয়েছে স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য।ে কিন্তু একসময় সেই ঘরে বাপ-চাচাদের কোলে পিঠে করে বেড়ে উঠেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা শাবানা। শুধু শিশুকাল নয়, শৈশবে তার স্কুল ও খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক জগতের পারদর্শিতার প্রমাণ রাখা কিংবা উচ্ছ্বলতায়ভরা ছিল তার এই গ্রামটি। গ্রামটির শুধু প্রাকৃতিক নয়, গ্রাম্য সব পরিবেশের সৌন্দর্য্যে মন্ডিত গণিপাড়া গ্রামটিকে আরো প্রসিদ্ধ বাংলার চলচ্চিত্রের চির সফল জনপ্রিয় নায়িকা শাবানার বাপের বাড়ি বলে। রাউজান তথা অন্য এলাকার মানুষ রাউজানে কোন কাজে আসলেই একবার দেখে যান সেই শাবানার শৈশব স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। কিন্তু যে বাড়িটি নিয়ে সাধারন ‘সিনেমাপ্রিয়’ মানুষের মধ্যে এত কৌতূহল, সেই বাড়িতে শাবানার পায়ের ছাপ পড়েনি দীর্ঘ সময় থেকে। ৭-৮ বছর পূর্বে এসেছিলেন নিজের বাড়িতে। জেয়ারত করে যান দাদার কবর।
সেই থেকে আমেরিকা প্রবাসী হয়ে সেখানে পরিজন নিয়ে বসবাস করেন শাবানা। মাঝে মধ্যে ঢাকার বাড়িতে আসেন। কিন্তু দীর্ঘকাল গ্রামের বাপের বাড়িতে শাবানার আগমন না ঘটায় উৎসুক গ্রামের অনেকে হতাশ হয়েছেন। কারন একসময় সাবানা ফাঁক ফেলেই তার বাবার বাড়িতে আসতেন। সেই সময় শাবানাকে এক নজর দেখতে ভীড় লেগে যেতো বাড়িটিতে। এখন শাবানার ছাপ পড়েনা সেই বাড়িটিতে। তাই এলাকার সিনেমা পাগল অনেকের শাবানাকে দেখার সুযোগও মেলেনি। চর্তুদিকে সুপারি, নারিকেলসহ নানা গাছের ছায়ায় ঢাকা ‘নিঝুম’ বাড়িটি দেখলেই মনে হচ্ছে যেন শাবানার অভাব অনুভূত হচ্ছে বাড়িটিতে। তবে শাবানা দীর্ঘদিন না আসলেও তিনি বাড়ির খোঁজ-খবর রাখেন। মাঝে মধ্যে চাচা, চাচী, চাচাতো ভাই, ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলেন সূদুর সেই আমেরিকা থেকে। শাবানা না আসলেও তার মা জোসনা আকতার মাঝে মধ্যেই রাউজানের গ্রামের এই বাড়িটিতে আসেন। বছর দুয়েক আগেও সাবানার ভাই-বোন রিজভি, রিপন, শাহীন, রনজিনাকে নিয়ে এখানে এসেছিলেন তিনি। ওই সময় এলাকার একটি চিকিৎসা ক্যাম্প করেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয় ছোটকাল আর শৈশবকালের দূরন্তপনায় পদধূলি পড়া সাবানার সেই বাড়িটি। সেখানে পাওয়া গেছে, শাবানার চাচী ৬১ বছর বয়সী রওশন আরা বেগম, চাচাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও সেলিমকে। তাদের সাথে কথা হয় শাবানাকে নিয়ে নানা জানা-অজানা কথা।
চাচাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও সেলিম বলেন, আমাদের বাবা, চাচা ও জেঠা তিন ভাই ছিলেন। এর একজন হলেন-শাবানার বাবা মৃত ফয়েজ চৌধুরী, অন্য দুইজন অধ্যাপক লুৎফর রহমান চৌধুরী ও মাষ্টার আবুল বশর চৌধুরী। শাবানা এলাকার রাম সেবক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এরপর ডাবুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছিলেন। ছোটকাল থেকেই তিনি সংস্কৃতিমনা ছিল। স্কুলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাটক, নাচ, গান করতো সাবানা। স্কুলের গন্ডি পেরুনোর পর শাবানার খালু পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান তাকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখান থেকেই শাবানা চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের সুযোগ ও উত্থানের সুযোগ পান। ১৬ বছর বয়সে প্রথম ছবি ‘চকরি’ দিয়ে শুরু হয় শাবানার ‘ঢালিউট’ মাতানো। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক মন মাতানো বা দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়ে তিনি হয়ে উঠেন এক সময়ের জন্যে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান নায়িকা। পুরস্কার পান রাষ্ট্রীয়সহ বিভিন্ন নামীদামী পুরস্কার। দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র জগতে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রাখা শাবানা ৬/৭ বছর আগে ‘মাঠির ঠিকানা’ নামের শেষ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতের ইতি টানেন।
শাবানার চাচাতে ভাই মুজিবুর রহামন সাহাবু বলেন, শাবানা রাউজান ইউনিয়ন থেকেও ছবি দৃশ্যে নিয়েছিলেন। হরিশখান পাড়াসহ কয়েকটি স্থানে তিনি জনপ্রিয় ছবি ‘মলকা বানু’র শুটিং করেছিলেন। জানা যায়, শাবানার এখন বয়স ৬২-৬৫ বছর। তার বিয়ে হয়েছিল খুলনার ওয়াহেজ ছাদেরকের সাথে। তার নানার বাড়ি জামালপুর। শাবানার সুমি ও উর্মি নামের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
ছবি ক্যাপশন- বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা শাবানার রাউজানের গণি পাড়া গ্রামের বাড়ি। এই বাড়িতে শিশুকাল আর বাল্যকালে বেড়ে উঠেন তিনি। পাশে শাবানা।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: