পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত

নিউজ ডেস্ক: পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। ইবাদত বন্দেগীর জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ বরকতময় অনেক রাত ও দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এইসব বরকতের রাত ও দিনে আন্তরিকভাবে ইবাদত করলে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এরকম একটি মহিমান্বিত রাত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত রবিবার দিবাগত রাতে উদযাপিত হবে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিলসহ ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে সারা রাত অতিবাহিত করবেন।মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশ্বের মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া করবেন।
শবে বরাত:
মধ্য-শাবান হচ্ছে আরবী শা'বান মাসের ১৫ তারিখ, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে শবে বরাত বা শব-ই-বরাত (شب برات) নামে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানগণ বিভিন্ন কারণে এটি পালন করেন। এই রাতকে লাইলাতুল বরাত বলা হয়।
এর আরো অন্যান্য নাম রয়েছে তাহলো, লাইলাতুল বরাত, লাইলাতুল দোয়া, ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা'বান, আরবী ভাষাভাষীর বলে নিসফ্ শা’বান, মালয় ভাষাভাষীর বলে নিসফু শা’বান’ তুর্কি ভাষাভাষীর বলে বিরাত কান্দিলি।
বরকত নাযিল:
হযরত আলী মুরতাদ্বা (রা) থেকে বর্নিত, নবী করিম রঊফুর রহিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহান বানী, যখন শাবানের ১৫তম রাতের আগমন ঘটে তখন তাতে কিয়াম (ইবাদত) করো আর দিনে রোযা রাখো । নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লী বর্ষন করেন, এবং ইরশাদ করেনঃ কেউ আছ কি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কারী? তাকে আমি ক্ষমা করে দিব ! কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি জীবিকা দান করব ! কেউ কি আছ মুসিবতগ্রস্ত? তাকে আমি মুক্ত প্রদান করব! কেউ এমন আছ কি! কেউ এমন আছ কি! এভাবে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ পাক তার বান্দাদেরকে ডাকতে থাকবেন । সূত্র- (সুনানে ইবনে মাযাহ, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৬০, হাদিস নং-১৩৮৮)
ইতিহাস:
এই বিশেষ রাতের ব্যাপারে কুরআনে তেমন কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে সিয়াহ সিত্তাহ বা বিশুদ্ধ ছয়খানা হাদিস গ্রন্থের কোনো কোনো হাদিসে এই রাতের বিশেষত্ব নির্দেশক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এছাড়াও অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও এই রাতের বিশেষত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রাতের কথা ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে পাওয়া যায়, ওই হাদিস মতে, এক রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মদের (সাঃ) স্ত্রী আয়েশা ঘুম থেকে উঠে পড়লেন কিন্তু মুহাম্মদকে (সাঃ) বিছানায় দেখতে পেলেন না। তিনি মুহাম্মদকে (সাঃ) খুঁজতে বের হলেন এবং তাঁকে জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দেখতে পেলেন। মুহাম্মদ(সাঃ) বললেন, ১৫ শাবানের রাতে আল্লাহ সর্বনিম্ন আকাশে নেমে আসেন এবং আরবের কালব উপজাতির ছাগলের গায়ের পশমের থেকে বেশি লোককে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা করেন।
উল্লেখ্য, সেসময় কালব গোত্র ছাগল পালনে প্রসিদ্ধ ছিল এবং তাদের প্রচুর ছাগল ছিল। এই হাদিসের নিচে ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেন, ‘হযরত আবু বকরও (রা) এরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন বলে জানা যায়। আমি (ইমাম তিরমিয়ী) শুনেছি ইমাম বুখারীকে (র) বলতে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের মাঝে একজন জায়েফ (দুর্বল বা কম গ্রহণযোগ্য) ছিলেন।’
এর ভিত্তিতে বলা হয়, এই হাদিসটি সম্পুর্ণরূপে গ্রহণযোগ্য না হলেও মিথ্যা নয়। এটি সত্য হবার সম্ভবনা আছে। ফিকাহ্ বিশারদদের মতে জায়েফ হাদিস যদি কুর'আন পরিপন্থী না হয় তবে তা মানা যায়।
শবে বরাতের দালিলিক বর্ণনা:
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এই রাতের ফজিলত অনেক। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, এই রাতে মহান আল্লাহ আমাদের নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং ডাকতে থাকেন ‘হাল মিম মুস্তাগফিরিন ইয়ুগফার লাহু’ অর্থাৎ ক্ষমাপ্রার্থী কেউ কি আছ? তাকে ক্ষমা করে দেব। ‘হাল মিম মুস্তারজিকিন ইয়ুরজাকলাহু’ অর্থাৎ রিজিক প্রার্থী কেউ কি আছ? রিজিকে তাকে পরিপূর্ণ করে দেব।
শবে বরাত হচ্ছে এমনই এক মহিমান্বিত সাধারণ ক্ষমার রাত। শবে বরাত শব্দ দুটি এসেছে ফার্সি থেকে। ফার্সিতে শব শব্দের অর্থ রাত আর বরাত অর্থ মুক্তি। সেই অনুযায়ী শবে বরাত শব্দ দুটির অর্থ দাঁড়ায় মুক্তির রাত। ইবাদতের মাধ্যমে এই রাতে গুণাহ থেকে মুক্তিলাভের প্রত্যাশা করা যায়। এ জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য এই রাত শবে বরাত অর্থাৎ মুক্তির রাত। মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এই রাতকে লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান (শাবান মাসের ১৫তম রাত) বলে উল্লেখ করেছেন।
হজরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রা.)- থেকে বর্ণিত- হযরত মুহম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন যে, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ রহমতের দৃষ্টি রাখেন এবং হিংসুক ও মুশরিক মানুষ ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হা. ৫৬৬৫, আল মু`জামুল কাবীর ২০/১০৯, শুআবুল ইমান, হাদিস ৬৬২৮)।
হযরত আসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন যে, শাবান মাসের ১৫তম রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং যারা ক্ষমা প্রার্থণা করেন তাদের ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক (আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্তকারী) ও মুশহিন (হিংসুক) ব্যতীত (বায়হাকি ফি শুয়াবিল ঈমান হা. ৩৮৩৫)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই অর্ধ শাবানের রাতে যাবতীয় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন। আর শবে কদরে তা নির্দিষ্ট দায়িত্বশীলদের অর্পণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি ১৬/১২৬)।
হযরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘একদা হযরত রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, হে আয়েশা, তুমি কি জান, লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ বা শবে বরাতে কি সংঘটিত হয়? উত্তরে আমি বললাম না, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলই তা ভাল জানেন। তখন আমি রাসুলের কাছে জানতে চাইলাম এ রাতে কি কি সংঘটিত হয়? তখন রাসুল (সা.) বললেন, আগামী এক বছরে কতজন সন্তান জম্মগ্রহণ করবে, কতজন লোক মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে মহান আল্লাহ তা লিপিবদ্ধ করেন। আর এ রাতেই মহান আল্লাহর দরবারে বান্দার এক বছরের আমল পেশ করা হয়। এই রাতেই বান্দার এক বছরের রিজিকের ফায়সালা হয়।’ (-বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্ ও মিশকাত শরীফ)।
হযরত আলী (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা). ইরশাদ করেন, যখন শবে বরাত আসবে তখন তোমরা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনের বেলায় রোজা রাখবে। কেননা, শাবানের ১৫তম রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থণাকারী কেউ আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। জীবিকার সন্ধানী কেউ আছ কী? আমি তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জীবিকা দান করবো। কেউ কী বিপদগ্রস্ত আছো? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। এভাবে মহান আল্লাহ ঊষাকাল পর্যন্ত বান্দার চাহিদা পূরণ করার জন্য আহ্বান করতে থাকেন।’ (মিশকাত শরীফ, ইবনে মাজাহ্)।
মুমিন মুসলমানগণ পবিত্র শবে বরাতে ইবাদত করে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থণা করেন। নিজের আশা পূরণের জন্য এবং দুনিয়া থেকে যারা বিদায় নিয়েছেন তাদের রুহের মাগফেরাতের জন্য দোয়া করেন।
এই রাতে নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, ইসতিগফার ও তওবা করা এবং পরদিন অর্থাৎ শাবানের ১৫তম দিনে নফল রোজা রাখা উত্তম।
আলেমগণ বলেন, শবে বরাতের জন্য আলাদা কোন নামাজ বা নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম ইসলামে নেই। এই রাতকে উপলক্ষ করে আগরবাতি, মোমবাতি ধরানো; মসজিদে, বাড়িতে বা অন্য কোনখানে আলোকসজ্জা করা; আতশবাজি করা, তারাবাতি পেড়ানো, হালুয়া-রুটি ও তবারকের আয়োজন ইত্যাদি অবশ্যই বর্জনীয়।
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: