ভালবেসে বিয়ে, অতঃপর করুণ পরিণতি!

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০১৭, ১০:৩৩ এএম

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: এক হাজার টাকার জন্য বোনের বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন হাসিনা বেগম। নেশাগ্রস্ত স্বামী মোহন আহমদের আব্দার মেঠাতে তিনি বোনের কাছে যান। কিন্তু বোন সাবিনার স্বামী বাসায় না থাকায় টাকা দিতে পারেননি। টাকার জন্য ঢাকায় থাকা মায়ের কাছেও ফোন করেছিল। কিন্তু সেই রাতে রহস্যময় আগুনে পুড়ে যান তিনি। আগুনে তার শরীরের ৯০ ভাগ ঝলসে যায়।

রাতেই হাসিনাকে এম্বুলেন্সযোগে সিলেট থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ঢাকার অদূরে কাঁচপুর ব্রিজের কাছে যাওয়া মাত্রই নিথর হয়ে পড়ে হাসিনার দেহ। পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে- ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশ দেখে অনুমান করেন পেট্রোলের আগুনে পুড়ে মারা গেছে হাসিনা বেগম।

সিলেটের পুলিশ বলছে- হাসিনার শরীরে কেউ আগুন দিতে পারে, আবার হাসিনা নিজেও আগুন দিতে পারে। তদন্ত করলে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। হাসিনা বেগমের বাড়ি ঢাকার নবাবপুরে। তার পিতা আবদুল কাদের। প্রায় ১০ বছর আগে মোবাইল ফোনে পরিচয় সিলেটের ৯৪ গোয়াইটুলা এলাকার যুবক মোহন আহমদের সঙ্গে। সেই থেকে তাদের প্রেম।

মোবাইল ফোনে প্রেমের সূত্র ধরে দু’টি পরিবারের সম্মতিতে মোহন ও হাসিনা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। বিয়ের পর হাসিনা স্বামীর বাড়ি সিলেটের গোয়াইটুলা এলাকায় বসবাস করতে থাকেন।

হাসিনার পরিবারের সদস্যরা জানান- বিয়ের পর মোহনের আসল চেহারা তাদের কাছে প্রকাশ পায়। মোহন ছিল বেকার। নেশা করতো। বিয়ের পর থেকে সে টাকার জন্য হাসিনাকে প্রায় সময় নির্যাতন করতো। নির্যাতনের মুখেও দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হাসিনা সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছিল। বড় ছেলে মোহাম্মদ আলীর বয়স ৭ বছর। আর মেয়ে মোহনা বেগমের বয়স সাড়ে ৪ বছর।

সম্প্রতি হাসিনার উপর মোহনের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। মোহনও বেশি করে নেশায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে বারবারই হাসিনার কাছে টাকা আব্দার করতো। তার আব্দার মতো হাসিনাও প্রায় সময় ঢাকার নবাবপুরে থাকা মায়ের কাছ থেকে টাকা এনে দিতো।

ঘটনার দিন এক হাজার টাকার জন্য হাসিনাকে স্বামী মোহন মারধর করেছে। হাসিনার বাসার পাশেই স্বামী সহ বসবাস করে তার ছোটো বোন সাবিনা বেগম। তাদের পরিবারের দ্বন্দ্ব প্রায় সময় সাবিনা এসে মিটমাট করে যেতেন। কয়েক মাস আগে সে হাসিনার পরিবারের কাছে যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল দাবি করেছিল। পরে তাকে মোটরসাইকেলও দেয়া হয়।

গতকাল সাবিনা বেগম জানিয়েছেন- রাত দুইটার দিকে তাকে খবর দেয়া হয় তার বোন ঝলসে গেছে। খবর শুনেই তিনি ছুটে। দেখেন বাসার সামনে এম্বুলেন্সে হাসিনা শুয়ে কাতরাচ্ছে। এরপর মোহনসহ তারা হাসিনাকে নিয়ে এম্বুলেন্সে করেই ঢাকার পথে রওয়ানা দেন।

সাবিনা জানান- গাড়িতে হাসিনার কিছুটা জ্ঞান ছিল। প্রায় সময় পানি পানি বলে চিৎকার করছিল। এ সময় তার মুখে পানি দেয়া হয়। এর বেশি কোনো কথা সে বলতে পারেনি। ভোর হয়ে কিছু সময় পেরিয়ে গেছে। কাচপুর ব্রিজের উপর তখন হাসিনাকে বহনকারী গাড়ি। এমন সময় হাসিনার দেহ নিথর হয়ে পড়ে।

সাবিনা জানান- হাসিনার নিথর দেহ নিয়ে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ডাক্তাররা ধারণা করেন- পেট্রোলে হাসিনা ঝলসে যাওয়ার পর মারা যেতে পারে। এদিকে- ঢাকা মেডিকেলে হাসিনার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পিতার বাড়ি নবাবপুরে। সেখানেই সোমবার রাতে তাকে দাফন করা হয়।

সাবিনা অভিযোগ করেন- ঘটনার দিন সন্ধ্যারাতে হাসিনার বাসায় এক হাজার টাকার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু টাকা হাতে না থাকায় দিতে পারেননি। তিনি বলেন- হাসিনাকে তার স্বামী নির্যাতন করতো। নেশার টাকা না দেয়ায় ঘটনার দিন হাসিনা বেগমের শরীরে আগুন ঢেলে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নিহত হাসিনার মা জয়নব বেগম জানিয়েছেন- প্রায়ই তার মেয়ে ফোন করে কান্নাকাটি করতো। বলতো- তাকে প্রায় সময় টাকার জন্য মারধর করা হচ্ছে। এ যন্ত্রণা তার সহ্য হচ্ছে না। তিনি বলেন- তার মেয়ে হাসিনার শরীরে আগুন ঢেলে হত্যা করা হয়েছে। তারা এখনো শোকাগ্রস্ত। দু’-এক দিনের মধ্যে তারা সিলেটে এসে এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলে জানান।

এদিকে- সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন- ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই তিনি এলাকায় ছুটে যান। দেখেন তারা পুড়ে যাওয়া হাসিনাকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন।

মোশারফ হোসেন জানান- হাসিনার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যা করতে পারে কিংবা হাসিনা নিজে থেকে আগুন দিতে পারে। তদন্তের পর বিষয়টি জানা যাবে। আত্মহত্যার প্ররোচনাও অপরাধ। অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

নিহত হাসিনার স্বামী মোহন আহমদ জানিয়েছেন- তার চোখের সামনেই হাসিনা পেট্রোলের আগুনে ঝলসে যায়। রাত ১২ টার দিকে হাসিনার সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। একটার দিকে হাসিনা শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। এবং চোখের সামনেই ঝলসে যায়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেষে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় বলে জানান তিনি। স্ত্রীর দাফন শেষ তিনি শ্বশুরবাড়ি ঢাকাতেই অবস্থান করছেন বলে জানান। সূত্র: মানবজমিন

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: