খালেদা জিয়ার জামিন কত দূরে

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:১৩ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জামিনে ছাড়া পাচ্ছেন তা এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অরফানেজ মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার আগেই আরো তিনটি মামলায় গতকাল সোমবার খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আর এই তিন মামলায় আদালতে তাকে হাজির করতে কারাগারে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ৩৪টি মামলার তদন্ত অথবা বিচার কাজ চলমান রয়েছে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলেই মামলাটি রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে। ফলে এসব আইনি ধাপ অতিক্রম করে খালেদা জিয়া জামিনে ছাড়া পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যেতে পারে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, আপিলে জামিন চাইবেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে দুদক জামিনের বিরোধিতা করে উচ্চ আদালতে বক্তব্য রাখার ঘোষণা করেছে। যদি জামিন হয় তাহলে তারা আপিল বিভাগে ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করতে পারে। ফলে বিষয়টি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় আটকে যাবে। এসব আইনি প্রক্রিয়া অতিক্রম শেষেই খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ফায়সালা হবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এই রায় ৬৩২ পৃষ্ঠার। রায় ঘোষণার পর ওইদিনই রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিন্তু গতকাল সোমবার পর্যন্ত রায়ের অনুলিপি পাননি তারা। একদিকে অনুলিপি পেতে বিলম্ব, অন্যদিকে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এম মাহবুবউদ্দিন খোকন ইত্তেফাককে বলেন,  আমরা বারবার বলেছি সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দুদককে ব্যবহার করে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়েরকৃত মামলা চালিয়ে এবং অর্থ আত্মসাত না করা সত্ত্বেও বিএনপি চেয়ারপারসনকে ওই মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। ওই সাজা দেওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে দায়ের করা দণ্ডবিধির তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় এটাই প্রমাণিত হয় যে, জিয়া অরফানেজ মামলায় সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিলো। তিনি বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালার গেজেট অনুসারে ওই আদালতের নিয়ন্ত্রণ এখনো আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে। সেহেতু অরফানেজ মামলার রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিলম্ব হচ্ছে তাতে সরকারের হাত থাকতে পারে। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন বলেন, রায়ের অনুলিপি পেতে বিলম্ব হওয়ায় আপিল দায়ের করতে পারছেন না খালেদা জিয়া। আর আপিল দায়ের করতে না পারায় তার জামিন প্রাপ্তি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে দুদকের কৌসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, রায়ের কপি পাওয়ার বিষয়টি আদালতের প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। হাইকোর্ট কোন মামলায় রায় দিলেই আমরা কি কালই সত্যায়িত অনুলিপি পাই? অরফানেজ মামলার রায়ের অনুলিপি কবে পাব তা এই মূহুর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করছি শিগগিরই পাব।

এদিকে অরফানেজ মামলার রায়ের অনুলিপি পেতে ফলিও (যে কাগজে রায়ের নকল দেওয়া হয়) জমা দিয়েছে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। গতকাল বিশেষ জজ আদালত-৫ এ খালেদা জিয়ার পক্ষে এ ফলিও জমা দেওয়া হয় বলে জানান আইনজীবী জাকির হোসেন ভূইয়া। তিনি বলেন, বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। এখন কেন রায়ের অনুলিপি পেতে বিলম্ব হবে?

তিন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো খালেদা জিয়া

নাশকতার পৃথক তিনটি মামলায় গতকাল খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে শাহবাগ থানার মামলায় ১৮ ফেব্রুয়ারি এবং তেজগাঁও থানায় মামলায় ৪ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করার জন্য কারাকর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কুমিল্লায় বাসে অগ্নিসংযোগ ও মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায়ও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে এই মামলায় কবে নাগাদ তাকে আদালতে হাজির করতে হবে এ বিষয়ে কোন আদেশের অনুলিপি কারাকর্তৃপক্ষ এখনো পায়নি বলে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এম. আমিনুল ইসলাম বলেন, যেসব মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে সেসব মামলায় সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিন চাইতে হবে। যদি আদালত জামিন না দেয় তাহলে হাইকোর্টে জামিন চাইতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আদালতে হাজিরার জন্য পরোয়ানা ইস্যু করেছে সেহেতু খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতেই জামিন শুনানি হবে। সূত্র: ইত্তেফাক।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: