অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফ'র তাণ্ডব, শিশুসহ আহত ৮

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০১৮, ০৭:৩৮ পিএম

গুলি, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, ব্যাপক হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক তান্ডবলীলা চালিয়েছে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। বুধবার (২১ মার্চ) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ তান্ডবলীলা চালায় ইউপিডিএফ।

ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠনের ডাকে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের এসব ঘটনায় ১ শিশু, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, ঔষুধ কোম্পানীর ম্যানেজার, ড্রাইভারসহ ৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে একাধিক গাড়িতে। মারধর করা হয়েছে যাত্রী ও চালককে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জেলা সদরের খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের ৪মাইল রাবার বাগান এলাকায় বিকাল সাড়ে ৪টায় মো: খায়রুল ইসলাম (৩৬) নামে ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর জেলা ম্যানেজারকে লক্ষ্য করে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিকেটাররা। 

সাথে সাথে তার মটরসাইকেলে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহতবস্থায় তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করলে অবস্থা আশঙ্খাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্রগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করেন। আহত ঔষুধ কোম্পানীর ম্যানেজার চট্রগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ওয়াহিদপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে বলে জানা গেছে। 

খাগড়াছড়ির রামগড়ে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিকেটারদের বন্দুক হামলায় এক সিএনজি চালক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে যাত্রী নিয়ে দু’টি সিএনজি রামগড়ের কলাবাড়ী এলাকায় পৌঁছলে অবরোধকারীরা অতর্কিতে গুলি চালালে ড্রাইভার শরিফুল ইসলাম (২২) গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় পিকেটাররা গাড়ি দু’টি ভাংচুর করার সময় ইট আর পাথরের আঘাতে ৭মাসের এক শিশুকন্যাও আহত হয়। গুলিবিদ্ধ শরিফুল নাকাপা মধুপুর গ্রামের মমিনূল হকের সন্তান।

বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ইউপিডিএফের পিকেটাররা খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে একটি প্রাইভেট কারে অগ্নিসংযোগ করলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাসুদসহ তিনজন আহত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে পুরো প্রাইভেট কারটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

মানিকছড়ি সূত্র জানায়, সকাল ৬টার দিকে মানিকছড়ি উপজেলার জামতলা (পিচলাতলা) এলাকায় চট্রগ্রাম থেকে আসা বিআরটিসির চট্রমেট্রো-ট ১১-১৩৫২ ট্রাক গাড়ীটি ভাংচুর করে পিকেটাররা। এ ঘটনায় গাড়ীর চালক ড্রাইভার মো: আবুল কাশেম(৪৫) আহত হয়। এবং সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা সেগুন বাগান এলাকায় একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে ইউপিডিএফ সমর্থিত পিকেটাররা।

এদিকে লক্ষীছড়ি জোন সদর হতে ৬ কি:মি: পশ্চিমে মংহ্লাপাড়া নামক স্থানে রাস্তার উপরে অবরোধকারীরা টায়ারে আগুন দেয় এবং ১ টি জীপ গাড়ির গ্যাস ভাংচুর করে। বুধবার সকালে গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়িতে টহলরত পুলিশ সদস্যদের উপর ইউপিডিএফের সদস্যরা মারবেল দিয়ে গুলতি মারে। গুলতির আঘাতে গুইমারা থানার পুলিশ সদস্য উত্তম কুমার পাল নামে একজন আহত হয়েছে।

অবরোধে খাগড়াছড়ি শহরে কিছু রিক্সা অটোরিক্সা চললেও দূরপাল্লা ও উপজেলার অভ্যরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গীব্রীজ এলাকায় সড়কের উপর অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে পিকেটাররা। 

এসময় পিকেটারদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পানছড়ি উপজেলার কলেজ গেইট এলাকায় সড়কের উপর পিকেটিংয়ের চেষ্টাকালে পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া পাল্ট ধাওয়ায় পুলিশ ১৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাহউদ্দিন জানান, বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

প্রসংগত; গত রোববার (১৮ মার্চ) রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ির আবাসিক এলাকা থেকে দুই নারী নেত্রীকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা আহবায়ক ধর্মশিং চাকমা আহত হয়। 

এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রসীত খীসা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন যৌথভাবে এ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।


 

বিডি২৪লাইভ/এমআরএম

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: