পা অকেজো, তবুও থেমে নেই রহমান!

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০১৮, ০৫:১৫ পিএম

২৫ বছর বয়সে ঘাতক রোগ টাইফয়েড কেড়ে নেয় আব্দুর রহমানের দুটি পা। এর পর নিভু নিভু করা জীবনের ভবিষ্যত যেন নিভে যায়। দরিদ্র বাবা মায়ের পক্ষে চিকিৎসা তো দুরের কথা তার মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাই যেন তাদের আরেকটি দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম ছিল।

থেমে যায়নি সে, আমৃত্যু থামবেও না। দুটি পা হারালেও হারায়নি মানসিক শক্তি। সেই শক্তিই তাকে জোগায় মনের সাহস। চাইলে ভিক্ষাবৃত্তির সহজ পথ বেছে নিতে পারতো। কিন্তু সেটায় পাপ, হেরে যেতে হবে নিজের কাছেই। দারিদ্রতাকে জয় করে পরিবারের মুখে তুলে দিতে হবে একমুঠো অন্ন।

জীবন সংগ্রামী ঠাকুরগাঁও বড় খোঁচাবাড়ির আব্দুর রহমান বলেন, পা দুটো প্যারালাইজড হওয়ার পর থেকে অনেকটা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। শুধু মাথা গোঁজার মতো ভিটেমাটি ছাড়া দুই মেয়ে ও স্ত্রী ভরণ পোষণের মত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিলো না ঘরে।

এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছে বার বার গিয়েও কোন সহযোগিতা পায়নি। কয়েক বছর পর ধার দেনা করে একটি মোটর ভ্যান তৈরি করেন আব্দুর রহমান। পা দুটো হারানো আব্দুর রহমানের মোটর ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরেই শুরু হয় নতুন জীবন যাত্রা। সারা দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মত আয়। তবে শারীরিক অক্ষমতা থাকায় অনেকেই ভ্যানে উঠতে দ্বিধাবোধ করেন। তাতে ক্ষতিও হয় তার বেশ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংগ্রামী জীবন চালিয়ে যেতে হয় তাকে। দু’বেলা দু’ মুঠো ভাত, স্ত্রী ও নিজের ওষুধ এবং মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বয়সের ছাপ যেন তার কপালে ভাঁজ পড়েছে। চল্লিশ বছর বয়সি রহমান জানান, সংসার ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বাধ্য হয়ে তাকে ভ্যান চালাতে হচ্ছে।

একদিন গাড়ি না চালালে পরের দিন জোটেনা ভাত। প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা পাওয়া তার অধিকার সেটাও পান না তিনি। আব্দুর রহমানের প্রতিবেশীরা জানান, দীর্ঘ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন তিনি। এত কষ্টের পরেও তাকে অনেক সময় অনাহারে জীবন কাটাতে হয়।

কোনো জন প্রতিনিধি ও কোনো দলের নেতা কেউ খোঁজ নেয় না তার। দু পা হারানো এই সংগ্রামী জীবন থেকে মুক্তি পেতে আব্দুর রহমানের আকুতি কেউকি নেই তাকে মুক্তি দেয় এই অভিশপ্ত জীবন থেকে। চাইলেই সমাজের বিত্তবানরা সুযোগ করে দিতে পারেন একটি ভালো কাজের। জনপ্রতিনিধিরা চাইলেই করে দিতে পারে তার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা। একটু সহযোগিতা পেলে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: