পলিথিনের ক্লুতে ধরা পড়ে খুনি!

প্রকাশিত: ১৬ আগষ্ট ২০১৮, ১০:৪৭ পিএম

গত ১৫ জুন রাত ৯টার দিকে খেলার কথা বলে খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভুইয়াপাড়ার ২১৫/৫ নম্বর বাড়ি থেকে নিনাদ (৮) বের হওয়ার পর আর খোঁজ পায়নি পরিবার। পরে ১৬ জুন ঈদের দিন তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ির পাশের একটি ঢাকনাওয়ালা ভ্যানগাড়িতে। 

এ ঘটনায় নিনাদের বাবা স্বপন বেপারী অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন। সেই মামলাটি থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। ডিবি মাসখানেকের বেশি সময় তদন্ত করে হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

এ ব্যাপারে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, ছোট্ট এই ছেলেটিকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছে, কোথায় লাশ মোড়ানো হয়েছে সব তথ্যই আমরা পেয়ে গেছি। এখন শুধু আর কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

জানা যায়, নিনাদের নানি ছালেহা বেগমের বড় ভাই জহিরুল। জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জহিরুলসহ অন্য ভাইদের সঙ্গে বিরোধ চলছিল ছালেহা বেগমের পরিবারের। নিনাদ, তার মা সোনিয়া ও বাবা স্বপন বেপারী ছালেহা বেগমের বাড়িতে বাস করতেন। ছালেহা বেগমের সঙ্গে তাঁর ভাইদের বিরোধের কারণে নিনাদের বাবা ছালেহাকে সহযোগিতা করে আসছিলেন। এ কারণে নিনাদের পরিবারের প্রতি আক্রোশ জন্মে জহিরুল ইসলামের। জহিরুলের বাড়ি ও নিনাদদের বাড়ির মাঝামাঝি সাদিকের মুদি দোকান।

গত ১৫ জুন তথা ঈদুল ফিতরের আগের রাত ১২টার দিকে সেই দোকানে যান জহিরুল। এ সময় তাঁকে কিছুটা উদ্ভ্রান্ত দেখা যায়। তিনি সাদিকের কাছে একটি বড় পলিথিন চান। সাদিক তাঁকে ১৫-২০টি চিপস রাখার একটি বড় পলিথিন দেন। পলিথিন নিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরই সাদিক দেখতে পান তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে জহিরুল কাঁধে করে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ভাবেন পাশেই আবর্জনা ফেলার জায়গা সেখানে বাড়ির কিছু হয়তো তিনি ফেলতে যাচ্ছেন। সেই আবর্জনার কাছেই রাখা ছিল তিনটি ঢাকনাওয়ালা ভ্যানগাড়ি। কিন্তু পরদিন নিনাদের লাশ পাওয়ার পর তিনি ঘটনা বুঝতে পারেন। এরই মধ্যে পুলিশের কথা হয় সেই সাদিকের সঙ্গে।

জানা গেছে, মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের পর ডিবি কর্মকর্তারা জহিরুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সাদিকের কাছ থেকে পলিথিন নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে জহিরুল অস্বীকার করেন। উল্টো তিনি বলেন, তাঁর সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকার কারণে সাদিক তাঁকে ফাঁসাতে চাইছে। এ ছাড়া তিনি নিনাদকে হত্যা করেননি বলেও দাবি করেন। কিন্তু সাদিকের কাছ থেকে পলিথিন নেওয়ার বিষয়টি একাধিক ব্যক্তি দেখার কারণে তদন্তকারীদের সন্দেহ আরো পোক্ত হয়।

অন্যদিকে নিনাদের নানি ও মামাদের সঙ্গে জমির বিরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে গত পাঁচ বছরে জহিরুল কোনো দিন তাঁদের বাড়ি যাননি। কিন্তু নিনাদ যেদিন নিখোঁজ হয় সেদিন রাত ১টা বা তার কিছু সময় পর জহিরুল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সান্ত্বনা দিতে নিনাদদের বাড়ি যান। 

এদিকে নিনাদকে হত্যা করে লাশটিও কাঁধে করে বহন করছিলেন জহিরুল নিজেই। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও যেখানে লাশটি কাপড় দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল সে তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া ভ্যানগাড়ির দরজার তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকিয়ে অন্য তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ কাজে আর কে কে সহযোগিতা করেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টায় আছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী বলেন, খুব গুরুত্ব দিয়ে নিনাদ হত্যা মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। রহস্য উদ্ঘাটনের খুব কাছাকাছি আমরা। সাক্ষ্য, তথ্য-প্রমাণ মিলিয়ে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জহিরুলের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। আর কারা জড়িত আছে সেটা এখন জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। 


বিডি২৪লাইভ/এএইচআর


 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: