চীন থেকে ফিরে ঠান্ডা মাথায় সাবেক স্বামীকে খুন!

প্রকাশিত: ১৮ আগষ্ট ২০১৮, ০৬:১০ পিএম

চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ফয়’স লেকের লেকভিউ আবাসিক হোটেল থেকে এক যুবককের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটির দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গেছে।

জানা যায়, সুদূর চীনে বসেই সাবেক স্বামী মাঈনউদ্দিন ওরফে শাহরিয়ার শুভকে খুনের পরিকল্পনা করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ডা. রোকসানা আক্তার (২২)। ১৫ আগস্ট দেশে এসে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ আগস্ট শুভকে হত্যা করেন তিনি। হত্যার পর মাথাটি ফেলা হয় হোটেলের ডাস্টবিনে, আর দেহ তোষক মুড়িয়ে খাটের উপর ঢেকে রাখা হয়।

এরপর ফের বিদেশ পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নেন ডা. রোকসানা আক্তার। তবে তার আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন তিনি।

নিহত শাহরিয়ার শুভ ছাগলনাইয়া উপজেলার ৯ নম্বর শুভপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ড বালিরচর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আটক রোকসানা আক্তার ওরফে পপির বাড়ি জেলার মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট মেহেদী নগর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু আহম্মদ।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) সোহেল রানা বলেন, পপির সাথে চার বছর আগে মাঈনুদ্দিনের গোপনে বিয়ে হয়। পরে মেয়েটি ডাক্তারি পড়ার জন্য চীনে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পপি জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে তাদের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। চীনে যাওয়ার পর থেকে তার নানা অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন মাঈনুদ্দিন। এর জের ধরে পপি দেশে ফিরে একাই মাঈনুদ্দিনকে জবাই করে হত্যা করেছেন।

জানা যায়, চীনে অবস্থানের সময় বিভিন্ন কারণে পপির সঙ্গে শুভর সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। আবার এরই মধ্যে মিরসরাই এলাকায় অপর এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পপি। এ নিয়ে পপির সঙ্গে শুভর বিরোধ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এ নিয়ে শুভ বেশ কয়েকবার পপির ওই ‘কথিত’ প্রেমিককে খুঁজে বের করতে মিরসরাইতে যান। পরে তার চাপে পপি বৃহস্পতিবার দেশে আসতে বাধ্য হন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পপি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে শাহরিয়ার তার এক বন্ধুকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে ঢাকায় যান। পরে বন্ধুকে প্রাইভেটকারসহ ছেড়ে দিয়ে শুভ পপিকে নিয়ে আলাদাভাবে বাসে করে চট্টগ্রাম ফেরেন। পরে বিকেলে তারা ফয়স লেকের লেকভিউ মোটেলে ওঠেন।

নিহতের বড় ভাই মো. জাফর উদ্দিন বলেন, রোকসানা সম্পর্কে মামাতো বোন। তারা ভাড়া বাসা নিয়ে থাকে নগরের ২ নম্বর গেইট আল ফালাহ গলির রশিদ ভবনে। তবে গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জের মেহেদী নগর।

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি ছাগলনাইয়া জয়পুর বালুর চর এলাকায়। গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আসার সুবাধে স্কুল জীবনেই শুভর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে আমাদের কাউকে না জানিয়ে তারা দুইজন কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে।

জাফর বলেন, বিয়ের খবর জানাজানি হওয়ার পর পথের কাটা হয়ে দাঁড়ায় রোকসানার মা নাছিমা বেগম। এরপর থেকে রোকসানার জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য শুভকে একের পর এক হুমকি দিতে থাকে। ২০১৪ সালে নাছিমা বেগম রোকসানাকে বাধ্য করে শুভকে তালাক দিতে। এরপর রোকসানাকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয় চীনে।

জাফর বলেন, গত দেড় থেকে দুই মাস আগে রোকসানা আবার শুভকে ফোন করা শুরু করে। পরে দেশে আসবে বলে টাকা চায়। শুভ দেশে আসা-যাওয়ার বিমান টিকেট ও তার কেনাকাটার জন্য দুই লাখ টাকা পাঠিয়ে দেয় শুভ। সে টাকা পেয়ে দেশে এসে মাত্র একদিনের মাথায় খুন করে শুধু তার জীবন থেকে নয়, পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে।

জাফর বলেন, শুভ জয়দেবপুর সরেজমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছে। জয়দেবপুর ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল শুভ।

থানায় দায়ের করা মামলায় মো. জাফর উদ্দিন উল্লেখ করেছেন, গত ১৫ আগস্ট হযরত শাহজাহালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে নামে রোকসানা। বিকেল তিনটার দিকে শুভ রোকসানাকে রিসিভ করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

রাত দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশীর ফয়স লেকসিটি মোটেল ফাইভের দ্বিতীয় তলার ২০৩নং কক্ষ ভাড়া নিয়ে উঠে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শুভকে ঘুমের কিছু খাইয়ে ঘুমের মধ্যেই ধারালো ছুরি ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। এরপর মাথা হোটেল কক্ষের রক্ষিত ডাস্টবিনে এবং দেহ তোষক দিয়ে মুড়িয়ে খাটের উপর ঢেকে রাখে।

খুলশী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নোমান বলেন, মোটেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে ‘লেক ভিউ মোটেল’-এর দ্বিতীয় তলার ২০৩ নম্বর কক্ষ থেকে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতের মাথা শরীর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল।

এ ব্যাপারে ভোর ৪টার দিকে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানান।

ডা. রোকসানা আক্তার পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন ছুরি ও চাপাতি দিয়ে শুভকে গলাকেটে হত্যার পর দেহ থেকে মাথাটি পৃথক করেছেন তিনি। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ- সিএমপির খুলশী থানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, খুনের কাজে ব্যবহৃত একটি ছুরি ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।

নগরের ফয়স লেক এলাকার লেকসিটি মোটেল ম্যানেরজার মো. ইলিয়াছ জানান, ডা. রোকসানা আক্তার ও মাঈন উদ্দিন ওরফে শাহরিয়ার শুভ ১৫ আগস্ট বুধবার দিনগত রাত দেড়টার সময় হোটেলে আসেন। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা একটি কক্ষ ভাড়া নেন।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে রোকসানা একা হোটেল থেকে বের হয়ে ঘণ্টা খানেক পর ফিরে আসেন। এরপর রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার দিকে ডা. রোকসানা আবার তড়িগড়ি করে বের হচ্ছিলেন। এসময় কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করলে রোকসানা জানান, একটি টেইলার্সে কিছু ড্রেস সেলাই করতে দিয়েছি, সেগুলো আনতে যাচ্ছি। কাল শুক্রবার, কিছুক্ষণ পর দোকান বন্ধ করলে আর নিতে পারবো না।

মো. ইলিয়াছ জানান, রাত ১২টার দিকেও যখন ডা. রোকসানা ফিরেনি, তখনই পুলিশকে খবর দেই। আর পুলিশ এসে বাহির থেকে তালাবদ্ধ কক্ষটি খুলে লাশ উদ্ধার করে।


বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: