বদলে যাচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ১৯ আগষ্ট ২০১৮, ১২:০৪ এএম

অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থা নিরাপদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে। 

সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত

১. চলন্ত অবস্থায় সব গণপরিবহনের দরজা বন্ধ রাখতে হবে, নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না।

২. গণপরিবহনের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর ও মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডিএমপি ও বিআরটিএ দায়িত্ব পালন করবে।

৩. সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট এবং সিগন্যাল আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ডিএমপি।

৪. সব মহাসড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (বিশেষত দূরপাল্লার বাস) চালক এবং যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার এবং পরিবহনগুলোকে সিটবেল্ট সংযোজন করতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিআরটিএ এবং বাংলাদেশ পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সভায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় ৯টি সিদ্ধান্ত এবং পরিবহনের ফিটনেস ও লাইসেন্সের জন্য চারটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

সড়ক ব্যবস্থাপনার ৯ সিদ্ধান্ত

১. রাজধানীর যেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে, সেসব স্থানের উভয় পাশের ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস ব্যবহার করবে তাদের ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

২. শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করে ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। সড়কের নামফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করতে হবে।

৩. ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০ আগস্টের মধ্যে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ৩০ আগস্টের মধ্যে বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. ট্রাফিক সপ্তাহের চলমান কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপিকে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৫. স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে সিটি করপোরেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃত্ব পুলিশকে হস্তান্তর করতে হবে। এ জন্য আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিএনসিসি ও ডিএমপিকে সময় দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনিষ্পন্ন বাংলাদেশ পুলিশ থেকে পাওয়া ‘জনবল’বিষয়ক প্রস্তাবের সব সিদ্ধান্ত সমন্বয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ফোকাল পয়েন্টে কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবেন।

৬. শহরে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালিং পদ্ধতি চালু করা। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ডিএমপি।

৭. দুই সিটি করপোরেশনকে রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি দৈবচয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা নেওয়া হবে। শহরের অন্যান্য স্থানেও প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য মোবাইল কোর্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিএমপি ও বিআরটিএকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

৯. স্কুল সময়ে যেখানে-সেখানে রাস্তা পারাপার বন্ধেও সভায় আলোচনা হয়েছে। এ জন্য শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠান ছুটি বা শুরুর আগে অপেক্ষাকৃত বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসির সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।

ফিটনেস এবং লাইসেন্সসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত

১. অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ফিটনেস সনদ প্রদান প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দর্শনপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ।

২. লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ‘লার্নার’ সনদ দেওয়ার সময় ড্রাইভিং টেস্ট নেওয়া যেতে পারে বলেও মতামত দেওয়া হয়। এ ছাড়াও উত্তীর্ণদের দ্রুত লাইসেন্স প্রদান করতে হবে।

৩. রুট পারমিট বা ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই।

৪. কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণে পদক্ষেপ নেবে বিআরটিএ।

ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং যানজট নিরসনে এর আগে গৃহীত পদক্ষেপগুলো গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট ফের বিশ্লেষণ করে আবার একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বরাবর উপস্থাপন করবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: