কিছুদিনের মধ্যে রায়, প্রমাণিত হলে সবার মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০১৮, ১১:১২ এএম

বিচার ঠেকাতে উচ্চ আদালতে আসামিপক্ষের পাঁচবার ছুটে যাওয়া, সাক্ষীদের জেরায় একই কথা বারবার টেনে আনা আর নানা কৌশলে সময়ক্ষেপণে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রত্যাশিত রায় মেলেনি এখনও।

দুই বছর ধরেই বলা হচ্ছিল আগামী ২১ আগস্টের মধ্যেই রায় ঘোষিত হবে। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। তবে মামলা এখন যে পর্যায়ে তাতে রায় ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর প্রত্যাশা, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯ আসামির অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হওয়ায় সব আসামির মৃত্যুদণ্ড হবে। তদন্তকে ভিন্নখাতে নিতে জজ মিয়া নাটক এবং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের গড়িমসির কারণে এই মামলা নিষ্পত্তি করতে এতদিন সময় লেগেছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় ২২ জন নিহত ও দুই শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় মোট দুটি মামলা হয়। তদন্তকে ভিন্নখাতে নিতে জজ মিয়া নাটক, আসামিপক্ষের গড়িমসি এবং আইনজীবীদের উচ্চ আদালতে দৌঁড়ঝাপের কারণে কেটে গেছে ১৪ বছর।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী জানান, মামলা বিচার এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এই মামলার বিচারকাজ শেষ হবে।

চিফ প্রসিকিউর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘এই মামলার প্রকৃত আসামিকে আড়ালে রাখার জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ট যারা ছিলেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। বাবরের পক্ষে এখন যুক্তিতর্ক চলমান অবস্থায় আছে। এরপরে রায় এবং আদেশের জন্য তারিখ ঠিক হবে।’

মামলার যুক্তিতর্কে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে দেশি-বিদেশী ৫টি জঙ্গি সংগঠন জড়িত থাকার কথা জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষে। যার পুরো পরিকল্পনায় ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর,বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম পিন্টুসহ পুলিশ ও গোয়েন্দাসংস্থা। সৈয়দ রেজাউর রহমানের দাবি,সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।

যদিও আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, রাজনৈতিক কারণে তারেক ও বাবরকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ন্যায় বিচার হলে সব আসামি খালাস পাবে।

২০০৪ সালের এইদিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আরজেস গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভী রহমান সহ ২২ জন। আহত হন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'সহ দুই শতাধিক।

পলাতক রয়েছেন যারা

তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল এটিএম আমিন আহমদ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান পলাতক রয়েছেন।

এছাড়াও জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজ উদ্দিন, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবুকেও গ্রেফতার করা যায়নি।

এদের মধ্যে দুই আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন।

কারাগারে রয়েছেন যারা

গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এরর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, বিএনপি নেতা লুৎফজ্জমান বাবর ও  বিএনপি নেতা আবদুলস সালাম পিন্টু বিচার শুরুর আগে থেকেই কারাগারে।

জঙ্গি সদস্য শাহাদাত উল্লাহ জুয়েল, শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, ইউছুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর ওরফে আবু হুমাইয়া ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিব উল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সায়ীদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গির আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামীম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আবিদ হাসান সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামীম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জল ওরফে রতন ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়াও বন্দী আছেন।

যারা জামিনে রয়েছেন

এই মামলায় জামিনে আছেন খালেদা জিয়ার ভাগ্নে ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদাবক্স, সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও ঢাকা মহানগরীর ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফ।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: