সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জেও পশু কোরবানী

প্রকাশিত: ২২ আগষ্ট ২০১৮, ০২:১০ পিএম

ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা আজ বুধবার (২২ আগস্ট)। ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে ঐ/ এল আবার দুসরা ঈদ!/ কোরবানি দে, কোরবানি দে,/ শোন খোদার ফরমান তাগিদ...’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্যসুর আকাশ-বাতাস মন্দ্রিত করে মনপ্রাণ ভরে তুলছে ঈদের আনন্দ রোশনাইয়ে। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান মুসলমানরা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহার নামাজের পর কিশোরগঞ্জে পশু কোরবানি করেছেন।

সারাদেশের ন্যায় কিশোরগঞ্জ ১৩ উপজেলায় পশু কোরবানী করা হয়েছে। সকালে ঈদুল আজহার নামাজ শেষে একে একে কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলায় পশু কোরবানী করা হয়েছে।

কোরবানী হচ্ছে মুসলনমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। যুগ যুগ ধরে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। কোরবানী দেওয়ার রীতি পৃথিবীর আদিকাল থেকেই চলে আসছে। এর মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য অনেক। কোরবানী শব্দের অর্থ উৎসর্গ বা ত্যাগ। মূলত ঈদুল আজহা হচ্ছে পশু কোরবানীর মাধ্যমে নিজের অন্তরের পশুত্বকে জবাই করে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনে ত্যাগ স্বীকার করা।

ইসলামে বর্ণিত আছে, নিজের চোখ বেঁধে পুত্র ইসমাইলকে ভেবে যখন জবেহ সম্পন্ন করেন তখন চোখ খুলে দেখেন ইসমাইলের পরিবর্তে পশু কোরবানি হয়েছে, যা এসেছিল আল্লাহর তরফ থেকে। আল্লাহর নবি হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কর্তৃক পুত্র ঈসমাইল আলাইহিস সালামকে কোরবানীর পরীক্ষার মাধ্যমই বর্তমানে প্রচলিত কোরবানীর সূত্রপাত হয়েছে। 
ইসলামি শরিয়তে মুসলিম জাতির জীবনটাই একটি কোরবানীতুল্য। এ কোরবানী হতে পারে- জানের, মালের, সম্পদের, সময়ের, স্বার্থের, সামর্থ্যের, ইচ্ছার ও পশু জবাইয়ের। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থ, সম্পদ ও আত্মত্যাগের মহিমাই হলো কোরবানী।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান দিনটি এই শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত ভালোবাসা সম্পদে নয়, ভোগে নয় বরং ত্যাগে। মানুষের যা কিছু আছে তা অন্যের জন্য ত্যাগের মধ্যেই প্রকৃত সুখ। ঈদুল আজহার অর্থ নিছক পশু হত্যা নয় বরং ত্যাগ ও উৎসর্গের অঙ্গীকার। কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘ওরে হত্যা নয়, আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন।’

আল্লাহ্ তাআলা মুত্তাকিদের কোরবানী কবুল করেন। কোরবানীর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা। পশু কোরবানী হচ্ছে আত্ম কোরবানীর প্রতীক। আল্লাহ্ তাআলা নিজেই বলেছেন, পশুর গোশত, চামড়া, রক্ত কিছুই তার কাছে পৌঁছায় না। পৌঁছায় শুধু বান্দার তাকওয়া ও পরহেজগারি।

ঈদগাহ, খোলা মাঠ বা মসজিদে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যার যার সাধ্যমতো পশু কোরবানি করছেন।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সুন্নত হিসেবে কোরবানির গোশতের তিন ভাগের এক ভাগ গরিবের হক ও এক ভাগ আত্মীয়ের হক হিসেবে বণ্টন করা হয়। বাকি এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা হয়। 

জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি করা যায়। তবে মহানবী (সা.) ১০ জিলহজ ঈদুল আজহার দিন কোরবানি করাকেই উত্তম ঘোষণা করেছেন।

পরিশেষে মহান স্রষ্টার প্রতি যথার্থ আনুগত্য প্রদর্শন, তাঁর সন্তুষ্টি ও মানব কল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করার জন্য ধর্মীয় অঙ্গীকার ঘোষণায় সামাজিক আনন্দের উৎসব হিসেবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় সারা বিশ্বে। তাই আমাদের ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করতে হবে। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধকে জাগ্রত করতে হবে। যথাযথভাবে কোরবানী করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও বান্দার ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। তবেই কোরবানী পালনের যথার্থতা উপলব্ধি করা সম্ভবপর হয়ে উঠবে।

বিডি২৪লাইভ/আরআই

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: