‘ককপিটে পাইলটের ধূমপান’ কীভাবে জানলো তারা?

প্রকাশিত: ২৮ আগষ্ট ২০১৮, ১০:২৩ এএম

নতুন করে আলোচনায় এসেছে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি। সোমবার (২৭ আগস্ট) নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয় ফ্লাইটের পাইলট প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ককপিটের মধ্যে ক্রমাগত ধূমপান করেছিলেন। আর এসব তথ্যের সূত্র হিসেবে নেপাল সরকারের তদন্ত দলের প্রতিবেদনকে উল্লেখ করেছে তারা।

এদিকে তদন্ত দলের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত থাকা এক সদস্য জানিয়েছেন, ‘ইউএস বাংলার দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন এখনও শেষ হয়নি। তারা কীভাবে জানলেন পাইলট ধূমপান করছিলেন।’

জানা যায়, নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনার তদন্তের সঙ্গে এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি)-এর ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যুক্ত হয়। বিমানটির ব্ল্যাকবক্সের তথ্য ডিকোডের কাজ শুরু হয় ২৩ এপ্রিল থেকে। এছাড়া তদন্তের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিমান, সেই ফ্লাইটের পাইলট ও কো-পাইলটসহ অন্যান্য বিষয়ের ২০০-এরও বেশি ডকুমেন্ট পাঠানো হয় নেপালে।

বাংলাদেশ থেকে তদন্ত দলে যোগ দেওয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেন এএআইজি-বিডি’র প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। এছাড়াও তদন্তে ইউএস-বাংলার ড্যাস-৮-কিউ-৪০০ বিমানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কানাডার বোম্বারডিয়ারের দুই সদস্যও ছিলেন।

তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এএআইজি-বিডি প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন এম রহমতুল্লাহ বলেন, প্রতিবেদন তৈরিতে আমরা অনেক দূর প্রগ্রেস করেছি। তবে তদন্ত শেষে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুত হতে আরও সময় লাগবে। ফলে এখনই কোনও বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যাবে না। রিপোর্ট প্রস্তুত হওয়ার পর নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন মন্ত্রীর কাছে তা দেওয়া হবে। তার কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর সেই রিপোর্ট ইন্টারন্যাশনাল বডি’কে পাঠানো হবে। যাদের কাছ পাঠানো হবে তাদের মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও), যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এবং আরও কিছু প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, তাদের ৬০ দিন সময় দেওয়া হবে প্রতিবেদনটি দেখে কোনও কমেন্ট বা অভজারভেশন থাকলে তা দেওয়ার জন্য। এরপর তাদের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর কমপাইল করে ফাইনাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে এবং তারপর তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।

&dquote;&dquote;ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন আর বলেন, রিপোর্টটি পাবলিশ করা হলে তখন আমি আপনাদের (গণমাধ্যম) বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে জানাবো।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ-৮ কিউ 8০০ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে চারজন ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি পাইলট ও কো-পাইলটসহ চারজন ক্রু এবং আরও ২৩ জন বাংলাদেশি, ২৩ জন নেপালি ও একজন চীনা যাত্রী নিহত হন। আহত হন ৯ জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।

সোমবার (২৭ আগস্ট) এই বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গঠিত নেপাল সরকার কর্তৃক গঠিত তদন্ত দলের সূত্র দিয়ে পাইলটের ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করে কাঠমান্ডু পোস্ট। খবরে বলা হয়, বিমানটির পাইলট আবিদ সুলতান ব্যক্তিগত মানসিক চাপ ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। আর তার ধারাবাহিক কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

এক ঘণ্টার ওই ফ্লাইটে সুলতান ক্রমাগত ধূমপান করেছিলেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক এই পাইলটের সাড়ে ৫ হাজার ঘণ্টার উড্ডয়নের রেকর্ড ছিল। তবে তিনি তার ধূমপানের অভ্যাস থাকার তথ্য বিমান সংস্থাকে জানাননি। এ থেকে তদন্তকারীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ককপিটে থাকার সময়ে তিনি মানসিক চাপে ছিলেন।

কাঠমান্ডু পোস্ট এই সংবাদ প্রকাশের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদনকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ, তদন্ত প্রতিবেদন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে একপেশেভাবে পাইলটকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্ত দুর্ঘটনার আগে নেপালের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে পাইলটকে বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা দেওয়ার যে অভিযোগ ছিল, সে বিষয়ে কোনও তথ্য প্রতিবেদনে নেই।

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনটি অসত্য বলে দাবি করেছেন ইউএস বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, তদন্ত তো এখনও শেষ হয়নি, তদন্ত কমিটি এখনও আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। তাহলে রিপোর্ট কোথা থেকে পেল কাঠমান্ডু পোস্ট।

তিনি আরও বলেন, ককপিটে ধূমপানের কথা বলা হয়েছে, তারা এটা কীভাবে জানালো? ককপিটে তো সিসি ক্যামেরা নেই। আবার বিমানের ভেতরে সামান্যতম ধোঁয়া হলে ফায়ার অ্যালার্ম বাজবে। ফলে ধূমপানের বিষয়টি কাল্পনিক। এছাড়া যে মানসিক চাপের কথা বলা হচ্ছে এটিও সঠিক নয়। মূলকথা, তদন্ত প্রতিবদেন প্রকাশের আগে কোনও তথ্যই সঠিক বলা যাবে না।

বিডি২৪লাইভ/ওয়াইএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: