চামড়ার মূল্য ধস, এতিমদের সর্বনাশ!

প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:২০ পিএম

আহমেদ ফেরদাউস খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:

দেশের কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক এতিমখানাগুলোর প্রধান আয় কোরবানির চামড়া থেকে পাওয়া লাভ্যাংশ। এতিমদের খরচের অধিকাংশই আসে এই খাত থেকে। মূলত তারা কোরবানির দিন কম বা বিনামূলে চামড়া সংগ্রহ করে বাজার দরে বিক্রি করে অর্জিত আয় দিয়েই খরচ মিটায়। এ বছর চামড়ার মূল্য ধসে সর্বনাশ হাজার হাজার এতিমখানার। অন্যান্য বছরের মতো আয়ের চিন্তা থাকলেও চামড়ার মূল্যে ধসে সে আশায় গুড়েবালি। এখন কিভাবে এতিমদের পুরো বছরের ভরণপোষণ করবে এনিয়ে দুর্ভাবনায় সংশ্লিষ্টরা। তবে আল্লাহর উপর ভরসা করেই চলতে চান বলে জানিয়েছেন তারা।

দেশে মাদ্রাসাভিত্তিক কি পরিমাণ এতিম খানা রয়েছে তার সরকারি কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে বেসরকারি হিসেব মতে, কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এতিমখানার সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি। এসব এতিমখানাগুলোতে সকলেই বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পায়। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই তাদের থাকা-খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ বহন করে।

এছাড়া এ এতিমখানাগুলোতে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে বা অনেকে নামমাত্র মূলে পড়াশুনা করার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এতিমখানা রয়েছে যেখানে নির্ধারিত কোন বেতন নেই। শিক্ষার্থীদের আর্থিক সচ্ছলতার উপর নির্ভর করে বেতন নেয়া হয়। কেউ নামমাত্র বেতনে দিচ্ছে, তবে বেশির ভাগ দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পড়াশুনা করছেন। যাদের ভরণপোষণ করে থাকে এতিমখানাগুলো।

জানা গেছে, ঈদুল আযহার সময় মাদ্রাসা ভিত্তিক এতিমখানা শিক্ষার্থীরা ছুটি না গিয়ে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিনা পারিশ্রমিকে কোরবানির গরু জবেহের কাজ করে থাকে। এর বিনিময়ে বিনামূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে চামড়া সংগ্রহ করে এতিমখানাগুলোতে নিয়ে আসেন। যাতে লবন লাগানোর কাজও এ সকল শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। তবে এ বছর দাম কম হবে বুঝতে পেরে এতিমখানাগুলো চামড়া সংগ্রহ করেননি। অধিকাংশ ছাত্রদের ছুটি দিয়েছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংশ্লিষ্টরা। তবে জনস্বার্থে কিছু শিক্ষার্থী বিভিন্ন এলাকায় বিনা পারিশ্রমিকে কোরবানির গরু জবেহের কাজে সাহায্য করেছেন।

এবিষয়ে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা নাজমুল হাসান বিডি২৪লাইভ কে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে লিল্লাহ ফান্ডের ১০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় আসে চামড়া খাত থেকে। আমাদের মাদ্রাসা চামড়ার আয় থেকে কম নির্ভশীল। অন্যান্য মাদ্রাসায় এর থেকে বেশি নির্ভশীল। চামড়া থেকে এবছর আশানুরূপ আয় হয়নি। তবে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করেই সবসময় চলি, এ জন্য আমরা বিচলিত নই। আল্লাহ সহায় হলে কোন সমস্যা হবে না।

তিনি বলেন, বাজারে দিন দিন সবকিছুর দাম বাড়ছে। এমনকি চামড়া থেকে তৈরিকৃত পণ্যের দামও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এভাবে কাঁচা চামড়ার দাম কমে গেলে শিল্পটি হুমকির মুখে পড়বে। শিল্পটি বাঁচাতে হলে বাজারের সাথে সামঞ্জ্য রেখেই মূল্য নির্ধারণ করা উচিৎ। এভাবে চামড়ার দাম হঠাৎ কমে যাওয়া এ খাতটি বা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। এ ব্যবসার সাথে অনেক মানুষ জড়িত রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বছর দাম কম হওয়ার আগের মতো আর চামড়া সংগ্রহ করিনি। সাধারণত আমরা ছাত্রদের মাধ্যমে চামড়া সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু এ বছর অধিকাংশ ছাত্রদের ছুটি দেয়া হয়েছে। তবে কিছু ছাত্র রাখা হয়েছে যাতে করে সমাজে যারা কোরবানি দেয় তাদেরকে সাহায্য করতে পারে। তবে তা চামড়া সংগ্রহের জন্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, যারা কোরবানি দিয়ে থাকে মূলত তারা কসাই দিয়ে গরু জবেহ করান না। মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে করান। মাদ্রাসার ছাত্ররা বিনামূল্যে এ কাজটি করে থাকেন। তবে চামড়ার দাম যদি হঠাৎ এভাবে কমে যায় তাহলে শিল্পটি নিরুৎসাহিত হবে। সমাজ ধীরে ধীরে মাদ্রাসা ছাত্রদের এ সেবা থেকেও বঞ্চিত হবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে ট্যানারি মালিকরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেন, এখানে ট্যানারি মালিকদের কোন হাত নেই। চামড়ার মূল্য কমার জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী। সরকারে দেয়া মূল্যে চামড়া ক্রয় করে থাকে বলে জানান বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের (টিএবি) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।

তিনি বলেন, আমরা লবণযুক্ত চামড়া ক্রয় করি এবং সেটির দাম সরকার থেকে নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরাও ওই দামে চামড়া কিনবো। সরকার নির্ধারিত মূল্যের কম দামে যদি আমরা কিনি তাহলে বলতে পারবেন আমরা এতিমদের হক নষ্ট করছি, তার আগে নয়। এখানে যারা দু-চারদিনের জন্য ব্যবসা করতে আসে তারা কিন্তু একটি ব্যবসা নিয়ে চলে যায়। এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখানে বড় একটি অংশ মাদ্রাসা ও এতিমখানার। আমিও মনে করি যে, এটি এতিমদের হক। এটি সরাসরি এতিমখানায় দিয়ে দেয়া উচিত। তাহলে চামড়াটি তাদের (ছাত্রদের) মাধ্যমে লবণ দিয়ে সরাসরি আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারে এবং সঠিক দাম পায়। আমাদের অনেক মালিক মাদ্রাসাতে গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।

এখানে যারাই পশু কোরবানি দেয়, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দেয়, চামড়াও এতিমদের দিয়ে দেন। তাহলে তারা এটি সংরক্ষণ করতে পারবে এবং সঠিক দাম পাবে। কিন্তু সরবরাহ প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক বছরই মধ্যস্বত্বভোগীরাই হস্তক্ষেপ করে এবং বিনিয়োগ করে। তারা কিন্তু খুব কম দামেই চামড়া কিনেছে। এখানে ট্যানারি মালিকদের দোষ দেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে তিনি মনে করেন।

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: