সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা কি সম্ভব?

প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩০ পিএম

সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের আলোচনার মধ্যে ভোটদান পদ্ধতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জনগণের আস্থা অর্জনের তাগিদ দিয়েছেন একজন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার।

তারা বলছেন, ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি ছেড়ে দিতে হবে জনগণ ও নির্বাচন কমিশনের ওপর। ছোট্ট পরিসরে কেন্দ্রেও ভোট করতে পারলে তা হবে পরীক্ষামূলক। ৩০০ আসন পুরোপুরি ইভিএম নির্ভর হতে ১০-১৫ বছর লাগতে পারে। একদিনে দেশজুড়ে ইভিএমে ভোট নেওয়াও চ্যালেঞ্জ হবে। সেক্ষেত্রে বিভাগওয়ারি ভোট চালুও করা যেতে পারে।

আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষভাগে ভোট হতে পারে এমন আভাসও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এরইমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচলিত ব্যালট পেপারের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচনী আইন (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২) সংশোধন প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন করেছে। যা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে। সংসদে বিল পাসের আগে আইন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিসভার সম্মতির প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে এখনও।

অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরিতে এ সংশোধন উদ্যোগ। আইন পাস হলেই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তবে আসন্ন একাদশ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি।

এ অবস্থায় রাজনৈতিক মহলে আওয়ামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এটা প্র্যাকটিসের ব্যাপার। আমাদের পরীক্ষামূলক করে দেখতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের ইভিএম নিয়ে কারিগরি বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. হায়দার আলী জানান, এ মেশিনটা ভালো ডিজাইন করা, এটা রিলায়েবল মেশিন। কীভাবে এর ব্যবহার হবে তা ইসির বিষয়।

আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, সারাদেশে ১০০-৩০০ কেন্দ্রে ইভিএম হলেও সেটা টেস্ট কেস। পুরোপুরি ইভিএম নির্ভর ভোট সম্ভব না।

ইসির হাতে তিন শতাধিক ইভিএম রয়েছে এখন। বর্তমানে একটি প্রকল্প চালুর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অধ্যাপক হায়দার আলীর মতে, পরীক্ষামূলকভাবে আসনভিত্তিক ১-২টি কেন্দ্র করতে পারে।

তিনি জানান, প্রতিটি আসনে যদি একটি করে কেন্দ্রেও ইভিএম দেয়; তবে ৩০০ আসনে ১৫০০ ইভিএম লাগবে, আর ১৫০ রিজার্ভড। প্রায় ১৭০০ মেশিন লাগবে। যদি দুই করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয় তাহলে ৬০০ কেন্দ্রে ৩০০০ থেকে ৩৩০০ মেশিন লাগেবে।

এ অধ্যাপক বলেন, প্রতি কেন্দ্রে ৫টা ভোটকক্ষ থাকে। একটা কেন্দ্রেই অত কঠিন অবস্থা, …এটা হিউজ ব্যাপার। একদিনে সারাদেশে ভোট নেওয়া মেশিন দিয়ে বেশ কঠিন ব্যাপার। দক্ষজনবল নিয়ে একদিনে এগুলো মেশিন রান করা টাফ সারাদেশে। ”

রংপুর, খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেটের প্রসঙ্গ টেনে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, “ইভিএমের ভোটদান পদ্ধতি, সিকিউরিটি, গুণগত মান- এগেুলো নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা, জনসতেনতা তৈরি করা দরকার।

আগামী দুই-তিন মাসে বেশি পরিমাণ ইভিএম প্রস্তুতও সম্ভব না বলে মনে করেন অধ্যাপক হায়দার আলী।

“এতো অল্প সময়ে বেশি ইভিএম প্রস্তুত করা সম্ভব হবে না। অল্প পরিসরে ব্যবহার করতে থাকুক, আর সচেতনতা তৈরি করুক। একদিন আসবে, আজ থেকে ১০ বছর, ১৫ বছর পর সবাই যোগ্য হয়ে যাবে। এটা জনগনে ব্যাপার; জনগণের অংশগ্রহণটাই বড় ব্যাপার। স্বতস্ফূর্তভাবে জনগণ যেদিন এটাকে মেনে নেবে সেদিন ইসি সার্থক।

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: