ভারতে বুদ্ধিজীবীদের বাড়িতে পুলিশের হানা

প্রকাশিত: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:০১ পিএম

প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ এনে ভারতের বামপন্থী বুদ্ধিজীবী ও অধিকারকর্মীদের বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ। ভারতের নানা শহর জুড়ে গত সপ্তাহে এ অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তার করলেও তাদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিষয়টি নিয়ে আদালতের আদেশে গৃহবন্দী থাকা অ্যাক্টিভিস্টদের আইনজীবীরা বলছে, তাদের মক্কেলরা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ একেবারেই হাস্যকর।

সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রমাণের দাবি করলেও সে প্রমাণগুলো আদালতে পেশ করেনি মহারাষ্ট্র পুলিশ যার কারণে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

পুলিশি অভিযানে আটক অন্তত পাঁচজন এখনও গৃহবন্দী। যাদের গত ২৯ আগস্ট ভারতের ন'টি শহর জুড়ে বামপন্থী লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিস্টদের বাড়িতে একযোগে যে পুলিশি অভিযান চালানো হয় তারই স্বীকার।

মহারাষ্ট্র পুলিশ একটি গোপন চিঠি পাওয়ার কথা বলছে, যাতে রাজীব গান্ধীর হত্যাকান্ডের ধাঁচে মিশন চালানোর উল্লেখ ছিল।

তবে সেই চিঠিটির উৎস কী, বা সেটি জাল কি না তা নিয়ে কিছুই বলছেনা তারা, ফলে এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বুদ্ধিজীবীদের একজন, দিল্লির গৌতম নওলাখার আইনজীবী নিত্যা রামাকৃষ্ণন বলছেন, গৌতমের ক্ষেত্রে আমি যেমন বলতে পারি মারাঠিতে লেখা একতাড়া কাগজ নিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে আসে। ওই কাগজগুলো ছিল গত ৩১ ডিসেম্বর পুনেতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে করা এফআইআরের প্রতিলিপি, যে অনুষ্ঠানের পর পুনেতে দাঙ্গা হয়েছিল।

তিনি বলেন, দাঙ্গার সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানের কোনও সম্পর্ক ছিল কি না সেটাও একটা প্রশ্ন, আর এদিকে আপনি মারাঠিতে লেখা একটা এফআইআর নিয়ে দিল্লিতে একজনকে আটক করতে চলে এলেন, যার সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানের কোনও সম্পর্কই নেই!

অথচ মহারাষ্ট্র পুলিশ শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে অকাট্য সব সাক্ষ্যপ্রমাণও পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পরমবীর সিং সেখানে বলেন, অভিযুক্তদের সবাই যে মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন এবং সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করার পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন সেটার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।

কে কি দায়িত্ব পালন করত এ ধরণে সব প্রমাণ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কে কোন দায়িত্ব কীভাবে পালন করতেন, মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখতেন সে সব প্রমাণ আমরা তাদের বাড়ি থেকে পাওয়া নথিপত্র কিংবা ল্যাপটপ থেকে উদ্ধার করেছি।

এবাং কীভাবে কমরেড প্রকাশ নামে জনৈক মাওবাদী নেতার মাধ্যমে তারা মাওবাদীদের জন্য গ্রেনেড লঞ্চার ও অন্য অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ, হামলা চালানো বা টাকাপয়সা জোগাড় নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন তারও বর্ণনা দেন তিনি।

তবে এ বিষয়ে ভারতে সিপিআই (এম এল) দলের শীর্ষ নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টাই যদি হত তাহলে তো এই কেস ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির হাতে তুলে দেওয়ার কথা। তা না-করে এটা পুনের একটা থানার হাতে ছেড়ে রাখা হয়েছে, আর তার মারাঠিতে লেখা একটা এফআইআর নিয়ে দেশময় ঘুরে বেড়াচ্ছে - এটা কেমন কথা হল?

তিনি বলেন, আসলে আমার ধারণা এখানেও পুরনো সেই গুজরাট প্যাটার্ন ফলো করা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার চেষ্টা হচ্ছিল, এই জিনিস এই নিয়ে আমরা বোধহয় আটবার শুনলাম। চার্জ যতি এতই সিরিয়াস, তাহলে গত তিন মাসে কেন তদন্ত শেষ করা হয়নি - আরও কেন বাড়তি সময় লাগছে? আসলে পুরো ব্যাপারটায় সন্দেহ আরও বাড়ছে, প্লট ইস থিকেনিং।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসেই মহারাষ্ট্রে পাঁচজন লেখক-বুদ্ধিজীবীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এখন চার্জশিট দাখিলের জন্য তারা আরও তিন মাস বাড়তি সময় পেয়েছে।

এ দিকে বিষয়টি নিয়ে দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনীষা শেঠি বলেন, আদালতে প্রমাণ পেশ না-করে সাংবাদিক বৈঠকে জাল চিঠিপত্র হাজির করে মানুষের আদালতে সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা, এটা ভারতীয় পুলিশের পুরনো একটা কায়দা।

বিডি২৪লাইভ/এএইচ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: