লেগুনাহীন সড়কে ফিরবে কি শৃঙ্খলা?

প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:৩০ পিএম

আহমেদ ফেরদাউস খান, স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যস্ত পুলিশ। এর মধ্যে হঠাৎ করেই ঘোষণা দেয় নগরীর রাজপথে লেগুনা নিষিদ্ধ। কিন্তু লেগুনা নিষিদ্ধ করলেই কি সড়কে শান্তি ফিরবে? নাকি লেগুনা বন্ধে বাড়বে যাত্রীদের ভোগান্তি? এ প্রশ্ন সব মহলে। তবে আজ (৫ সেপ্টেম্বর) নগরীর সড়কে লেগুনার অনুপস্থিতে দেখা গেলো যাত্রীদের চরম ভোগান্তি। রাজধানীর অধিকাংশ সড়কেই বন্ধ রয়েছে লেগুনার চলাচল।

বিকল্প ব্যবস্থা না করে লেগুনা বন্ধ করায় ডিএমপির কমিশনারে উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ যাত্রীরা। অনেক যাত্রীই মনে করেন শুধুমাত্র লেগুনা বন্ধ করেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়। আগে লেগুনার বিকল্প করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।

এ নিয়ে বাড্ডার লিংক রোডে কথা হয় যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা অফিসগামী মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে।  তিনি বিডি২৪লাইভকে বলেন, বিকল্প কোন ব্যবস্থা না করে এভাবে লেগুনা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে যাত্রীদের কিছুটা হলেও ভোগান্তি কমাতে এই লেগুনা। কিন্তু হঠাৎই কেন বন্ধ করে দেয়া হলো তা আমার বোধগম্য নয়। অন্তত আমাদের কথা চিন্তা করে হলেও বিকল্প ব্যবস্থা করে বন্ধ করা উচিৎ ছিলো। তিনি আরো বলেন, প্রায় দেড় ঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছি না। অফিসে যেতে দেরি হচ্ছে। 

শুধুমাত্র মাহফুজুর রহমানই নয়, বাড্ডার লিংক রোডে দেখা গেছে অসংখ্য যাত্রী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিন লেগুনা থাকায় অনেকেই লেগুনায় করে অফিসে যেতেন। আজ দৃশ্য ভিন্ন। লেগুনাহীন সড়কে যে গাড়ি চলাচল করছে, তা যাত্রীদের তুলনায় নগণ্য। গাড়িতে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এরমধ্যে রাজধানীর বেশিরভাগ গাড়িই সিটিং। সিটিং গাড়িতে সীমিত যাত্রী চলাচল করতে পারে বলে ভোগান্তি আরো বেশি। এদিন নারী আর শিশুদের ভোগান্তি ছিলো চোখে পড়ার মতো। পুরুষরা পারাপারি করে গাড়িতে উঠতে পারলেও এক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলো নারী যাত্রীরা। 

রাত্রী আকতার নামের এক নারী যাত্রীর বলেন, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু কোন গাড়িতে উঠতে পারিনি। দুএকটা যে গাড়ি আসে সেগুলো মেয়েদের উঠা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কোন মেয়ে যদি উঠেও থাকে তাহলে সে ভাগ্যের চাকায় উঠতে পেরেছে। সরকার আমাদের কথা চিন্তা করেই লেগুনা বন্ধের ঘোষণা দেয়া ঠিক হয়নি বলে তিনি মনে করেন। 

সরেজমিন দেখা যায়, আজ (বুধবার) সকাল থেকে ঢাকার অল্প কিছু রুট ছাড়া বেশিরভাগ রুটেই লেগুনা চলাচল বন্ধ ছিলো। বন্ধ থাকা রুটের লেগুনা স্ট্যান্ডে কোনো লেগুনা দেখা যায়নি। ফলে যাত্রীদের বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা, সাতরাস্তা থেকে বাড্ডা ও মিরপুর থেকে বাড্ডার রুটেগুলো কোনো লেগুলা চলাচল করেনি। উত্তর বাড্ডা বা বাড্ডার লিংক রোডে ইউটার্ন নিয়ে লেগুনাগুলোতে যাত্রী তুলতো। এসকল স্থানে আজ যাত্রীদের ভিড় দেখা গেলেও লেগুনা ছিলো না একটাও। 

এনিয়ে লেগুনা চালক মাইনুদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, গতকাল পুলিশ লেগুনা নিষিদ্ধ করেছে বলে আজ রাস্তায় নামতে সাহস করিনি। এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, লেগুনা বন্ধের সিদ্ধান্ত ভুল। কেননা, অনেক লেগুনার রুট পারমিট বা ফিটনেস সনদ সবই আছে। তাছাড়া লেগুনা না থাকলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে না বাড়বে। তিনি বলেন, অধিকাংশ গাড়ির রুট পারমিট ও অধিকাংশ চালকদের লাইসেন্স নেই। তবে যাদের রুট পারমিট বা লাইসেন্স আছে তাদের চলতে বাঁধা কেন। তিনি আরো বলেন, আমরা মানুষের সেবা করে পেট চালাই। 

আমরা চাই, যেন মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাদের রুট পারমিট দেয়া হয়। জানা যায়, রাজধানীতে প্রায় ২০টি রুটে প্রায় দুই হাজারেরও বেশি লেগুনা চলাচল করে। এর মধ্যে ফার্মগেট থেকে মোহাম্মদপুর, জিগাতলা ও কৃষি মার্কেট এই তিন রুটে ঢাকা ইন্দিরা পরিবহনের প্রায় ১২০টি লেগুনা চলে। গাবতলী-মহাখালী রুটে ৬০টি, মিরপুর-মহাখালী রুটে ৭০, মোহাম্মদপুর থেকে গুলশান হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত ৮০টির মতো লেগুনা চলে। 

এছাড়া নীলক্ষেত থেকে ফার্মগেট, গোড়ান থেকে গুলিস্তান, মিরপুর ১ নম্বর থেকে জিগাতলা, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ, গুলিস্তান থেকে লালবাগসহ আরও কয়েকটি পথে লেগুনা চলাচল করে। এছাড়া সাইনবোর্ড থেকে প্রায় অর্ধশত লেগুনা চলে নিউমার্কেট পর্যন্ত।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিএরটিএ)’র হিসাব মতে, ঢাকা মহানগরীতে অনুমোদিত লেগুনার সংখ্যা ২ হাজার ৫২৫টি। যদিও বাস্তবে সে সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে লেগুনা চলাচলের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে কোনো ধরণের লেগুনা চলবে না। কারণ সড়কে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার কারণ এই লেগুনা। এ ছাড়া নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে এগুলো চলাচলের কোনো রুট পারমিট নেই। ঢাকা মহানগরীর ভেতরে কোনোভাবেই এগুলো চলতে দেয়া হবে না। এসব মহানগরের বাইরের সড়কে চলবে। ডিএমপি কমিশনারের এ ঘোষণার পরপরই রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো থেকে লেগুনার সংখ্যা কমতে থাকে।

বিডি২৪লাইভ/এসএস

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: