‘বাংলাদেশে কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কোনও পূর্বাভাস করব না’

প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ১০:২১ পিএম

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের পছন্দকে সম্মান জানাবে ভারত। নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় যাবে; তাদের সঙ্গেই কাজ করবে দিল্লি। আসামে নাগরিকপঞ্জি নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই।

সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে নয়াদিল্লি সফরে রয়েছে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং, পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোকলে এবং বেসরকারি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেন’ (ওআরএফ) কর্মকর্তাদের পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও আসামে নাগরিকপঞ্জি, তিস্তা ইস্যু, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটসহ দ্বিপক্ষীয় নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে।

ভারতের সাউথ ব্লকে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিং বলেন, ‘চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে সাধারন নির্বাচন হবে বলে জানতে পেরেছি। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ যে ইচ্ছাই প্রকাশ করবে তার প্রতি আমরা সম্মান জানাব। বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী হিসাবে বাংলাদেশের জনগণ যেটাকে ভাল বলে বিবেচনা করবে; আমরাও তাকেই ভাল বলে মনে করব।

ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো খুবই কঠিন। আবার গণতন্ত্রই হলো সবচেয়ে ভাল পথ। বাংলাদেশের জনগণ যেপথ বেছে নেবে সেটাকে আমরা মেনে নেব। বাংলাদেশে কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে আমরা কোনও পূর্বাভাস করব না। নির্বাচনের এখনও কিছুটা সময় আছে। দেখা যাক, পরিস্থিতি কোন পথে অগ্রসর হয়।’

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ভারতের কোনও বার্তা আছে কিনা জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিই আমাদের সমর্থন থাকবে। বাংলাদেশের জনগণই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। নির্বাচনের ইস্যু আমরা বাংলাদেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে চাই।’ এ ব্যাপারে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।

আসাম থেকে নিবন্ধনের বাইরে থাকা বাঙালিদের বিতাড়নের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের হুঙ্কার সম্পর্কে জানতে চাইলে ভি কে সিং বলেন, ‘আসামে নাগরিক নিবন্ধনের বিষয়ে ভারত সরকার কিছু বলেনি। আদালত থেকে একটা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুরো ব্যাপারটাই বিচার বিভাগীয়, রাজনৈতিক কোনও বিষয় নয়। এই ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই’।

ভারতের প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তার ব্যাপারে মমতাদির (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি) এক ধরনের অভিমত আছে। তবে এই ইস্যুর সমাধান খুঁজে বের করা হবে। বর্তমানে তিনি (মমতা ব্যানার্জি) বিরোধী দলীয় ম্যুডে আছেন। তার কিছু পয়েন্ট আছে। তার পয়েন্টগুলোর সুরাহা হোক আগে। তিস্তা ইস্যুর নিস্পত্তিতে অবশ্য কিছুটা সময় লাগবে। আমরা খুবই আশাবাদী’।

সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতার দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এ ব্যাপারে তথ্য বিনিময়সহ সব ধরনের সহযোগিতা রয়েছে।’

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই ইস্যুর চেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিই ভারতের গুরুত্ব বেশি বলে অভিমত দেন। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মতে, ‘বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই বিবেচ্য’। সিনহার বক্তব্য তারা আমলে নেবেন না বলেও জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুর ব্যাপারে জানতে চাইলে ভি কে সিং বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক খুবই ভাল। আমরা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্যে সহায়তা দিয়েছি। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার যে চুক্তি করেছে; তাকে আমি স্বাগত জানাই। এই চুক্তির বাস্তবায়ন আমরা চাই। এই ইস্যুকে দুই দেশ যেভাবে নিস্পত্তি করবে সেটাই আমরা মেনে নেব। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়া উচিত। রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমার থেকে এসেছে সেটাকে মিয়ানমার অস্বীকার করতে পারবে না। তারা দীর্ঘ দিন ধরেই মিয়ানমারে বসবাস করছিলেন। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্যে মিয়ানমারে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেব। আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’

একই স্থানে পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোকলে বাংলাদেশ সাংবাদিক প্রতিনিধি দলকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে প্রতিবেশি হিসাবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় ভারত। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সব পর্যায়ে চমৎকার সহযোগিতা রয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আমাদের দুই দেশের মধ্যে কোনও ইস্যু নেই। নিরাপত্তা ইস্যুতে বর্তমান সরকারের (শেখ হাসিনার সরকার) সঙ্গে সহযোগিতা উন্নত হয়েছে। আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক হলো আদান-প্রদানমূলক যেখানে পারস্পরিক স্বার্থ প্রাধান্য পায়’।

আরেক বৈঠকে ওআরএফের কৌশলগত স্টাডিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হর্ষ ভি পান্থ বলেছেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সমঝোতায় পৌঁছানো। দলগুলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া উচিত। নির্বাচনে অংশ নেয়া হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ’।

ওআরএফের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভারত জোরালোভাবে বিশ্বাস করে যে, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু। বাংলাদেশের জনগণই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে অবশ্যই আগ্রহ আছে। বাংলাদেশে সবারই নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত’।

ভারতের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘ভারত ফ্যাক্টর’ যাতে ব্যবহার করা না হয় সেদিকেই এখন দিল্লির মনযোগ রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান খুবই সতর্ক। আসামের ইস্যু পুরোটাই ভারতের আগামী নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপির ভোটের রাজনীতি বলে তাদের অভিমত।

তারা বলেন, তিস্তা চুক্তি করাতে শেখ হাসিনা যা করা প্রয়োজন তার সবই করেছেন। এই ইস্যু এখন বিজেপি ও পশ্চিমবঙ্গের ইস্যু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের খুব বেশি কিছু করার নেই। সূত্র: যুগান্তর।

বিডি২৪লাইভ/এমআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: