কুশিয়ারার ভাঙ্গনে ঘর ছাড়া শত শত পরিবার

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:১২ পিএম

ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী কেড়ে নিচ্ছে ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ফসলি জমি। যুগের পর যুগ ধরে কুশিয়ারার ভাঙ্গনে চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে শত শত পরিবার। যাদের অনেক কিছুই ছিল তারা আজ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতি বছরই গৃহহীনের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নদী ভাঙন থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগই নেই কর্তৃপক্ষের।

এবার ভাঙনের কবলে পড়েছে ওই এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি বাড়ি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক দিকে কুশিয়ারার করাল গ্রাস অপর দিকে ভাঙন। এ দুয়ে মিলে এলাকাবাসী কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেই নতুন করে ভাঙনের সৃষ্টি হয় কুশিয়ারার পাড়ে। ফলে বিলীন হয়ে যায় নতুন নতুন বাড়ী ও স্থাপনা।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের কবলে পড়েছে সাবেক সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ফুফুর বাড়ি ও দীঘলবাক গ্রামের প্রায় ৩ শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাড়ি। নদী ভাঙন যেন গরীব ও ধনীকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আপদে বিপদে ধনীরা গরীবদের সাহায্য করে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কে কার সাহায্য করে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে দীঘলবাক এলাকার বসতবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার উপাসনালয় ইত্যাদি বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা রোধ কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

&dquote;&dquote;

নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতীকরূপে বিরাজমান। তীরবর্তী এলাকাগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা হ্রাস, ঘরবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তা-বলীলায় ফসলহানি, নদীতে চর জাগা, নৌযান চলাচল বিপর্যস্ত, মৎস্য সম্পদের অভাব, কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবন যাত্রার নিরুমান সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে।

কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় ক্ষতিগ্রস্থ ও গৃহহীন হয়েছেন বারবার উত্তর নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা, গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুল্লা, মথুরাপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ, বানিয়াচং উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী। কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে এলাকাবাসী।

নদী ভাঙ্গনের ব্যাপারে প্রবাসী আবুল কালাম আজাদ ছোটন বলেন, নদী ভাঙনের ফলে বেকারত্ব, অশিক্ষা, দরিদ্রতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

&dquote;&dquote;

তিনি আরো বলেন, স্থানীয়রা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে বারবার আবেদন করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। অচিরেই নদী ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা না নিলে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক গ্রাম তথা ইউনিয়ন এক সময় বিলিন হয়ে যাওয়ার আশংকায় আছেন।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দীঘলবাক বাজার, হাই স্কুলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একাধিকবার নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নদী ভাঙনে অনেকের বাড়ী-ঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় হিসেবে জীবন যাপন করে আসছে। এক দিকে নদী ভাঙন অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টির কারনে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মানুষের অকাল বন্যার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। এটা যেন তাদের জীবনে আষ্ঠেপৃষ্টে বাধাঁ। এলাকাবাসী করাল কুশিয়ারা নদী ভাঙন থেকে মুক্তি চায়। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ-বিন-হাসান বলেন, কুশিয়ারা নদীর ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: