ডাইনিংয়ে খাবারের দাম বেড়েছে, মান বাড়েনি

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৫:৪৬ পিএম

মানুষ গড়ার কারখানা হল স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়। যেখান থেকে সৃষ্টি হয় দেশের সকল কর্ণধাররা। যারা নিজেকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলেন দেশের জন্য, জাতির জন্য। সেই জাতির কর্নধার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি খায় তা দেখলে হতবাক হবেন সবাই। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবসিক হলের ডাইনিং গুলোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে খাবারের মান।

হলের ডাইনিং গুলোতে নিন্মমানের খাবার রান্না ও পরিবেশন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক বেলা রান্না করা তরকারি ফ্রিজে রেখে পরের বেলা খাওয়ানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

ডাল, তরকারি ও ভাতের মধ্যে মাছি, পোকা ও চুল পাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি ডাইনিং ম্যানেজারদের বিরুদ্ধে বাজার থেকে কম মূল্যে নিন্মমানের বাসি ও পচা সবজি ক্রয়ের অভিযোগও রয়েছে। এমন নিন্মমানের খাবার খেয়েই দিনাতিপাত করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবসিক শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ডায়নিং ম্যানেজার বাজার থেকে কম মূল্যে নিন্মমানের তরকারি, মাছ ও মাংস সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে সেগুলো ফ্রিজে রেখে শিক্ষার্থীদের খাওয়ানো হয়। মাঝে মাঝে এ বেলার তরকারি, ডাল গরম করে অন্য বেলায় দেওয়া হয়। প্রায়ই ডাল, তরকারি ও ভাতের মধ্যে মাছি, পোকা ও পাথর পাওয়া যায়। এছাড়াও রান্না করার স্থান ও খাবার পরিবেশনের জায়গা সবসময় অপরিষ্কার ও নোংরা থাকে। ডায়নিং এর কর্মচারীরাও নোংরা হাতে খাবার পরিবেশন করে বলে অভিযোগ তাদের। হলের ডাইনিং গুলোতে খোঁজ নিয়ে এ সমস্ত অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

এ বিষয়ে কনজুমার ইয়থ বাংলাদেশ ইবি শাখার সভাপতি ইমরান শুভ্র জানান, ‘পচা-বাসি খাবারের অভিযোগ প্রায়ই আসে। গত ঈদের আগে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল খাবারের মধ্যে তেলাপোকার পা, কেল্লা পাওয়া গেছে। পরে আমরা স্যারের কাছে অভিযোগ করলে খাবারের মান কিছুটা ভাল হয়।’

এ দিকে খাবরের মান নিয়ে বার বার ডাইনিং ম্যানেজারদের কাছে অভিযোগ করা সত্বেও শিক্ষার্থীদের কথা তোয়াক্কাই করছেন না তারা। ডাইনিয়ংয়ের খাবরের বিষয়ে উদাসীন হল প্রশাসানও। খাবরের মান পর্যবেক্ষণের জন্য রোটিন করে হলের ডাইনিংয়ে রেড দেয়ার কথা থাকলেও হল প্রশাসন তা করেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। যে কারণে খাবারের মান বৃদ্ধিতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই ডাইনিং ম্যানেজারদের।

ডাইনিং ম্যানেজারদের দাবি অনুযায়ী বাজার দর বিবেচনা করে এক বেলা খাবারের মূল্য ২০ টাকা থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল। কিন্তু এতেও খাবারের মান বৃদ্ধি পায়নি। বরং শুরু হয়েছে ২৫, ৩০, ৩৫ ও ৫০ টাকার নতুন ব্যবসা। এই দরে পাওয়া যায় বেশ ভাল মানের মাছ ও মাংস। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে একটু ভাল খাওয়ার আশায় এই চড়া মূল্যের খাবার গ্রহণ করে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সকলেই যেন বেশি মূল্যের খাবার গ্রহণ করে তাই ২২ টাকার খাবার ইচ্ছে করেই খারাপ করে ডাইনিং কর্মচারীরা। ২২ টাকার টোকেনে বেগুন, পুঁইশাক, লাউ অথবা আলুর সঙ্গে থাকে এক টুকরো মাছ, এক টুকরো ব্রয়লারের মাংস অথবা ডিম। হল গুলোতে প্রতিদিন এক বেলা গড়ে প্রায় তিন’শ জন শিক্ষার্থী ডাইনিংয়ে খাবার খায়ে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন বলেন, ‘ডাইনিংয়ের খাবারে পুষ্টিতো নেই বরং অপুষ্ঠিতে ভরপুর। ডাল, তরকারি ও ভাতের মধ্যে মাছি, পোকা ও চুল পাওয়া নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে রান্না ও পরিবেশনের ফলে এসব খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। ২৫/৩০ টাকার খাবারটা একটু খাওয়া গেলেও তাতে তেল ও মসলা অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এক ডাক্তার জানান, ‘আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে তার মধ্যে প্রায়শ ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত শিক্ষার্থী থাকে। স্বাস্থ্য সম্মত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি আবাসিক হলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত তিনবেলা হলের ডায়নিং থেকে খাবার গ্রহণ করে। বর্তমানে ক্যাম্পাস সকাল ৯ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত হওয়ায় অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও সারা দিন ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। তাই প্রায় সকলেই (আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থী) দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন হলের ডায়নিং এ। ক্যাম্পাসের ক্যাফেটরিয়া, ক্যান্টিন ও অন্যান্য খাবার হোটেলে সর্বনিন্ম ৩৫ টাকায় এক বেলা খাবার পাওয়া যায়। তাই সকলে নিরুপায় হয়ে হলের নিন্মমানের খাবার খায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৯ হাজার টাকা, সাদ্দাম হোসেন হলে প্রায় ৩৯ হাজার, শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ৩২ হাজার, লালন শাহ হলে ৩২ হাজার, দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ১০ হাজার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ১২ হাজার ও খালেদা জিয়া হলে ১৬ হাজার টাকা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দেওয়া হয়। হল প্রশাসনের দেয়া এ ভর্তুকি যৎসামান্য বলে দাবি ডায়নিং ম্যানেজারদের।

&dquote;&dquote;

এ বিষয়ে সাদ্দাম হোসেন হল ডাইনিং ম্যানেজার আবেদ বলেন, ‘ভর্তুকির টাকা পুরোটা পাই না। প্রতি মাসে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে আমার ঘাটতি থাকে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভোস্ট কাউন্সিল সভাপতি ও সাদ্দাম হোসেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। যাদের সমস্যা আছে তারা আমাদের কাছে নামসহ অভিযোগ করুক। আর শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, ‘হলের ভর্তুকি ম্যানেজারদের সময় মত দেওয়া হয়। আমরা হল প্রভোস্টদের সঙ্গে বসে বিষয়টি যাচাই-বাচাই করে খাবারের মান উন্নতির জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: