খাদ্য সংকটে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছেন পশু মালিকরা

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ১০:১৬ পিএম

বেশ কয়েকমাস যাবত পাবনার চাটমোহর উপজেলায় গবাদী পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে এ সংকট আরও তীব্র হয়েছে। একদিকে খড়ের মূল্য বৃদ্ধি অন্য দিকে চাষকৃত উন্নত জাতের ঘাস ক্ষেত্রগুলো পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় গরু মহিষ ছাগল ভেড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পশু মালিকেরা। গরু মহিষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিকল্প হিসেবে পশু মালিকেরা পানিতে ভাসমান কচুরি পানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি গরু-মহিষকে এখন কচুরিপানা খাওয়াচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে চাটমোহরের নিমাইচড়া হান্ডিয়াল ও ছাইকোলা ইউনিয়নের বিল গুলোতে বর্ষার পানি প্রবেশ করে। বছরের অন্য সময় গুলোতে দিনের বেলা গরু মহিষকে মাঠে নিয়ে পতিত গোচারণ ভূমিতে খাওয়ানো সম্ভব হলেও বর্ষা ও শরতের প্রায় চার মাস মাঠে পানি থাকায় গরু মহিষকে মাঠে নিয়ে খাওয়ানো সম্ভব হয় না।

এ সময় পুরোপুরি খড়, খইল, ভুসিসহ অন্যান্য দানাদার খাবারের উপর নির্ভর করতে হয় পশু মালিকদের। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে কৃষক বোরো ধান কাটলে বোরো ধানের কিছু খড় পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ভাটি এলাকায় খড়ের দাম আরো বেশি হওয়ায় সেসব এলাকার খড় ব্যবসায়ীরা চলনবিল এলাকায় এসে চড়া দামে বোরো ধানের খড় কিনে নিয়ে যান।

কুষ্টিয়া যশোর ঝিনাইদহসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উঁচু অঞ্চল থেকে খড় ব্যবসায়ীরা কিছু খড় কিনে অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়া দিয়ে চাটমোহর এলাকায় এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। বর্তমান এ এলাকায় প্রতি মন খড় প্রায় ৭’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু পশু মালিকের মাঠাল জমি না থাকায় সারা বছর চড়া দামে পশুখাদ্য কিনে খাওয়াতে হিম শিম খেতে হচ্ছে। এমন অনেক পশু মালিক ছেড়ে দিচ্ছেন পশু পালন।

সম্প্রতি উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের ধরমগাছা গ্রামের রেজা জানান, চারটি গরুর মধ্যে দুটি গাভি দশ লিটার দুধ দেয়। খড়, খইল ভূসিসহ গোখাদ্য বাবদ তাকে প্রতিদিন প্রায় ৬’শ টাকা ব্যয় করতে হয়। গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গবাদি পশু পালন করে লাভবান হতে পারছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে গরুর খাদ্য ব্যয় কমাতে প্রতিদিন কচুরি পানা কেটে খাওয়াচ্ছেন।

চাটমোহর হান্ডিয়াল সড়কের পার্শবর্তী খালে কচুরিপানা কাটারত অবস্থায় ধরমগাছা গ্রামের সপ্তম শ্রেণির স্কুল ছাত্র রিপন ও সজীব জানান, গরুকে কচুরিপানা খাওয়ালে অন্য খাদ্য অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজন হয়। তাই পরিবারকে সহায়তা করার জন্য স্কুলে যাওয়ার আগে বা পরে এবং ছুটির দিনে কচুরিপানা কাটেন তারা। তাদের মত চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন বিভিন্ন জলাশয় থেকে কচুরিপানা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা ভেটেরেনারী সার্জন ডাঃ মোঃ রোকনুজ্জামান বলেন, কচুরিপানা গবাদি পশুর আদর্শ খাবার নয়। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটের কারণে অনেকে কচুরিপানা খাওয়ান। কিন্তু এতে পানির পরিমান বেশি থাকে। গবাদি পশুকে মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানা খাওয়ালে পাতলা পায়খানা বা বদ হজম হতে পারে।

বিডি২৪লাইভ/এইচকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: